ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কোভিড, জাতীয়তাবাদ এবং বিশ্বায়ন 

বাংলানিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
কোভিড, জাতীয়তাবাদ এবং বিশ্বায়ন 

সরকার, সংবাদ মাধ্যম, চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতদের পক্ষ থেকে একটি নতুন অভিমুখের প্রয়োজনীয়তা। বহুমুখী ভাইরাসের একটি নতুন যুগের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা।

কোভিড-১৯ নামক একটি নতুন ভাইরাসের আগমন যেমন হঠাৎ করেই ঘটেনি, তেমনি এটাই শেষ ভাইরাস নয়। যেমনটা আমরা বলছি, আরেকটি দৈত্যসম ভাইরাস তার সকল বৈশিষ্ট্যগত স্বাতন্ত্র নিয়ে শুকরের মাধ্যমে মানব জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে যা ইতোমধ্যে চীনে প্রকাশিত হয়েছে।

তখন আর করোনা ভাইরাস নয়, উপস্থিত হবে এইচএন (হেমাগ্লুটিনিন অ্যান্ড নিউরেমিনিডেস) সমৃদ্ধ ইনফ্লুয়েঞ্জা। এর শেষ কথা হলো, আমাদেরকে তাকে মেনে নিতে হবে যখন আমরা সেইসব বাসস্থানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলছি, যেগুলো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর আবাসস্থল, তখন আমাদেরকে এ ধরণের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতেই হবে।

প্রথম দফা: আমরা প্রকৃতির নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে যাচ্ছি। এখন হিসাব মিটানোর সময়।
আমরা নিশ্চিতভাবেই সাগরের তলদেশের তুলনায় মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগ সম্পর্কে অনেক বেশি জানি। আমরা আমাদের বনভূমিতে বা গুহাগুলোতে কি লুকিয়ে আছে তার চেয়ে অনেক বেশি জানি চাঁদের উপরিভাগে কী রয়েছে। প্রায় নিশ্চিতভাবেই এসব জায়গায় এমন কিছু জিনিস রয়েছে যে প্রকৃতি চায় না আমরা তাদেরকে স্পর্শ করি আর যদি তা আমরা করি তাহলে আমাদের দুর্ভোগকে মেনে নিয়েই করতে হবে।

শেষ কথা হলো, যদি আমরা পশুদেরকে খামারে, যেখানে তাদের থাকার কথা নয়, লালন-পালন করেই বেশি বেশি মাংস পেতে চাই, তাহলে এ ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ (২০০৯) এবং কোভিড-১৯ (২০১৯) ছড়িয়ে পড়বেই। শেষ কথা হলো, যদি আমরা পশুদের কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করার জন্য হরমোন এবং অ্যান্টিবায়োটিকস প্রয়োগ অব্যাহত রাখি তাহলে আমরা সুপার ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিতে এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে যাচ্ছি, যা পরিণতিতে মানব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে যাবেই।

শেষ কথা হলো, তুমি প্রকৃতির ওপর যত বেশি চাপ প্রয়োগ করবে, স্প্রিংয়ের বেষ্টনী যত শক্তই থাকুক, এমন একটা সময় আসবে যখন তা ছিটকে বেরিয়ে যাবে যেমনটা খাঁচায় আবদ্ধ শেয়াল সুযোগ পেলেই করে। মানুষের তত বেশি পরিমাণ মাংস ভোগ করার কথা ছিলো না যেমনটা আমরা আজকাল করছি। মানব জাতি আজ তার হজম করার সীমানার অতিরিক্ত একটি শিকারি জাতিতে পরিণত হয়েছে এবং উৎসব পার্বণজনিত হত্যার মাধ্যমে খনিজ ও ভিটামিন সঞ্চিত রাখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে যা প্রাক-সভ্যতা কালে একেবারেই ছিলো না। মানুষ হয়তো শিকারে বেরিয়ে পড়তো এবং সাধারণত কয়েক মাস পরে খালি হাতে ফিরে আসতো। অনেক সময় তাদের ফিরে আসা বিলম্বিত করতে হতো, কারণ তারা ঝামেলায় জড়িয়ে যেত।

