ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

১০১ বই দেনমোহরে ইবিছাত্রীর বিয়ে

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
১০১ বই দেনমোহরে ইবিছাত্রীর বিয়ে

ইবি: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিয়ের আগ মুহূর্তে দেনমোহরের কথা উঠতেই শুরু হয় দরকষাকষি। দেনমোহরের দরকষাকষিকে ঘিরে দীর্ঘ সময় চলে যুক্তিতর্ক।

 

যুক্তিতর্ক শেষে সোনার গহনা কিংবা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকায় এক সময় দুই পক্ষ একটি সিদ্ধান্তে আসে। দুই পক্ষ একমত হতে না পারলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার নজিরও কম নয়। দেনমোহরকে ঘিরে এ পরিস্থিতি বর্তমান সমাজের একটি অলিখিত নিয়ম।

কিন্তু সে অলিখিত নিয়ম উপেক্ষা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা। বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে ১০১টি বই নিয়েছেন তিনি।
গত শনিবার (৩১ অক্টোবর) একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রুহুল মিথুনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয় তার। রুহুল মিথুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী। তাদের উভয়ের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলায়।

উপহার হিসেবে বইয়ের জুড়ি না থাকলেও দেনমোহর হিসেবে বই প্রত্যাশা ব্যতিক্রমই বটে। বিয়ের আগেই নিজের ইচ্ছার কথা পরিবারকে জানান অন্তরা। বিয়ের আসরে বর পক্ষ থেকে দেনমোহর হিসেবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রস্তাব দিলেও কনে পক্ষ ১০১টি বই দেনমোহরের প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি ১০১টি বইয়ের লিস্ট দেয় কনে পক্ষ।

পরে কনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে ১০১টি বই হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ে। ভিন্নধর্মী এ দেনমোহর পরিশোধ করে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তুষ্টির কথা জানান বর-কনে দু’জনই। বইগুলো নিয়ে পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ার পরিকল্পনার কথা জানান তারা।

অন্তরা বলেন, একটা সময় ভাবতাম, হয়তো অর্থ ও সোনার গহনাই কেবল দেনমোহর হতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ইসলামের ইতিহাসে পড়ার সময় জানতে পারি, অন্য যে কোনো কিছুই দেনমোহর হতে পারে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বিয়েতে ১০১টি বই দেনমোহর হিসেবে চাইব। আমি আমার ইচ্ছের কথা বাবা-মাকে জানালে, তারা প্রথমে অবাক হলেও আমার চিন্তার প্রশংসা করেন। আমার বাবা তখনই বইয়ের নাম সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই থেকে আমি পছন্দের ১০১টি বইয়ের নাম সংগ্রহ শুরু করি। পরিবারের অন্য কোনো সদস্যও এ বিষয়ে দ্বিমত করেননি।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে ঠিক হলে বিয়ের আগেই আমার বরকে দেনমোহর নিয়ে আমার চিন্তার কথা জানাই। তিনি শুনে প্রথমে অবাক হলেও আমার ইচ্ছা পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। আমি তাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো সংখ্যক বই দেওয়ার স্বাধীনতা দিলেও তিনি আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী ১০১টি বই-ই দিয়েছেন।

ব্যতিক্রমী এ চিন্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখে থাকি দেনমোহর নিয়ে অনেক দরকষাকষি হয় এবং অনেক সময় দেনমোহরের টাকার অঙ্ক অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই দেনমোহরের অধিকাংশই অপরিশোধিত থাকে। আমি মনে করি, এমন উচ্চ দেনমোহরে কাউকে বেঁধে রেখে সংসার করা যায় না, যে আমাকে ভালোবাসে, সে এমনিতেই আমার সঙ্গে থাকবে। এ ছাড়া আমার স্বামীর কাঁধে দেনমোহরের এ ঋণের বোঝা থাকুক, এটাও আমি চাইনি। এজন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বর মিথুন বলেন, মেয়ে পক্ষের দেওয়া ১০১টি বইয়ের লিস্টের বইগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট করতে হয়েছে, তবে বিষয়টি খুবই উপভোগ করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিয়ের আসরেই দেনমোহর পরিশোধ করি এবং আমরা দু’জনেই বিষয়টি নিয়ে খুব খুশি। বিয়ের পড়ানোর সময় কাজি প্রথমে এমন দেনমোহরে কিছুটা আপত্তি জানান, তবে সবাই মিলে তাকে বোঝানোর পর বই দেনমোহর হিসেবে রেখেই বিয়ে সম্পন্ন হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।