ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ট্রাকচাপায় দুই নেতার মৃত্যু: তদন্ত ও বিচার দাবি গণসংহতির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
ট্রাকচাপায় দুই নেতার মৃত্যু: তদন্ত ও বিচার দাবি গণসংহতির

ঢাকা: ট্রাকচাপায় গণসংহতি আন্দোলনের নেতা আরিফুল ইসলাম ও সৌভিক করিমের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১১ নভেম্বর) গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় পরিষদের সদস্য বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সহসাধারণ সম্পাদক সৌভিক করিমের অকাল মৃত্যুতে আমরা স্তব্ধ, ব্যথিত, গভীরভাবে শোকাহত। একই সাথে তাদের মৃত্যুর ধরন আমাদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করেছে।

গত ৭ নভেম্বর আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টায় কাজ শেষে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মৃত্যুবরণ করেন আরিফ ও সৌভিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে ট্রাকটি যদি ধাক্কা দেবার পরেই থেমে যেত তাহলে বাঁচানো যেত দুটি তরতাজা প্রাণ। কিন্তু তা না করে ট্রাকটি দ্রুত চালিয়ে তাদের পিষে মেরে ফেলা হয়। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩০-৩৫ মিনিট তারা রাস্তাতেই পড়েছিল। পুলিশ বাদী হয়ে এ বিষয়ে মামলা করলেও এখনো পর্যন্ত ট্রাকটিকে শনাক্ত করা গেছে কিনা কিংবা দায়ী চালককে আটক করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। আমরা অবিলম্বে দায়ী চালককে গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানাই।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিয়মিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, অথচ এ নিয়ে কারো কোনো বিকার নেই। প্রতিদিন এই দেশের কোনো না কোনো জায়গায় একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ কিংবা জীবনের তরে পঙ্গু করে দিচ্ছে অনেককে। দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের স্বজনকে জীবনভর সেই বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এ বছর জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও ৯৩৪ জন। গবেষণা বলছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়ক ও সেতুর নাজুক অবস্থা, অধিক মুনাফার লোভে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ও চালকদের অতিরিক্ত কাজ করানোর ফল হলো এই বিপুল পরিমাণে সড়ক দুর্ঘটনা।

এছাড়াও সড়কপথে দুর্ঘটনার বড় কারণ অতিরিক্ত গতি, ওভারলোড ও বিপদজনক ওভারটেক। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও দুর্ঘটনা বিষয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী আইন থাকা দরকার। দরকার তার যথাযথ বাস্তবায়ন। সড়ক মহাসড়কে গতিসীমা নির্দিষ্ট করা, চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দরকার, লেন ব্যবস্থা চালু করা, গাড়ির ফিটনেস যথাযথভাবে পরীক্ষা করা ইত্যাদি দুর্ঘটনা কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে পথে না গিয়ে কোটারি স্বার্থে সহায়ক সড়ক আইন করে, আরো দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিতান্ত অবহেলায় মানুষের জীবনকে বিপন্ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিনই সড়কে মৃত্যুর মিছিলে সামিল হচ্ছে নতুন নতুন প্রাণ। এদেশের নিরাপদ সড়কের জন্য তরুণদের এক বিরাট আন্দোলনের পরেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরো খারাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার নির্বিকার।

গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আরিফ ও সৌভিকের এই মৃত্যু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা তা আমরা নিশ্চিত নই, কিন্তু এগুলো যে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড সেটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। আমরা আরিফ-সৌভিকসহ সড়কে মৃত্যুর প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আরিফুল ইসলাম ও সৌভিক করিমের মৃত্যু আমাদের সংগঠন, তাদের অগণিত বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের কাছে এক অসহনীয় বেদনা ও অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু কেবল আমাদের কাছেই নয় বাংলাদেশের জনগণ ও বাংলাদেশের জন্যও এটা একটা বড় ক্ষতি। আরিফুল ইসলাম ও সৌভিক করিম সমাজের সকলের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করতেন এবং সে কাজে নিবেদিত ছিলেন।

আরিফুল ইসলাম ছিলেন ছাত্র রাজনীতি এক উজ্জ্বল নাম। তিনি গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সকল চেষ্টা তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই করেছেন। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে তিনি গণসংহতি আন্দোলনে যুক্ত হন এবং দেশের গণমানুষের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এর পাশাপাশি তিনি মননশীলতার চর্চায় ভূমিকা রাখতে প্রকৃতি পরিচয় প্রকাশনা এবং ইউপিএলে যুক্ত হয়ে জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে তার ভূমিকা রেখেছেন।

সৌভিক করিম ছাত্র জীবন শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন, পাশাপাশি তার সঙ্গীত চর্চা ও লেখালেখি অব্যাহত রাখেন। তরুণ বয়সেই তিনি এদেশের সংগীত চর্চায় তার উজ্জ্বল অবদান রেখে গেছেন। তার রচিত গান বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা ৫০টি গানের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে। আরিফ ও সৌভিক দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন এবং কৃতিত্বের সাথে স্মাতক ও স্মনতকত্তোর শেষ করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলেন, এরকম মেধাবী, প্রাণবান, সংবেদনশীল মানবিক গুণসম্পন্ন দুইজন তাজা প্রাণকে আমরা হারালাম অকালে। তাদের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। কিন্তু তাদের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী আমরা অবিলম্বে তাদের খুঁজে বের করা ও গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাই। সড়কে যে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে, অবিলম্বে তার অবসানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।

জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু, তাসলিমা আখতার, মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্পাদ সেলিমুজ্জামান, যুব ফেডারেশনের আহ্বায়ক উৎসব মোসাদ্দেক, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।