পশুদেরকে বনাঞ্চলে অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া হতো (শূকর) এবং সমতল ভূমিতে (গবাদি পশু) অথবা বনাঞ্চলে এবং সমতলে পাখিদেরকে অবাধে চলতে দেওয়া হতো। তারা প্রাকৃতিক খাবার খেতো এবং সময় ধরে স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠতো। তাদেরকে খাঁচায় পুরে রাখা হতো না, তাদেরকে রাসায়নিক সহযোগে মল বা পশুবিষ্ঠা খেতে বাধ্য করা হতো না যাতে তারা নির্ধাতিত সময়ের আগেই দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে। তাই যদি আমরা অগণ্য দিক থেকে প্রকৃতির নিয়মের বিপরীতে চলি, তাহলে আমরা কি আশা করবো?

দ্বিতীয় দফা: কোভিড এবং বিশ্বায়ন প্রকল্প
বছরের পর বছর ধরে বহুমুখী ঢেউয়ের মতো করে বিশ্বায়ন এসেছে যখন মানুষ পরস্পরের সাথে মিশে গেছে অথবা একে অপরকে নির্মূল করেছে অথবা দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করেছে। গণঅভিবাসন, নদীপথ ধরে জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং জলজ যান যা প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য পথ ছিলো তা এখন সামুদ্রিক নৌবাহনে প্রসারিত হয়েছে। রোমানরা প্রাচ্যের ভারত ও চীনের সাথে বাণিজ্য করতো এবং তারা জানতো যে পশ্চিমে আমেরিকাও রয়েছে। তার জার্মানিকাস নামক গ্রন্থে রোমান লেখক পাবলিয়াস কর্নেলিয়াস টেসিটাস উল্লেখ করেন, ‘পশ্চিমে রয়েছে বিশাল মহাদেশ (ব্রিটিশদের দ্বীপপুঞ্জ)। ’ এটা নিশ্চিত যে, ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিসপানিওলাতে স্প্যানিশদের সকল পুঁজি খাটানোর কৌশল প্রয়োগ করার আগেই ভাইকিংরা আমেরিকায় পৌঁছেছিলো। তখন তার পর্তুগিজ প্রভুরা (?) সকল সুফল হাতিয়ে নিয়েছে এবং আগেভাগেই তাদের হাতে ব্রাজিল ভূখণ্ড তুলে দিয়েছে। এটা দাপ্তরিকভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিলো (মিনাস গেরাইসের খনি থেকে সোনা এবং কলোনি অব স্যাক্রামেন্টো বর্তমান উরুগুয়ের খনি থেকে রূপা)। এটা করতে গিয়ে পর্তুগিজরা তাদের নিজেদেরকে দিয়েছিলো আফ্রিকার চতুর্পার্শ্বের সমুদ্রসীমা কিউটা থেকে নিচে পশ্চিম আফ্রিকার কেপ পর্যন্ত এবং মহাদেশটির পূর্বদিকটা আরব, পারস্য এবং ভারতীয় উপদ্বীপসমূহ এবং উপরে প্রাচ্যের যতদূর সম্ভব। পর্তুগিজদের ৩০০০ দূর্গ এর প্রমাণ বহন করছে।

পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ এবং পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং ফ্রান্সের সমুদ্রপথে অনুসন্ধানকারীরা পৃথিবীর চতুর্পার্শ্বের প্রান্তগুলোকে উপনিবেশিকীকরণ ও বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দিলো এবং তা ধীরে ধীরে বিশ্বায়ন প্রকল্পের দিকে অগ্রসর হলো যেভাবে মানুষ গ্রাম থেকে শহর অভিমুখে প্রথম পর্যায়ে ছুটতে থাকে এবং তারপর বিদেশ অভিমুখে। বাণিজ্যিক সংযোগগুলো ক্রিয়াশীল রইলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আর অতি সম্প্রতি বাণিজ্য চুক্তিগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে যা অনিবার্য ছিলো।

