ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বুদ্ধ পূর্ণিমা: বুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২০
বুদ্ধ পূর্ণিমা: বুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন বুদ্ধ পূর্ণিমা

বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক পবিত্র ও স্মরণীয় দিন। মহামানব গৌতম বুদ্ধ আজ থেকে ২৫৬৩ বছর আগে এরকম এক বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে ২০ অসংখ্য কল্প ধরে দশ পারমী, দশ উপ-পারমী ও দশ পরামার্থ পারমী পূরণ করে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

পরবর্তীতে এই বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতেই পরম জ্ঞান অর্থাৎ বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন এবং পরিনির্বাণ হয়েছিলেন। ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত এই তিথি বৌদ্ধদের জন্য খুবই গুরুত্ববহ।

পৃথিবীতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কেউ পরম সুখে জীবন-যাপন করতে পারে না। প্রতি মুহুর্তে পৃথিবীতে হাজারো, লাখো মানুষ রোগগ্রস্ত, যন্ত্রণাগ্রস্ত এবং অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এমনকি পৃথিবীও পরিবর্তন হচ্ছে। এই জগতে কোন কিছুই স্থায়ী ও অবিনশ্বর নয়। তাই তথাগত বুদ্ধ বলেছেন, ‘অনিচ্চা বত- সংখারা, অনিচ্ছা দুক্খ অনত্তা’ অর্থাৎ সংস্কার দুঃখ, সব কিছুর ধ্বংস অনিবার্য। তাহলে পৃথিবীতে এত স্বার্থের দ্বন্দ্ব কিসের? যুদ্ধ কিসের?

গৌতম বুদ্ধ যে শান্তির বাণী প্রচার করে গেছেন সেই বাণীর প্রয়োজন আজকের বিশ্বে সকল মানুষের। আজ খুব বেশি প্রয়োজন মহামানব বুদ্ধের অহিংসা নীতিকে অনুধাবন করা। সমগ্র বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে হলে সর্বপ্রথম ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক প্রবর্তিত সর্বজনীন পঞ্চশীলের নীতিকে বিশেষভাবে গ্রহণ ও পালন করতে হবে। আমরা যদি প্রাত্যহিক জীবনে পঞ্চশীল (প্রাণিহত্যা না করা, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা, ব্যভিচার না করা ও মাদকদ্রব্য সেবন না করা) গ্রহণ, পালন, অনুধাবন ও গবেষণা করা, তাহলে দেখতে পাব সব ধর্মের শান্তির বাণী এতে নিহিত আছে। আর এই পঞ্চশীল পালনে শান্তি আর বিপরীতে রয়েছে অশান্তি।

ভগবান বুদ্ধ ঈশ্বর বা কোন অলৌকিক শক্তিকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলেছেন- মানুষের কৃত কুশল-অকুশল কর্মই সুখ-দুঃখের কারণ। তাই তিনি সকল প্রকার পাপকর্ম বর্জন করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। বুদ্ধ ছিলেন সত্যের সাধক। সত্যের সাধনা করতে গিয়েই তিনি রাজপুত্র হয়েও বিত্ত-বৈভব, রাজৈশ্বয্য ও সংসার ছেড়ে শুধু দুঃখ মুক্তির জন্য গৃহত্যাগ করেছিলেন। তিনি তাঁর জন্ম থেকে পরিনির্বাণ পর্যন্ত সাম্য, মৈত্রী, অহিংসা ও করূণার জন্য আন্দোলন করেছিলেন এবং উপদেশ দিয়ে গেছেন।

দুঃখ মুক্তি ও শান্তির জন্য বুদ্ধ কতগুলো পথ নির্দেশ করেছিলেন যা আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ নামে অভিহিত। সেই আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ হলো- ১. সম্যক দৃষ্টি, ২. সম্যক সংকল্প, ৩. সম্যক বাক্য, ৪. সম্যক কর্ম, ৫. সম্যক জীবিকা ৬. সম্যক ব্যায়াম, ৭. সম্যক স্মৃতি ও ৮. সম্যক সমাধি। বুদ্ধের এই নীতিগুলোর মধ্যেই রয়েছে জীবনের পরিপূর্ণতার সঠিক দিক-নির্দেশনা। আমরা যদি প্রত্যেকেই এই নীতিগুলোকে অনুসরণ করি তাহলে আমাদের জীবন হবে সুখী, সুন্দর ও মহিমান্বিত।

আজ বাংলাদেশের সমগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় শোকার্ত। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একে একে চারজন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু, বুদ্ধ শাসনের ধারক-বাহক, পণ্ডিত উপ-সংঘরাজ সত্যপ্রিয় মহাথের, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী, একুশে পদকে ভূষিত ২৮তম সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের, দ্বাদশ সংঘরাজ, অগ্গমহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ অভিধায় ভূষিত ড. ধর্মসেন মহাথের ও আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ব্যক্তিত্ব, মহাসুখ প্রার্থনাপূরক বুদ্ধ ধাতু জাদী, রাম জাদীসহ ছয়টি জাদীর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ উপঞঞা জোত মহাথের (গুরুভন্তে)। তাঁদের এই মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিষ্য, ভক্ত ও অনুরাগীদের প্রিয়-বিয়োগ দুঃখে আমিও শোকাহত। আমি তাঁদের পারলৌকিক সদগতি ও নির্বাণসুখ কামনা করছি।

ভগবান বুদ্ধের অসীম করুণা ও অহিংসার আদর্শে বিদূরিত হোক করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। প্রতিষ্ঠিত হোক সত্য, সুন্দর ও মহানুভবতা। মৈত্রী ও প্রেমের বাঁধনে আবদ্ধ হোক পৃথিবীর মানবসমাজ। জগতের সকল প্রাণি সুখী হোক। সবাইকে পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা।

লেখক: ফ্রান্স আন্তর্জাতিক শিল্পকলা অ্যাসোসিয়েশন ও আন্তর্জাতিক বুড্ডিস্ট কাউন্সিল অব ফ্রান্স’র সভাপতি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।