ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি

তপন চক্রবর্তী, ডেপুটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২২
আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি ...

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন,‘…গুলি চালালে আর ভালো হবে না। সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না।

বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না’। এই ভাষণ একটা পরাধীন জাতির জন্য স্বাধীনতার দৃপ্ত শপথে উজ্জীবিত হওয়ার বীজমন্ত্র। এই ভাষণেই বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় মনোভাব উন্মোচিত হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সংহত স্বরূপে।

বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম এক ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তা সত্যে পরিণত হয়েছে। অর্ধশত বছর পর ২০২২ সালে এসেও সেই সত্যই প্রতিভাত হচ্ছে।  আহমদ ছফা লিখেছিলেন, ‘বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য চর্যাপদ নয়, বৈষ্ণব গীতিকা নয়, সোনার তরী কিংবা গীতাঞ্জলি কোনোটা নয়, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতি হলো “আর দাবায়া রাখতে পারবা না”। ’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। কেড়ে নিয়েছে তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে। কেড়ে নিয়েছে সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলকে। কেড়ে নিয়েছে মুজিব বাহিনীর প্রধান সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে। কেড়ে নিয়েছে জাতীয় চার নেতা এবং মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকেও হারাতে হয়েছে। এর আগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিতে হয়েছে ৩০ লাখ শহীদকে, ৫ লাখেরও বেশি মা-বোনকে হারাতে হয়েছে জীবন ও সম্ভ্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য অন্তত ২০ বার গুলি বোমা গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তাঁর আদর্শ এবং লক্ষ্য থেকে একটুও বিচ্যুত হননি।
 
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে নির্বাসনে পাঠানো- জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাঙালি জাতির পিতা এবং সংবিধান থেকে নির্বাসিত বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা আবার ফিরে এসেছে। যারা পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে বিতাড়িত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সবকিছু আবার পুনপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকদের গণহত্যার সহযোগী জামায়াতকে আবার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল, যারা গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল, তারাই এখন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।  

বাংলাদেশ আবার জাতির পিতার নির্দেশিত মুক্তিযুদ্ধের ধারায় হাঁটছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য রফতানি হচ্ছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।  আমাদের পাটশিল্প বিশ্বে সমাদৃত। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট।  বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ঠেকানো যায়নি। খুলে যাবে রেলপথও। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টানেল থেকে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকার মেট্রোরেল থেকে বিভিন্ন শহরে ফ্লাইওভার, ফুটওভারব্রিজ, শিল্প এলাকা প্রতিষ্ঠা-সর্বত্র চলছে কর্মযজ্ঞ।  

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমানে হাই–টেক পার্কের সংখ্যা ৩৯টি। সরকারের বিভিন্ন নীতি–সহায়তার ফলে দেশি-বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন করছে।  প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদকেন্দ্রিক কার্যক্রম চালু হলেও বর্তমানে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, গার্মেন্টসকর্মী এবং প্রবাসী নাগরিকদের জন্য আলাদা ডিজিটাল সেন্টার চালু হয়েছে। সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০–এর অধিক ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা মানুষ গ্রহণ করতে পারছেন। দেশে এখন মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১৩ কোটি। ৫২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটের জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত রয়েছে ৯৫ লাখেরও অধিক বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট এবং ৬৮৫টির বেশি ই-সেবা সহজেই মানুষ অনলাইনে পাচ্ছেন। ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০ কোটির অধিক এবং জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩–এর মাধ্যমে ৭ কোটির বেশি সেবা দেওয়া হয়। ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও মাইগভ থেকে প্রতি মাসে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭৫ লাখ।

বর্তমানে আইসিটি খাতে রফতানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।  

করোনা মহামারিতে যখন পৃথিবী অস্থির, তখন সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ। করোনাকালে ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক, আদালতের কার্যক্রম, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রমসহ প্রায় সবকিছুই চলমান রাখা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় করোনা সচেতনতা, বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ধরনের সেবা দেশের কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের যে ভিত্তি তৈরি করে গেছেন, সে পথ ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২২ 
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।