কিন্তু বিশ্বায়ন সারা পৃথিবী জুড়ে মহামারিজনিত ভীতিকর পরিস্থিতির সাথে সহাবস্থানে থাকতে পারে না। বাণিজ্যিক সংযোগগুলো ভেঙে পড়ছে, জাতীয় উৎপাদনকে সমর্থন করার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বজনীন মহামারি পরিস্থিতিতে ভালো, সতেজ, স্থানীয় উৎপাদনের জন্য ‘আমাদের নায়োকোচিত কৃষকদের’ সাহায্য করার নামে কতগুলো সুপার মার্কেট চেইন ব্যান্ডওয়াগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে? 

মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ একটি ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে, বিশ্বায়ন প্রকল্পে চিড় ধরেছে এবং একটি অবরুদ্ধ জাহাজের মতো কাতরাচ্ছে যেন কোন ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। নতুন কোন ভাইরাসের আগমনের অপেক্ষারত অবস্থায় সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রচারণা যেন হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর ওপর চাবুক মেরে যাচ্ছে। তাদের পত্রিকার কপিগুলো বিক্রির সুযোগ তৈরি করতে তারা প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে নবতর বায়ুপ্রবাহের অনুকূলে পাল তুলে রেখেছে। এই প্রচারণা বাণিজ্যের বিশ্বায়ন-চেইনের মৃত্যুঘণ্টা হিসেবে কাজ করবে। সারা পৃথিবীর লকডাউন তারই ইঙ্গিত বহন করে। মানুষ এখন পাশের শহরের সাথে ব্যবসা করতে চায় না, ভিন্ন দেশ বা মহাদেশের তো প্রশ্নই ওঠে না।

তৃতীয় দফা: বিশ্বাসযোগ্য তথ্য
শহরগুলোর মেয়রদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অথবা রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে তাদের পর্যটন বাণিজ্য খোলা রাখার অভিপ্রায়ে এবং অন্যদের পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য ভুল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। যদি তথ্য পুরোপুরি স্বচ্ছ না হয়, তাহলে এটি বিপজ্জনক, কারণ, তা মিথ্যা দৃশ্যপট তৈরি করে অর্থনীতি ও জীবনকে ধ্বংস করছে।

এর চেয়ে অনেক সহজ কাজ হলো সংবাদ মাধ্যমে ইতিবাচক সাড়া সৃষ্টি করা এবং ঘটনাকে অপব্যবহারের সময়ে নিজের এজেন্ডাকে চালান করে দেওয়া। এটি ততোধিক সহজ, বিষাদ, সর্বনাশ ও আতংকের খবর ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জ্বলন্ত অঙ্গারকে নিজের আস্তিনের নীচে আড়াল করা।  

চলুন আমরা কোভিডের বিভিন্ন সংবাদগুলো উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করি। শুরু করা যাক, আমরা কি নিশ্চিত কোন তথ্যের কথা বলছি, ধরুন ৪০,০০০ সন্দেহভাজনের কথা বলছি, যা হতেও পারে ৪,০০,০০০? আমরা কি হাসপাতাল, ডাক্তারদের সার্জারি বা সেবালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের কথা বলছি, নাকি বলছি কমিউনিটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য যা প্রকাশ করতে পারে বাস্তবের চেয়ে কয়েক শত বা সহস্র গুণ বেশি সংখ্যক? যে মহিলাটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে মারা গেলো, তার মৃত্যু সনদে কি হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোক অথবা কোভিডের কথা উল্লেখ করা হলো, যা রক্ত জমাট বাঁধাতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে? তথ্য এবং প্রতিবেদনের কি কোন সঙ্গতি রয়েছে? না, বাস্তবে তা নেই।

