ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জঘন্য পাপুল শত অবন্তিকার নির্লজ্জ পি কে হালদারের লীলাখেলা দেখি আমরা

পীর হাবিবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
জঘন্য পাপুল শত অবন্তিকার নির্লজ্জ পি কে হালদারের লীলাখেলা দেখি আমরা ...

পি কে হালদার বা প্রশান্ত কুমার হালদার নামের নির্লজ্জ ডাকাত এক নয়, দুই নয় অনেক। এদের মধ্যে পি কে হালদার তাদের মডেল হয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের বিস্ময়কর রোল মডেলে যাওয়া দেশের অর্থনৈতিক খাতের লুটপাটের খলনায়ক থেকে রীতিমতো বিনোদন চরিত্রে পরিণত।

পি কে হালদার দেশে আসতে চান, সব তথ্য ফাঁস করতে চান এমন খবর চাউর হলেও তার আর আসা হয়নি। তার লুটপাটের সঙ্গীসাথী মোড়লরা তাকে হুমকিতে নাকি প্রলোভনে আটকে দিলেন তাও আর জানা যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের নিচের স্তরের কর্তারা পুঁটি মাছ ধরেন। বড় রুই-কাতলা ধরা পড়লেও প্রভাবশালীদের প্রতাপে খালাস হয়ে আসেন। কেউ কালো টাকা সাদা করেন, কেউ হাই টেক্স পেয়ার হয়ে যান আইনজীবীর তালিকায় একটি আলোচিত মামলা নেই। নেই আদালতপাড়ার ব্যস্ততা মামলায়। তাতে কী দলবাজি-ক্ষমতাবাজি দুর্নীতি-তদবিরবাজির সুবাদে ১২ বছরে রাজনীতির নাবালকরা কত অঢেল সম্পদ অর্থের মালিক। মানুষ তাদের দম্ভের বেহায়াপনা দেখে বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনার দর্শন দেখে না।  

মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা সব খবর রাখলেও অনেক জায়গায় কঠোর হতে পারেন না। তাই বলে বলতে দ্বিধা করেননি, একেকজনের অবস্থা ‘মুই কী হনুরে’। মসজিদে যাবে সেখানেও তাদের জায়গা সামনে রাখতে হবে। অস্ত্রধারী দেহরক্ষী ছাড়া চলতে পারেন না। আমরা এক আজব অসহনীয় লীলাখেলা রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অবলোকন করি। এমন নির্লজ্জ বেহায়া কালো চরিত্রের পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাতে দুদক কঠোর অবস্থানে গেছে। অবন্তিকাসহ অনেকে জালে। ৭০-৮০ জনের অ্যাকাউন্ট জব্দ। শেষ কী হবে জানি না। হাইকোর্টও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থ কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়েছে।  

২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন বিভাগের কর্মকর্তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লুটপাট, অর্থ পাচারের বিষয়টি উদঘাটনে ব্যর্থ হলেন? হাইকোর্ট বলেছে, তা আমাদের জানতে হবে। এটা জনগণেরও দাবি। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। রক্ষা বা আড়াল নয়। তাকে ধরে এনে তার সঙ্গী ও মোড়লদের মুখটা দেখতে হবে। প্রায় ৬ লাখ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার। সীমাতো আছে। ব্যাংক ডাকাতি আর অর্থ পাচারকারীরা দেশে দেশে ভোগের নিরাপদ জীবনের সুযোগ পেল কী করে? এমপি মূর্খ মানব পাচারকারী ধূর্ত শেয়াল পাপুল মেধা যোগ্যতা রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় নয়, একদম অবৈধ বাণিজ্যের রমরমা টাকায় সংসদে চলে আসেন। অর্থের কাছে লোভ-লালসায় আক্রান্ত সরকারি দলের ক্ষমতাবান দু-একজন এবং তৃণমূল বিক্রি হয়ে এ নোংরা আয়োজন করে রাজনীতি ও সংসদকেই কলুষিত করেননি, সমাজকে নির্বাক করেন।  

