ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বিএনপি ডুবছে কেন? (শেষ কিস্তি)

বিএনপির পাথেয় হোক ইতিবাচক রাজনীতি

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
বিএনপির পাথেয় হোক ইতিবাচক রাজনীতি

এই ধারাবাহিকের অনলাইন প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ নিজের নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তিক্ত মন্তব্য করেছেন। আমরা লেখার শুরুতেই বলেছিলাম- গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির টিকে থাকা খুবই দরকার।

ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরেও বিএনপি কেন দাঁড়াতে পারছে না তার আত্মবিশ্লেষণ করা খুবই প্রয়োজন। কাজটা বিএনপি করছে না বলেই এগুতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করেছি বিএনপির ত্রুটিগুলো অনুসন্ধানের।   বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপিকর্মীদের এবং সাধারণ মানুষের বিরক্তির কথা বলেছি, সিনিয়র নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কথা বলেছি, শীর্ষনেতৃত্বের ভুল কৌশলের কথা বলেছি। এগুলো বিএনপি আভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব কৌশলগত সমস্যা। তারপরও বিএনপি মতাদর্শে বিশ্বাসী  পাঠকগণ বলেছেন, সরকারের হামলা মামলার কারণেই বিএনপি কার্যত আজ রিক্ত। বিএনপিকে দুর্বল করে দিচ্ছে যেসব উপাদান, আমরা কেবল  সেগুলোই নিয়েই আলোচনা করছি। বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়ার  পেছনে সরকারের দমন-পীড়নও অন্যতম কারণ। কিন্তু আমরা এর আগে যেসব বিষয়নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলোর চেয়ে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি বলেই বিষয়টি শেষ দিকে রেখেছিলাম।

আমাদের কাছে মনে হয়েছে, দমনপীড়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনের সময় কখনও কখনও মামলা-হামলা বরং আন্দোলনে নতুন মাত্রাই যোগ করে। তবে এটা ঠিক যে, বিএনপি মামলায়-মামলায় আজ পর্যুদস্ত।   এটা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিএনপির  নেতাকর্মীদের উপর সরকারের রোষ বা মামলার-হামলা অনেক বেশি। বিএনপি শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও  প্রায় সহস্রাধিক মামলা আছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা-১৩,  এসবের মধ্যে দুটি বিচারাধীন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-  ৭৮ টি মামলা (বর্তমানে কারান্তরীণ) এসবের মধ্যে ২২টি বিচারাধীন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া- ৫ টি মামলা  ( এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
এমকে আনোয়ার ৫ টি মামলা  (এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
মির্জা আব্বাস- ৭৩টি মামলা  (এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১১ টি মামলা  (এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
শামসুজ্জামান দুদু ১৭ টি মামলা  (এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
মোসাদ্দেক আলী ফালু  ৪ টি মামলা  (এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
রুহুল কবীর রিজভী- ৪৪ টি মামলা  (এ-মুহূর্তে কারান্তরীণ)
সালাহউদ্দিন আহমেদ ২৭ টি মামলা (ভারতে কারান্তরীণ)
মওদুদ আহমেদ বিরুদ্ধে ১০ টি
সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে  ১৪টি
এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩ টি
খালেদা  জিয়ার অফিস স্টাফ শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ৪৭ টি এবং
আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে  ৫টি মামলা।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৭৫ টি মামলা (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি ছাড়াই )। ১০০টি উপর মামলা আছে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে (১০৫ টি), যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরবের বিরুদ্ধে (১৭৮টি), হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে (১০০টি) ,মীর শরাফত আলী সপুর বিরুদ্ধে (১০৫ টি) এর বিরুদ্ধে। ১০০ অধিক মামলার পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি আরো বড়। (সূত্র: কালের কণ্ঠ, ১২ জুন, ২০১৫)

প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি কেন ভাবছে সরকার তাদের আন্দোলনের পথ সহজ করে রাখবে বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করবে না। সরকার তো চাইবেই বিরোধীদলকে দমন করতে। আসলেই কি তাই? সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয় কি? না হয় না, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলকে দমন পীড়ন করতে হয় না। এটি যেমন সত্য তেমনি  আবার বিরোধীদলও ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবার আগে সরকারকে গদিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, আমাদের দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করার পেছনে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কারোরই  দায় কম নয়।

১৯৯১-২০০১ সময়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে এতোটা শত্রু ভাবাপন্ন অবস্থান ছিল না। সেটার শুরু কিভাবে? আজ বিএনপিকে সমূলে বিনাশের যে চেষ্টা কেন হচ্ছে ? এর দায় বিএনপির কতটুকু সেটা তাদেরকেই খতিয়ে দেখতে  হবে। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো আরো কিছু ঘৃণ্য ঘটনা এই অবস্থার জন্য দায়ী কি? ২১শে আগস্ট হামলার পেছনে  বিএনপির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে। জজ মিয়াকে দিয়ে গাঁজাখুরি গল্প ফেঁদেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তার আজ্ঞাবাহীরা। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আলমগীর কবির এবং আরো অনেক বিএনপিনেতা বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গীদের উত্থানে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধ যখন ব্যক্তিগত আক্রমণের রূপ নেয়  সেখানে ভদ্র শালীন আচরণ, শালীন কৌশল অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়ে। এখন সেটাই হয়েছে। বিএনপিকে ভাবতে হবে তাদের দ্বারা কোনোভাবে এই যুদ্ধংদেহী রাজনীতির শুরু হয়েছে কিনা। যদি তেমনটি হয়ে থাকে, তাহলে এই নেতিবাচক ধারার অবসানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি কিন্তু  বিএনপিই রাখতে পারে।

এই লেখায় যেহেতু শুধু বিএনপি নিয়ে আলোচনা করছি আমরা, সেহেতু বিএনপির প্রতি আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, তারা শিগগিরই তাদের ভুল বুঝতে পারবেন। ত্রুটিগুলো সামলে নেবেন। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে পরিহার করবেন তো বটেই, কাদা ছোড়াছুড়ি , ষড়যন্ত্রমূলক কৌশল পরিহার করে একটি চমৎকার আন্তরিক ও ইতিবাচক নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করুন। বিএনপিকে তাদের সদিচ্ছা ও সততার প্রমাণ দিতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষের দোলাচল ও দোটানা অবস্থান থেকে; যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। আওয়ামীলীগ-বিদ্বেষ বা আওয়ামী লীগের শত্রুদের জন্য প্রেম নয়, দেশপ্রেমই হয়ে উঠুক বিএনপির প্রধান কৌশল। তাদের আসল লক্ষ্য হয়ে উঠুক রাষ্ট্রের উন্নয়ন। কোনো শঠতার আশ্রয় না নিয়ে সততা ও স্বচ্ছতার সাথে তাদের এই সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।

-মনোয়ার রুবেল, কলামিস্ট
ইমেইল- [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম

** বিএনপি ডুবছে কেন (৪)
** বিএনপি ডুবছে কেন (৩)
** বিএনপি ডুবছে কেন? (২)
** বিএনপি ডুবছে কেন? (১)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।