ডাটা সংগ্রহ ও প্রকাশের একটি বিশ্বজনীন পদ্ধতি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতে ভাইরাসটিকে মেডিকেল টার্মে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় এবং নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা থাকা দরকার। অর্থনৈতিক কারণেও এটা গুরুত্বপূর্ণ। চলুন আমরা এক্স, ওয়াই বা জেড দেশের ঘটনাগুলোকে গ্রহণ করি।

‘ওয়াই’ নামক দেশ শুরু থেকেই তুলে ধরলো ভীতিকর পরিসংখ্যান। ‘ওয়াই’ নামক দেশের পশ্চিমে অবস্থিত ‘এক্স’ নামক দেশটি দেখতে পারছিলো কি আসছে এবং সে দেশটির এতো বেশি আঞ্চলিক বিভাজন নেই। দেশটির রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সেবা থাকায় এটি একটি পরিকল্পনা গ্রহণে সমর্থ ছিলো এবং যেহেতু সেই দেশের মানুষের সাধারণ জ্ঞান উচ্চমাত্রার, তারা মৃত্যুর সংখ্যাকে ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে আনতে সক্ষম হলো এবং সংক্রমণের ঘটনাকে নিবিড় তত্ত্বাবধানে নিলো। জনগণ তাকে ‘বাহবা’ দিলো। ‘জেড’ নামক দেশটি (অনেকটা পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ) একেবারে শুরু থেকেই ডাটাকে ম্যানিপুলেট করার ইতিহাস থাকায় পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক ক্লাউন হিসেবে আখ্যায়িত করলো। উক্ত ইউরোপের দেশগুলো দেখিয়ে দিলো কোভিড থেকে তাদের মৃত্যু অস্বাভাবিকভাবে কম।

হঠাৎ করে দেখা গেলো, পর্যটনের সময় সমাগত। ‘জেড’ নামক দেশটি বললো, ‘এক্স’ নামক দেশটি বিপজ্জনক; ‘ওয়াই’ নামক দেশটি দেখালো, কোভিড তাদের দেশে শূন্যে নেমে এসেছে। কারণ তারা পরীক্ষা থামিয়ে দিয়েছে, তখন নায়কোচিত ‘এক্স’ নামক দেশটি তার দেশের শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে যারা বদ্ধ আবাসিক পরিবেশে বসবাস করে এবং যাদেরকে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়, তাদের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সূচ্যগ্র দেখলো। অন্য দেশগুলো এখন ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’ নামক দেশগুলোর কাছে তাদের পর্যটন তৎপরতা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। আর ‘এক্স’ নামক দেশটিকে বিরত রাখছে এ কথা বলে যে, যারা সেই দেশ থেকে ঘুরে আসবে তাদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু যারা ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’ নামক দেশ থেকে আসবে তাদের জন্য এই শর্ত প্রযোজ্য নয়।

যদি সকল ডাটা সমানভাবে সংগ্রহ ও উপস্থাপন করা হতো তাহলে ‘এক্স’ নামক দেশটি নিরাপত্তার সাথে সকল অঞ্চল থেকে পর্যটক পেতো। চলমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিলে এটি চূড়ান্তভাবে সম্ভব যে, এখানে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে এবং এই বছর এই দেশের জিডিপি ২০% নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

চতুর্থ দফা: বৈজ্ঞানিক দিক
প্রত্যেকেই ভ্যাকসিনের কথা বলছে এবং কারা প্রথম এটি উৎপাদন করতে পারবে ও কারা তা থেকে লাভবান হবে, সে বিষয়ে একটি প্রতিযোগিতা অব্যাহত আছে। উপহাস করার মতো এবংবিধ বিষয়ে হাসতে হচ্ছে বলে দুঃখিত। কিন্তু এই ভ্যাকসিনটি পঞ্চদশ শতাব্দীর একটি কাঠের অট্টালিকায় আগুনকে উন্মুক্ত করে রাখার মতো যেখানে ষাটটি আগুনের ঘর চুল্লী আর চারপাশে পর্যাপ্ত শুষ্ক কাঠ রাখা আছে।