নিজে এমপি হয়ে খায়েশ পূরণ হয়নি কাজীর বিচার বলে কথা। কুয়েতের আয়ার কাজে দক্ষ স্ত্রীকেও কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল সংরক্ষিত আসনে স্বতন্ত্র সদস্যদের কোটায় এমপি বানান। তার স্ত্রীর নাম সেলিনা ইসলাম। মহাজোটের প্রার্থী জাপার নোমান লক্ষ্মণ সেনের মতোন সরে দাঁড়ান আপস দফা রক্ষায়। দুটি এমপি কিনতে পাপুলের ২২ কোটি টাকা খরচ হয়। তাকে নিয়ে এমন বিতর্কের পর গণমাধ্যমে ঝড় ওঠে। নির্বাচনে মহাজোটকে সমর্থন দিতে বলা হলে সেটিও হয়। কিন্তু সরকার বা দল দুদক কোনো তদন্তেই গেল না। দেশের কত মানুষ পাচার করে দেশের ভাবমূর্তি শেষ করল। সংসদকে কলঙ্কিত করল। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ হলো। তবু তাকে রুখে দেওয়া হলো না। তাকে মদদ দেওয়া সহযোগিতা করা প্রতাপশালী অপরাধীরা ঊর্ধ্বে থাকল।  

দেশের একজন এমপির বিদেশে কারাদন্ড ও বিচারের এমন শাস্তি নজিরবিহীন। পৃথিবীর কোনো দেশের এমপির ভাগ্যে ঘটেছে কিনা জানি না। আমাদের পাপের ফল আমরা ভোগ করছি। দেশের সৃজনশীল দেশপ্রেমিক বৃহৎ শিল্পপতি থেকে ছোট বড় ব্যবসায়ী-শ্রমিক অর্থনীতির শক্তি কৃষকরা সোনা ফলায়, প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায়। শেখ হাসিনা ১৮ ঘণ্টা এ বয়সে পরিশ্রম করে করোনা যুদ্ধেও দেশকে উচ্চ আসনে রাখেন। ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেন অথচ এসব অসৎ বেহায়ার লীলা দেখলে কেবল বমি আসে, কেবল বমি আসে।  

করোনার টিকাও এসে গেছে। এ নিয়ে নোংরা রাজনীতির সুযোগ নেই। জনগণকে নিতে দিন। জনগণ শান্তিতে থাকলেও হরতাল অবরোধ সহিংসতা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদমুক্ত পরিবেশে বাস করলেও এসব লুটপাটের বিভীষিকাময় চিত্রে কতটা ব্যথিত যেন কেউ বুঝতে পারে না। পাপুল সংস্কৃতি এমন যে তার মেয়ে বয়স না হলেও টাকায় সব হয় এমনকি শিখেছে বলে মেঘনার পানি শুকিয়ে যাবে বাবার টাকা শেষ হবে না। জাতে উঠতে এক এমপির মেয়ের বিয়েতে রোলেক্স এডি উপহার দেয়। সমাজ কিনতে গিয়ে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট মানুষেরা অবৈধ টাকায় শেষ করে দিচ্ছে। কয়েকজনের দাপটে লুটে এত উন্নয়ন ধূসর হয়ে যায়। সুখ অসুখে পরিণত হয়। এ অপরাধীদের ধরতেই হবে। আইনের সংশোধন করেও কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।

কুয়েতে কারাবন্দী পাপুলকে তার অমার্জনীয় মানব পাচারের অভিযোগে আদালত চার বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। সঙ্গে ৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা। পাপুল লজ্জাহীন হবে। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা তো হতে পারি না। সেখানে প্রভাবশালী তার সঙ্গীরাও দন্ডিত হয়েছে। এখানে তাকে ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আইনে সুযোগ না থাকলে আইন করেন। আমাদের আইনমন্ত্রী তো এসব বিষয়ে বিজ্ঞ। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ একজন পবিত্র সৎ মন্ত্রী ও আদর্শিক মানুষ। তাদের পরামর্শও নেওয়া যায়।  

