ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে তাই বিএনপি জিয়া হত্যার বিচার করেনি: তথ্যমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে তাই বিএনপি জিয়া হত্যার বিচার করেনি: তথ্যমন্ত্রী কথা বলছেন ড. হাছান মাহমুদ।

ঢাকা: জিয়াউর রহমানকে তার লোকেরা হত্যা করেছেন মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া সোয়া দুই দফায় ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু জিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিচার করেননি। কারণ কী? কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে, সেজন্য জিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিচার করেননি।

বেগম খালেদা ও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে আজকের বিএনপিও সেই হত্যার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।

রোববার (২৭ আগস্ট) গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
 
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে আইভী রহমান পরিষদ।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পত্র-পত্রিকায় লিখছে, তারা কী আদৌ চিকিৎসা নিতে গেলেন, নাকি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করতে একসঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন। এটি অনেকের প্রশ্ন।

বিএনপির ঘরের মধ্যে এখন অন্তর্জ্বালা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, চট্টগ্রামে ছাত্রদল বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কখন যে নয়াপল্টনের অফিসে যুবদল তালা লাগিয়ে দেয়, সেটি দেখার বিষয়। তাদের (বিএনপি) ঘরের মধ্যে এখন অন্তর্জ্বালা শুরু হয়েছে। নাহলে ছাত্রদল বিএনপি অফিসে তালা লাগানোর কথা না। এই অন্তর্জ্বালা শুরু হওয়ার কারণ হচ্ছে, বিদেশিদের কাছে বার বার ধর্না দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। বিদেশিরা তাদের দাবি-দাওয়া, তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার এগুলোর প্রতি কোনো সমর্থন জানায়নি। বিদেশিরা শুধু একটি সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায় বাংলাদেশে। আমরাও (আওয়ামী লীগ) একটি সুন্দর নির্বাচন করতে চাই।

বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার অধিকার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা যদি কেউ করে, তাহলে দেশের মানুষ কঠোর হস্তে সেটি প্রতিহত করবে। এটি ২০১৪ সাল নয়। এটি ২০২৩ সাল। এখন ২০১৩-১৪ সালের পুনরাবৃত্তি করবেন, সেটি এই দেশের মানুষ করতে দেবে না।

তিনি বলেন, দেশ থেকে যদি অপরাজনীতি, মানুষ হত্যার রাজনীতি, জিঘাংসার রাজনীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করতে হয়, তাহলে যারা প্রতিহিংসা ও অপরাজনীতি করে, তাদের রাজনৈতিক দৃশ্যপঠ থেকে বিদায় করা দরকার। নাহলে এই অপরাজনীতি বন্ধ হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে পরিচালনা করা হয়েছিল। এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে তারেক রহমান। তার পরিকল্পনায় হাওয়া ভবনে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সেগুলো ২১ আগস্টের মামলার প্রসেডিংয়ে আছে। কখন, কোথায় বৈঠক হয়? হাওয়া ভবনে কয়বার বৈঠক হয়। আমি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষী।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যে গ্রেনেডগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলো সন্ত্রাসীদের কাছে থাকার কথা নয়। এগুলো সেনাবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত গ্রেনেড। এগুলো হামলাকারীদের কাছে কীভাবে গেল? রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ছাড়া এগুলো তাদের হাতে যাওয়ার উপায় নেই।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরও যুক্ত করা হয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হবে, সেজন্য ফারুক রশিদ তখন ঢাকায় এসেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরও এই হামলায় যুক্ত করা হয়েছিল। যেই শুনেছে, শেখ হাসিনা মৃত্যুবরণ করেননি, তারপর তারা চলে গেছেন। এ হামলার পর হাওয়া ভবনের প্রথম প্রশ্ন ছিল, শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন? যখন শুনেছে উনি (শেখ হাসিনা) বেঁচে আছেন, তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা।

তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মোস্তাক এবং জিয়া। আর ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারেক জিয়া। তারা আসলে হত্যার রাজনীতিটাই করে। হত্যার রাজনীতির মাধ্যমেই জিয়াউর রহমানের উত্থান এবং ক্ষমতায় টিকে থাকাটাও হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে অব্যাহত রেখেছে। তার বিরুদ্ধে যখনই সেনাবাহিনীতে ক্যু এর প্রচেষ্টা হয়েছে, তখনই নির্বিচারে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছিল। এভাবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার চেষ্টা করেছিল, করতে পারেনি। তার লোকেরাই তাকে হত্যা করেছে।  

আইভী রহমানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আইভী রহমান একজন কর্মীবৎসল নেত্রী ছিলেন। তিনি কর্মীদের সঙ্গে উঠতেন, চলতেন, বসতেন, এমন কোনো মিটিং নেই, যেখানে তিনি থাকতেন না। তিনি শৌখিন ছিলেন। যত্নসহকারে স্বামীর খোঁজ-খবর রাখতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও আইভী রহমান পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।  

এছাড়া আইভী রহমান পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান খোকার সঞ্চালনায় ও সদস্য মুহাম্মদ রোকন উদ্দিন পাঠানের সহযোগিতায় সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী ডেইজি সারোয়ার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
এসসি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।