ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বিএনপি’র ভিশন ২০৩০ শেখ হাসিনারই জয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
বিএনপি’র ভিশন ২০৩০ শেখ হাসিনারই জয় বিএনপি’র ভিশন ২০৩০ শেখ হাসিনারই জয়

আমি কখনই বিশ্বাস করিনা, আওয়ামী লীগ চিরকাল রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। ভিশনারি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দীর্ঘকাল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকুন সেটি কায়মনবাক্যে কামনা করি এবং তিনি দীর্ঘকাল সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন বলে বিশ্বাসও করি।

কিন্তু আমাদের মত বৈরিতাপূর্ণ, অসহিষ্ণু ও সংঘাতপূর্ণ সমাজে ভিন্ন মত থাকবেই, বিরোধিতা থাকবেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ভিন্ন মতালম্বীদের দমন করলে সমাজ অধিকতর অসহিষ্ণু হয়ে পড়বে এবং চরমপন্থা নামক বিকল্প ধারার উদ্ভব হতে পারে।

বরং ভিন্ন মতালম্বীদের কৌশলে লালন করে যতটা সম্ভব ইতিবাচক বিরোধিতার ধারায় রাখতে পারা সফল রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কের দায়িত্ব।  

আমি রাজনীতির যতটুকু পাঠ গ্রহণ করেছি তা’তে দেখেছি, জাতির জনক ভিন্ন মতালম্বীদের সম্মান করতেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। তাদের সুখ-দুঃখের খোঁজে খবর নিতেন এবং অনেকের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে জেনারেল আইয়ুবের বিশ্বস্ত নেতাদেরও বাঙালীর অধিকারের প্রশ্নে কৌশলে কাজে লাগিয়েছেন। এমনকি বাঙালীর অধিকারের প্রশ্নে তিনি তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর শাসনামলে ফৌজদারী আপরাধে কারাগারে বন্দী অনেক নেতার সংসারের খোঁজ-খবর রাখতেন। জাতির পিতা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুর পাঠানো লুঙ্গি, গেঞ্জি, পাঞ্জাবী পড়তেন। ভাসানী সাহেবের প্রিয় পোশাক ছিল তাঁর স্নেহের মুজিবের পাঠানো কাপড়।  

বারবার কারাবরণকারী পিতার সার্বক্ষনিক স্নেহ পাবার সৌভাগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কপালে জোটেনি। কিন্তু পিতার ত্যাগ, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, কর্ম-কৌশল এবং দেশ ও জাতির জন্য মৃত্যু ঝুঁকি নেওয়ার অদম্য সাহস বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মাঝে পূর্ণাঙ্গভাবে সঞ্চারিত হয়েছে। তিনি কেবল মাত্র পিতার রক্তের উত্তরাধিকার নন। রাজনীতির শিক্ষক পিতার একনিষ্ঠ ছাত্রী তিনি। জাতির পিতার সকল গুণাবলী তিনি অপরিসীম সফলতার সঙ্গে আত্মীকরণ করেছেন। ওপরন্তু অতি উদার পিতার ঔদার্য জনিত অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং সেগুলোর নান্দনিক প্রয়োগ করে চলেছেন তাঁর সফলতার দূর্গম পথচলায়।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এমন ঝড়ের কবলে তাদের দু’বোনের মত পৃথিবীর কোনও মানুষ পড়েনি। ১৫ আগস্টে তাঁরা সব হারিয়েছেন। ২১ আগস্টে তিনি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছেন। আরও অনেকবার তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ ছাত্রী না হলে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়েই পিতা-মাতা-স্বজন হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের ধ্বংস করে দিতেন, আইন বহির্ভূতভাবে হত্যা করে সব সাফ করে দিতেন। কিন্তু আজন্ম গণতন্ত্রী, আকণ্ঠ নৈতিকতাসম্পন্ন অসাধারণ মানুষটি এক বিন্দু পরিমান আইন বহির্ভূত পথে পা বাড়াননি। বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে জাতির পিতার হত্যার বিচারও করেন নি। দেশের প্রচলিত আইন ও প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় এ’বিচার সম্পন্ন করেছেন। আদালতে ও আদালতের বাইরে হত্যাকারী পরিবারের সদস্যদের আস্ফালন নিরবে সহ্য করেছেন।  