পি কে হালদারের চমকপ্রদ আলোড়িত শত প্রেমের খবরে সেকালের আজিজ মোহাম্মদ ভাই যিনি পলাতক নির্বাসিত তিনিও হার মেনেছেন। পি কে হালদারের নাকি প্রেমিকাই শতের কোটায়। ১০ জনের নাম এসেছে যাদের অ্যাকাউন্টে তিনি কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন। লিজিং ফার্মে রাখা মানুষের টাকা। মানুষ নিঃস্ব করা টাকায় তার বিকৃত জীবনের চিত্র। এক প্রেমিকা অবন্তিকা কারাগারে। বাহ কী সুন্দর নাম। হতে পারত উপন্যাসের নায়িকা। প্রেমিকাও নয়। অর্থ ও ভোগবিলাসের লোভে হয়েছে রক্ষিতা। পাপিয়াদেরই উন্নত গোপন সংস্করণ। ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট, অঢেল টাকা।  

প্রেম এক পবিত্র স্বর্গীয় অনুভূতি। দুই নর-নারীর সরল মনের আবেগ অনুভূতিতে আত্মার পরিশুদ্ধি লাভের এক গভীর সম্পর্ক। পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্মান। এখানে কত বীর পুরুষ এক স্ত্রী বা তরুণ বা এক প্রেমিকা নিয়ে হিমশিম খায়। সেখানে পি কে ১০০ বান্ধবীর নাম মনে রাখেন কীভাবে? ম্যানেজ করেন কীভাবে? মানুষের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া এমন বিকৃত লুটেরা পুরুষ, পুরুষদেরও ইজ্জত রাখল না। আর তার সঙ্গে যাওয়া লোভলালসায় পতিত জৈবিক চাহিদা পূরণে এমন এমন নারীরাও প্রেমহীন ভোগের অন্ধকারে ডুবেছে। এখন এসব নারী আফজাল হোসেনের মতো নায়কের অভিনয় দেখে প্রেমে পড়ে না। কবি লেখক তো নয়ই। অর্থ ও ক্ষমতায় দল বেঁধে কী যে স্বাদ পায় সমাজকে নষ্ট করে মেধাহীনরা চতুর লুটেরাদের ডেরায়। নারীর মেধা প্রজ্ঞা পরিশ্রমে যেখানে নারীর ক্ষমতায়নে পুরুষরাও সমঅধিকার চায় সেখানে একদল অবৈধ নষ্ট লুটেরার অর্থের লোভে পর্দার আড়ালে ভোগে লালসায় উচ্চাভিলাষী একদল নারীও নব্য মনোরঞ্জনের সোসাইটি গড়েছে। ঘেন্না অরুচিতেও তাদের কিছু আসে না। মারহাবা মারহাবা। সহজ সরল নৈতিক সৎ জীবন নেই। ভাগ্য পশ্চিমা ট্যাবলয়েড এ দেশে নেই। মানবজমিনও সিরিয়াস কাগজ হয়ে গেল।

সংসদে একজন সদস্য বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক খাত পিতা-মাতার বখে যাওয়া অবাধ্য সন্তানের মতো। সরল পথে আনা যাচ্ছে না। এটা আনতে হবে। আমরা অপরাধীদের বিচার চাই। রুখতে চাই। বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে অর্থনীতি-সমাজকে রক্ষা করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বিসিবিতে যে সফলতা দেখিয়েছেন এখানে কি পারছেন? সংসদে বলেছেন, ৪ লাখের কাছে ঋণ খেলাপি। এরা কারা? আইনের হাত এদের থেকে দূরে কেন? এদের পুষতে হবে কেন? এদের যারা পালিয়েছে তাদের সুযোগ দিল কারা? এদের অর্থ আদায় চাই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক বছরের প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে হবে। করোনার যুদ্ধ চলছে। বৃহৎ শিল্পকারখানা যারা খেলাপি নন, কর্মসংস্থানে অর্থনীতিতে অবদানে বিস্ময়কর ভূমিকা রাখছেন তাদের উদার সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এমনকি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদেরও। অর্থনীতি খাতে শৃঙ্খলা সুশাসন আনতেই হবে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।