ভাইরাসরা নিঃশব্দ এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমরা সামান্যই জানি। আমরা এমনকি এটাও জানি না যে, উহানেই এর সূত্রপাত হয়েছিলো কিনা। বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের যা করণীয় তা হলো একটি নতুন দিকে মনোনিবেশ করা, একটি নতুন প্রটোকল খুঁজে বের করা, যার লক্ষ্য হবে বহুমুখী ভাইরাস, শুধুমাত্র একটি নয়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা বুহ্য তৈরি করা। যাতে ভাইরাসটি সংক্রমণ করার মতো কোন সেল খুঁজে না পায়, যেখান থেকে সে নিজেকে বহুগুণিতকরণের প্রক্রিয়া পেতে পারে। তাই এটি একটি জৈবিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে, ঘুরে বেড়ায় এবং যথারীতি কোন ক্ষতি করার সুযোগ না পেয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এটিই হলো এইডস চিকিৎসার সর্বশেষ দর্শন।

পঞ্চম দফা: শেষ পর্যন্ত, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী
আবার, সঠিক তথ্য ছাড়া এবং একটি ল্যাকডেইসিক্যাল অ্যাপ্রোচ যেমনটা কয়েকজন প্রেসিডেন্ট (বিশেষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের) এবং প্রধানমন্ত্রী (যেমনটা জনসন ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে প্রয়োগ করে প্রায় মরতে বসেছিলেন) নিয়ে জনগণ খড়কূটোকে জাপটে ধরবে নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ব্যাখ্যা করতে। মাস্ক ব্যবহার না করা বা ভ্রান্তভাবে ব্যবহার করে, নিতান্ত একটি ফ্যাশান উপকরণের মতো চিবুকের ওপর পরিধান করে রাস্তাঘাটে তর্জন-গর্জন করা হলো কোয়ারেন্টাইনের নিঃশ্বাস ফেলা। ‘আহা ভালোই, এই যুবক দম্পতির কাছ থেকে শুনলাম তারা দুই সপ্তাহ ধরে তাদের নতুন বাসায় দিনে তিনবার সহবাস করছে, মহিলাটি করোনাক্রান্ত, পুরুষটি নয় এবং তাকে নাকি এটা আক্রান্ত করতে পারবে না। ’ ‘আমার প্রতিবেশীদের হয়েছিলো। তারা বলেছে এটা কোনো ব্যাপার নয়। ’ ‘তারা বলেছে, এটা তোমাকে ধরবে না যদি তুমি বাঁধাকপি খাও। ’ ‘তারা বলেছে অ্যালকোহল জেল এটিকে মেরে ফেলে। তাই আমি পর্যাপ্ত পরিমাণ ওয়াইন ও হুইস্কি খাচ্ছি। ’ হেয়ার ড্রেসারদের কেউ একজন বলেছে যে, সে শুনেছে কেউ একজন বলেছে সব বাচ্চাদেরকে এটি সংক্রমিত করবে না। তাই আমি বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠাচ্ছি। ওদেরকে পাশে রেখে কোন কাজ করা যায় না। ওরা সারাক্ষণ হৈ-হট্টগোল করে। ’

সত্যি, অনেক লোকের কোভিড হয়েছে কিন্তু তাদের কোন লক্ষণ ছিলো না। আবার অনেক কোভিড রোগীর সামান্য লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই মারাত্মক ও অস্বস্তিদায়ক লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে এবং ৩.৫% কোভিড আক্রান্ত লোক মৃত্যুবরণ করেছে। ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হলে ২০% এই রোগে মৃত্যুবরণ করে। আর যারা বেঁচে থাকে তারাও মারাত্মক সব লক্ষণ, যেমন ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতি এবং জীবনব্যাপী সমস্যা নিয়ে বাঁচে।

