ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘রাজনৈতিক’ সাইলেন্স

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১১
‘রাজনৈতিক’ সাইলেন্স

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের সংখ্যা শতাধিক। গোটা পাঁচেক বাদে বাদবাকীগুলো ওয়ান ম্যান শো।

এই দলগুলোর অস্তিত্ত্ব কেবল খুঁজে পাওয়া যায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিবৃতিতে। গুরুত্বপূর্ণ-অগুরুত্বপূর্ণ কিছুই বাদ যায় না বিবৃতির বিষয় থেকে। ওয়ান ম্যান পার্টির নেতারা অল-ইন ওয়ান। নিজেরাই সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক, বার্তা প্রেরক ও বার্তা বাহক।

বড় দলগুলোর মতো ছোট রাজনৈতিক ‘দোকান’গুলোও মিডিয়ার সাথে ‘অতি’ সুসম্পর্ক বজায় রাখে এবং আশ্চর্য্য, কেউ কখনো ফান্ডের অভাবে পড়ে না! অদৃশ্য সূত্র থেকে বানের ঢেউয়ের মতো টাকা আসে। কেউ কেউ বিভিন্ন দূতাবাসের সংগে রাখেন মধুর সম্পর্ক। দূতাবাস আয়োজিত জাতীয় দিবস গুলোতে উনাদের সরব উপস্হিতি লক্ষ্য করা যায়।

বাংলাদেশে ক্ষমতার পার্টনার-দাবিদার রাজনৈতিক দল মাত্র চারটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, এক্স-ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাসীন-ইন-ওয়েটিং বিএনপি, ক্ষমতাচ্যূত রাজনৈতিক ‘ফুটবল’ জাতীয় পার্টি এবং হুট করে ক্ষমতার মধ্যে ঢুকে পড়ার সুযোগ সন্ধানী জামায়াত। এই চারটি দলকে সমঝে চলেন খোদ নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন। তাদের ‘বাতচিত’ ফলাও করে ছাপা হয় জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে। ‘জাতির সুখ-দুঃখে কলেজে বিদীর্ণ হওয়া ও
জনগণের স্বার্থে ‘একপায়ে খাঁড়া’ থাকা দলগুলো বাংলাদেশের আম-জনতার ‘পিওর এন্টারটেনমেন্ট’।

সউদীতে আট বাংলাদেশীর শিরোশ্ছেদে পুরো জাতি শোকে-বিস্ময়ে যখন স্তব্দ তখন রাজনৈতিক আংগিনায় চলছে স্ট্রিকট সাইলেন্স। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। বিবৃতির লেটার হেডটির নো নড়ন চড়ন। যেন বিবৃতি-বক্তৃতার হরতাল চলছে দেশে। সরকার হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্বশীল পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ক্ষমতাসীন-ইন ওয়েটিং বিএনপি’র ভাবভংগিতে ’অল গোয়িং ফাইন’ ভাব। সউদী দোসর ও যাকাতের বেনিফিশিয়ারী জামায়াত এবং সউদী-বন্ধু এরশাদের প্রত্যাশিত নীরবতা ব্যথিত করেনা। বাম ঘরানার বাঘা বিপ্লবীরাও যেন এমুহূর্তে ক্যাট।

সউদী রাস্ট্রদূতকে ডাকার সৎ সাহস অর্জন করতে পারেনি পররাষ্ট্র দফতর। আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদেও ভীত-সন্ত্রস্ত আমাদের পররাষ্ট্র বিভাগ। লাশ ফেরত চাওয়াতো দিল্লী দূরস্ত। সউদীদের সাথে বিএনপি’র মিত্রতা-সখ্যতা বেশ ঘনিষ্ট। লাশ ফেরত দেবার অনুরোধ জানাতেও তাদের অনাগ্রহ। অতি সাধারণ আট বাংগালীর জীবন ও লাশের চেয়েও দামী উনাদের ব্যক্তিগত সখ্যতা! সউদী বন্ধুত্বে বছরে দু’তিনবার ফাও হজ্বে যাবার মওকা। বিপদে-আপদে নিজেদের পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়ের প্যাকেজ।

বাম ঘরাণার অসম্প্রাদয়িক দলগুলো ও বুদ্ধিজীবীদের সাইলেন্স বড়ো বেশী কানে বাজে। কারণ নীরবতা কখনো কখনো সরব বার্তা পৌঁছায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল আর বুদ্ধিজীবীদের কাছে আম-জনতার প্রাণ ও লাশ দু’টোই মূল্যহীন?
নাকি সউদী যাকাতের বিলি বন্টনের লিস্টিটা বেশ বিস্তৃত!

ইমেলঃ [email protected]

বাংলাদেশ সময় ১১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।