জননেত্রী শেখ হাসিনা খুব ভাল করেই জানেন, জাতির পিতা হত্যাকান্ড এবং হত্যা পরবর্তীতে হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় জিয়া পরিবারের অবস্থান ও ভূমিকা। ২১ আগষ্টে জিয়া-তনয়ের ভূমিকাও তিনি সম্যক অবহিত। এরপরও তিনি তাদের প্রতি আইন বহির্ভূত নির্দয় হন নি। দেশ, জাতি ও রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে তিনি তাঁর হত্যা প্রচেষ্ঠাকারীদের সমূলে উৎপাটন করেননি। বরং সম্মান দেখিয়েছেন। কারাগারে থাকতে নিজে রান্না করা খাবার পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়াকে। সন্তানহারা মা-কে সান্তনা দেবার জন্য ছুঁটে গিয়ে অপমানিত হয়েছেন। দেশের স্বার্থে গণভবনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফোন করে প্রায় ঘন্টাব্যাপী অশ্রাব্য কথাবার্তা সহ্য করেছেন।  

২০১৫ সালের গণধিকৃত নাশকতার পর দেশব্যাপী বিএনপির প্রতি সাধারন নাগরিকদের চরম ঘৃণা জন্মেছিল। বিএনপির তৃণমূলে চুড়ান্ত হতাশা বিরাজ করছিল। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী স্বদল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদানের আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছিলেন। সেই সূবর্ণ সুযোগে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-কে সমূলে উৎপাটন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি রাজনীতির নোংরা পথটি বেছে নেননি। বরং আমাদের অনেকের অনুরোধ উপেক্ষা করে তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের সকল পথ রুদ্ধ করে রেখেছেন। কৌশলে বিএনপি-কে ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় পথ চলার সুযোগ করে দিয়েছেন। ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার বিধান করে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে বিএনপি-কে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেই সময়  আমাদের অনেকে আপত্তি তুললেও সুদুরপ্রসারী চিন্তাশীল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেসির স্বার্থে বিএনপি-কে নতুন করে বাঁচবার প্যাসেজ দিয়েছেন।  

জননেত্রী শেখ হাসিনা শৈশব থেকেই রাজনীতি দেখছেন। তাঁর মা গৃহবধু হলেও বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতির পিতার পাশে ছিলেন ছায়ার মত। পরিবার থেকেই তাঁর রাজনীতির পাঠ গ্রহণ। গত তিন যুগ তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। কিন্তু সক্রিয় রাজনীতির কর্মী তিনি ষাটের দশক থেকে। ছয় দশকের রাজনীতির অভিজ্ঞতা তাঁকে পরিপূর্ণ করেছে। নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে তিনি এক অনন্য অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাঁর প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা আজ বিশ্ব স্বীকৃত। এই সময়ে তিনি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত, আলোকিত ও অনুসরনীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।  

তিনি চোরাপথে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করতে চাননি, নির্মূল করতে চাননি। বরং প্রতিপক্ষকে পরিমার্জিত পরিশীলিত ও পরিবর্তিত রূপে দেখতে চেয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে দিন বদলের রাজনীতির যে শুভ সূচনা করেছেন প্রিয় স্বদেশে, সেই পথে তিনি সকল পথ, মতের রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে টেনে আনতে চেয়েছেন। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক জননেত্রী শেখ হাসিনা সৃষ্ট জনআকাঙ্খার প্রতি অবশেষে প্রবল প্রতাপশালী, একগুয়েমী ধ্যান-ধারনার ধারক এবং সমগ্র বিশ্বের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে গঠনতান্ত্রিকভাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলেন। তিনি রাজধানীর বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেলের বলরুমে তাঁর অনেক ঘুমন্ত ও ঝিমানো সহকর্মীদের সামনে রেখে এই বয়সে একা দুই ঘন্টার অধিককাল ধরে বিএনপির ভিশন-২০৩০ পাঠ করেছেন। বিএনপির ভিশনে কি আছে, না আছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা চলছে। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ চলছে। এটি নকল না তাদের জ্ঞানপ্রসূত তা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। আমার আজকের প্রতিপাদ্য এই ভিশনের বিষয় নয়। আমার প্রতিপাদ্য এই ভিশনের অবতারনা। এই ভিশনের অবতারনা ইতিবাচক রাজনীতির নিকট নাশকতার রাজনীতির আত্মসমর্পন। চলমান ঘটনা প্রবাহে রাজনীতির সফলতম কুশীলব জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট বেগম খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পন। জয় শেখ হাসিনা। তোমার হাত ধরে প্রিয় স্বদেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর।

বাংলাদেশ সময় ২১০৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
এমএমকে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।