তাই যদি লোকজন রাশিয়ান রুলেট খেলতে চায়, তাহলে তারা যেন মনে রাখে যে পিস্তলে একটি মাত্র বুলেট লোড করা আছে। সেটা কোন এক অভাগার জন্য…

উপসংহার: করণীয় কী?
প্রথমত, বিশ্বায়িত এবং সামঞ্জস্যতাপূর্ণ একটি ডাটা সংগ্রহ করা হোক এবং তা উপস্থাপনের বন্দোবস্ত থাকুক এবং যদি আমরা তা ২০২০ সালের মধ্যেই করতে না পারি, তাহলে মানবতার কুঁজো হতে বাকি থাকবে না। এটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক গতি এবং পরিস্থিতির সঠিক উপলব্ধির জন্য। দ্বিতীয়ত, যদি জনগণ সহজ কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারে এবং যখন ঘরে থাকতে বলা হবে, তখন ঘরে থাকতে না পারে, তাহলে তাদেরকে কঠোর দিনের ভেতর দিয়ে যেতেই হবে।

তৃতীয়ত, পৃথিবীব্যাপী বন্য প্রাণী নিধন এবং তাদের আবাসস্থল ধ্বংস করা নিষিদ্ধ করতে হবে। চতুর্থত, বাণিজ্যিক খামারগুলোতে করারোপ করতে হবে যাতে মাংসের ভোগ কমানো যায় এবং তা উৎপাদনে যেন মানবিক আচরণ করা হয়। এসব খামারকে সবুজ পণ্য উৎপাদন এবং সবজি উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সন্নিবেশিত করতে হবে, (যাদের পণ্যের দাম শিল্পপণ্যের চেয়েও বেশি হয়ে যায়) ভর্তুকি দিতে হবে এবং একটি বহুমুখী খাদ্য তালিকা (যেমন ফ্লেক্সিটারিয়ান) -এর ব্যাপারে সর্বোচ্চ স্তরে প্রণোদনা দিতে হবে। পশুর মাংস ভোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন ধরণের পরিবেশ তৈরি করাটাই করণীয়। পঞ্চমত, ভবিষ্যত বৈশ্বিক মহামারির সাথে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী একটি বহুযোজী চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক উপায় খুঁজে বের করা।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করতে হবে। যাতে আমরা সবাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক, চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, অর্থনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং আমরা, সংবাদ মাধ্যম যারা বিভিন্ন ঘটনাবলীকে দায়িত্বশীলতার সাথে প্রকাশ করবো।

যদি তা না হয়, অধিকতর সম্ভাব্য যা ঘটবে তা হলো পুরো মানবজাতি চরম ভবিষ্যতের মুখোমুখি হবে, যেখানে-সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে, ‘দ্বিতীয় ধাপের’ চেয়েও প্রবলাকারে। কিন্তু গুচ্ছ ঘটনা শহরের আংশিক বা পুরো শহর বা অঞ্চল বা দেশের পর দেশ বন্ধ করে দিতে হবে পৃথিবীতে এমন এক ভবিষ্যতকে দেখার জন্য যেখানে নীতিমালাই বলে দিবে এহেন চলমান ঘটনাসমূহের কথা যা আরো তীব্র গতিতে ঘটতে থাকবে। একটি সৌর বিচ্ছুরণে ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরে ৩৪% মৃত্যুহার ঘটানোর মতো একটি বৈশ্বিক মহামারির কথা কল্পনা করুন। চিন্তার খোরাকই বটে?

আপনি বেছে নিন, আপনার কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন কিনা।

মূল: টিমোথি ব্যানক্রফ্ট হিনচে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।