ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

তাজা খবরের পেছনে ক্লান্তিহীন,অনিদ্র ছুটে চলা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
তাজা খবরের পেছনে ক্লান্তিহীন,অনিদ্র ছুটে চলা! বাংলানিউজের কনফারেন্স রুম/ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: চারিদিকে পথে পড়ে আছে ক্ষতবিক্ষত দেহ। বাঁচার জন্য মানুষের যন্ত্রণাকাতর আকুতি। একহাতে আহতদের উদ্ধার, অন্যহাতে মোবাইল ফোনে নিউজরুমে অশোকেশ দাদার কাছে পাঠাচ্ছিলাম তথ্য, আপডেট। 

মানুষের গোঙানি আর আহাজারিতে যেন বাকরুদ্ধ আমি।  অন্য সময়ের মতো সহকর্মী আবু বকরকে বলা লাগেনি ছবিগুলো তোলার কথা।

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সদস্যদের টর্চলাইটের আলোই ভরসা। একজন অফিসার চেঁচিয়ে আমাকে সরে যেতে বলছেন, ‘দোহাই লাগে ভাই, সরে যান, আরো বোমা আছে!’ 

চেনা সেই কন্ঠস্বর হয়তো নিহত পুলিশ ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলামের! যার সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ও ছিল। অল্প দূরে যেতেই দ্বিতীয় বোমার আঘাত। তখন ১০০ গজ দূরে রাস্তার অন্যপাশে অবস্থান নিয়েছি। এবার আরো বেশি চিৎকার চেঁচামেচি আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনিও রেড অ্যালার্টে। বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা দেহগুলোর উদ্ধারের পালা এবার। অ্যাম্বুলেন্সের পেছন পেছন পড়িমরি করে ছুটলাম হাসপাতালে।

জঙ্গি হামলার ঘটনাস্থল থেকে এবার হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে। বোমায় হতাহতদের বিষয়ে তথ্য ও খবর দিতে থাকলাম। সেই সময় লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। স্ট্রেচারের পেছনে পেছনে ছুটতে গিয়ে এক সময় থেমে গেলাম।   

শরীরের রক্তের ছাপ নিয়ে শুধু বাংলানিউজের পাঠকের জন্য ছিল উদ্ভ্রান্তের  মতো এভাবে ছুটে চলা। মাথায় কেবল একটাই চিন্তা, যে করেই হোক কাছের-দূরের, দেশ ও দেশের বাইরের লক্ষ-কোটি পাঠকের জন্য মুহুর্মুহু পাঠাতে হবে খবর--- কি হচ্ছে, কি ঘটছে সিলেটে?  এই যে হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে বীভৎস, লোমহর্ষক,স্নায়ুক্ষয়ী অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বিরামহীন ছুটে চলা, এর পেছনে প্রেরণার উৎস ছিলেন বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। সবার প্রিয় আলমগীর ভাই!

২৪ মার্চ শুক্রবার ভোর থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ‘অপারেশন  টোয়াইলাইট’- এর সংবাদ সংগ্রহে কাটে নির্ঘুম রাত। শুধু পাঠকদের জন্য তরতাজা খবর ও সাইডস্টোরি নিয়ে সবার আগে হাজির হয় বাংলানিউজ। এডিটর ইন চিফ স্যারের যথাযথ নির্দেশনা দিয়েই ক্ষান্ত হননি; খেয়েছি কিনা সেই খবরও রেখেছিলেন। ২৫ মার্চ ভোরে মাথার ওপর দিয়ে যায় বজ্রবৃষ্টি। তখনও ফোনে খবর নিয়েছেন খেয়েছি কিনা। তার একটাই কথা, যা-ই করো, নিরাপদে থাকার চেষ্টাটাও করো। সেইফটি ফার্স্ট! 

অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম নিউজরুম থেকে সংযোগ হওয়া সহকর্মীদের ফোনে। কারো কারো মন্তব্য ছিলো-‘ন্যাশনাল মিডিয়ার থেকে আপনি তিন স্টেপ এগিয়ে আছেন। ’ ‘কেউ প্রেরণা দিযে বলেছেন:‘নিউজের সঙ্গে আছেন আপনি, গ্রেট!’ 

