ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ভালোবাসা পরিণতি পেতে হলে....

লতিফা নিলুফার পাপড়ি, অতিথি কলামিস্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১১
ভালোবাসা পরিণতি পেতে হলে....

ভালোবাসা পরিণতি পায় কখন? এর জবাব হচ্ছে; দুই পক্ষের ভালোবাসার টান যখন সমান হয়।

৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আমাদের দেশে এসে দু’দিন সফর করে গেলেন।

এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। তাঁর এই আসার জন্য গত প্রায় দেড় বছর ধরে কতো আয়োজন চলেছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে কতো বৈঠক হয়েছে। স্বাক্ষরিত হওয়ার জন্য কতো বিষয় রেডি করা হয়েছে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত বছর যখন ভারত গিয়ে ছিলেন তখন সেখানে এমন আয়োজন হয়েছিলো কি না আমি জানি না। তবে আমি বিশ্বাস করতে চাই নিশ্চয় হয়েছিলো। না হলে আমরা এমন আয়েজন করবো কেনো?

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সে দেশের আরো যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসার কথা ছিলো; তাদের কেউ কেউ এসেছেন, আবার কেউ কেউ আসেন নি। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা আসছেন না এ খবর জেনেছিলাম দুইদিন আগেই সংবাদপত্রের রিপোর্টের মাধ্যমে। সর্বশেষে জানা গেলো তাদের পানিসম্পদ মন্ত্রীও আসেননি।

অনেক দিন ধরে জেনে আসছিলাম প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সফরকালে বাংলাদেশের সাথে ভারতের যতো সমস্যা, যতো সংকট আছে সবগুলোর সমাধানের পথ তৈরী হবে। ছিটমহল সংকটের সমাধান হবে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সার চুক্তি হবে। চুক্তি হবে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিনাশুল্কে ভারতে রফতানির।

এসব পাওয়ার জন্য আমরা ক্ষেত্রও প্রস্তুত করেছি। ভারতের উগ্রপন্থি যারা আমাদের পাহাড় জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে ছিলো, তাদের আশ্রয় স্থলগুলো ভাঙ্গা হয়েছে। আমরা সেই বঙ্গবন্ধুর আমলেই ‘বেরুবাড়ি’ দিয়ে দিয়েছি। তাঁদেরকে ট্রানজিট দেওয়ার জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিলাম।

কিন্তু এই যে এতো ভালোবাসা, সবই মনে হলো এক তরফা ছিলো। আর সে কারণেই আমাদের কঠিন হতে হলো। কঠিন হতে হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। কঠিন হতে হলো বাংলাদেশকে।

মনমোহন দুই দিন সফর করে গেলেন। মুখ রক্ষার জন্য একটি সমোঝতামূলক যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষর করে গেছেন। কিন্ত তাঁর দেশের ট্রানজিটের সুবিধা তিনি আদায় করে নিয়ে যেতে পারেননি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার দৃঢ়তার জন্য। দাদাদের দাদাগিরিকে আপনি থোড়াই কেয়ার করেছেন। মাথা নত না করে মনমোহনকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ে আপনি আবারও প্রমাণ করলেন সবার উপরে দেশ বড়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আমার ছোট নিবেদন; আগামীতে যদি ট্রানজিট নিয়ে চুক্তি করতে হয়, তা হলে যেনো আমারা তিনবিঘা করিডোরের পূর্ণ কর্তৃত্ব পেয়েগেছি তা নিশ্চিত হয়। নিশ্চত যেনো হয় তিস্তা নদীর পানির ৫০ ভাগ আমাদের পাওনা। প্রতিশ্রুত পণ্য শুল্কমুক্ত ভাবে ভারতে রফতানি হচ্ছে সেটা যেনো আমরা দেখি নিশ্চিত হয়েছে। ফেলানির মতো আর কারো লাশ যেনো কাঁটাতারে ঝুলেছে এমন খবর পত্রিকার পাতায় ছাপা না হয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়কে বলছি; ভালোবাসা হয়ত: এক তরফা হয়। কিন্তু ভালোবাসা পরিণতি পেতে হলে ভালোবাসার প্রতি দুই পক্ষেরই টান থাকতে হয়। আপনি মুখ্যমন্ত্রী হবার পর পটোকল ভেঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাকে যে ভাবে অভিনন্দিত করেছেন, সেটা ভালোবাসারই প্রকাশ। কিন্তু আপনার কর্মকাণ্ডে তো আমরা ভালোবাসা পেলাম না।

লেখক: কলাম লেখক ও শিক্ষক।   ই-মেইল: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।