পাঠকের সংবাদের খোরাক যোগান দিতে মাঠে ময়দানে এভাবেই অক্লান্ত ছুটে চলেন বাংলানিউজের কর্মীরা। আর নেপথ্যে থেকে এভাবেই অনুপ্রেরণা যোগানো মানুষটি অনলাইন মিডিয়ার প্রতিকৃৎ এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। যার হাত ধরে অনলাইন মিডিয়ার পথচলা, তাঁর দেখানো পথে আজ হাটছে একঝাঁক তরুণ, উদ্যমী সংবাদকর্মী।  

২৮ মার্চ দিনটি ছিলো মঙ্গলবার। ‘আতিয়া মহল’-এর অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ। পরদিন বুধবার ভোরে মৌলভীবাজার জঙ্গি আস্তানা ঘেরাও করার খবর পাই। তৈরি হয়ে বসে আছি। যদি যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।  

ভোর ৬টার দিকে এডিটর ইন চিফ মহোদয় ফোনকল দিয়ে জানতে চাইলেন শরীরের অবস্থা। স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক মৌলভীবাজার যাওয়া। সহকর্মী আবু বকর ও ঢাকা থেকে আসা দুই সিনিয়র সহকর্মী রহমান মাসুদ ও মাজেদুল নয়নসহ রওয়ানা দিলাম। গন্তব্য মৌলভীবাজার। রহমান মাসুদ ফোনে করে বললেন টাকা শেষ, এডিটর স্যার বললেন, ‘এরই মধ্যে অ্যাকাউন্ডে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’  

শুধু কাজের দিক নির্দেশনাই নয়, মাস শেষেই কিংবা কোনো অ্যাসাইনম্যান্ট কাভার করতে কর্মীরা যাতে অর্থসংকটে না পড়েন, সে জন্য অ্যাকাউন্ট পরিপূর্ণ থাকে আগেভাগেই। অভিভাবক হিসেবে সন্তানবাৎসল্য  নিয়ে কর্মীদের সংকট উপলব্ধি করেন নিরেট সাংবাদিক থেকে হওয়া আমাদের সম্পাদক।   

‘সংবাদ বিনোদন সারাক্ষণ’! সবার আগে নির্ভুল তথ্যসমৃদ্ধ খবর নিয়ে হাজির হয় বাংলানিউজ। আতিয়া মহলই নয়, নাসিরপুর  ও বড়হাট জঙ্গি আস্তানার বাড়ির মালিক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হওয়া স্বত্ত্বেও সবার আগে খবর তুলে ধরে বাংলানিউজ। বড়হাট জঙ্গি আস্তানায় এক নারীসহ তিন জঙ্গির প্রথম তথ্য সংগ্রাহক আমরাই। অন্যসব মিডিয়ায় যখন অপারেশন ‘হিট ব্যাক ‘ নাম দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, বাংলানিউজের স্লাইডে তখন শোভা পাচ্ছে ‘অপারেশন মেক্সিমাস’। বাংলানিউজ  দেখে পরক্ষণে নিজেদের ভুল শুধরে নিয়েছিল অন্য মিডিয়াগুলো।  

তথ্যবহুল নিউজ পাঠকের সামনে তুলে ধরতে দিনরাত নির্ঘুম কর্মের শক্তি ও প্রেরণায় যুগিয়ে গেছেন এডিটর ইন চিফ। প্রতিটি কর্মীর ভালো কাজের, শ্রমের মূল্যায়ন করতে তিনি কুণ্ঠাহীন। এজন্যই ২৪ ঘণ্টা সব ঘটনার পেছনে ছুটে চলেছে বাংলানিউজের বিশাল কর্মীবাহিনী।  

২০১১ সালে দৈনিক সংবাদ ও স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেটে কর্মরত। তখন সবে যাত্রা শুরু করেছে বাংলানিউজ। প্রবল ইচ্ছে বাংলানিউজে কাজ করার। ২০১৪ সালে আসে সেই সুযোগ। ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করি এডিটর ইন চিফ স্যারের কাছে। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি কেন বাংলানিউজে কাজ করতে আগ্রহী?’ 
বলেছিলাম, ‘বাংলানিউজকে কি দিতে পারবো জানি না, তবে আমি আপনার অধীনে কাজ করে কাজ শিখতে চাই। ’   

২০১৪ সালের ৯ মে। এদিন বাংলানিউজের ১ম বক্সে স্লাইডে স্থান পেয়েছিল আমার নিয়োগ পাওয়ার নিউজটি। সহকর্মীদের অভিনন্দনে সিক্ত হয়েছিলাম। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট থেকে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট হিসেবে পদোন্নতি হওয়ায় অভিনন্দন পেয়েছি।  বর্ষসেরা ৯ জনের একজন হয়ে আজো অভিনন্দিত প্রিয় বাংলানিউজের বদান্যতায়। শ্রদ্ধেয় এডিটর ইন চিফ  আলমগীর হোসেন স্যার ও তাঁর হাতেগড়া এই প্রতিষ্ঠানে শিখতে চাই আমৃত্যু। থাকতে চাই সহকর্মী ও পাঠকের ভালবাসার মায়াজালে। শুভ জন্মদিন, বাংলানিউজ।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।