ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

১৩ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খুঁজতে আসেন মায়েরা!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
১৩ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খুঁজতে আসেন মায়েরা! মায়েদের এ কাফেলা মেক্সিকোর ৪ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

গত ১৩ বছর ধরে প্রতি বছর সন্তানদের খোঁজে মেক্সিকোতে আসেন বিভিন্ন দেশের নারীরা। তাদের ছেলে-মেয়েরা আমেরিকা হয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে ঢুকে নিখোঁজ রয়েছেন।

এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়া থেকে আসা ওই নারীরা একসঙ্গে হয়ে মেক্সিকোজুড়ে তাদের নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান করে ফেরেন। মায়েদের এ কাফেলা দেশটির ৪ হাজার কিলোমিটার (২ হাজার ৪৮৫ মাইল) ভ্রমণ করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।

গুয়াতেমালা ও মেক্সিকোর সীমান্তে প্রবাহিত রাফটক নদী হয়ে মেক্সিকোতে ঢোকার সময় অভিবাসীদের ঝুঁকিকে প্রতীকায়িত করে থাকেন মায়েরা। ট্রানজিটের মাধ্যমে দেশটিতে আসা অভিবাসীদের অন্তর্ধানের বিষয়টি তুলে ধরে গণসচেতনতা তৈরিও সন্তানদের খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি এ কাফেলার উদ্দেশ্য।

এখন পর্যন্ত ২৭০ জন নিখোঁজ অভিবাসীর ছবি নিয়ে মেক্সিকোজুড়ে সন্তানদের খোঁজ করেন মায়েরা।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতসূত্র জানায়, ১৩ বছর আগে ‘মহাদেশীয় অভিবাসী আন্দোলন’ প্রথম এ কাফেলা সংগঠিত করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জন নিখোঁজ অভিবাসীর তালিকা করা হয়েছে, যাদের ৯০ শতাংশই পুরুষ! হারিয়ে যাওয়া নারীদের খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়, বিশেষ করে যখন তারা যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য হন। ওই নারীদের খুঁজে বের করার সম্ভাবনা থাকায় যৌনকর্মীদের সংগঠনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে আন্দোলন। মায়েদের আশা, যৌনকর্মীদের কেউ তাদের প্রিয়জনদের চিনতে পারবেন।

এজন্য নিখোঁজ অভিবাসীদের ছবি সঙ্গে রাখেন তারা।

ক্লেমেণ্টিয়া মুরসিয়া গঞ্জালেজ গত পাঁচ বছর ধরে মায়েদের এ কাফেলার অংশ। তার দুই ছেলের মধ্যে জর্জ ১৯৮৪ সালে ও মাওরিসিওন ২০০১ সালে হারিয়ে যান। তবে স্থানীয় রেডিও স্টেশনের সাহায্যে সম্প্রতি তিনি মারিওসিওনের অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছেন। জর্জের জন্য তার অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

গুটেনিয়ারের ছেলে হন্ডুরাস দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়েছেন। মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চোরাচালানি জেটাস প্রথমবার তাকে অপহরণ করেন এবং তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, কিভাবে জেটাস অন্য অভিবাসীদের হত্যা করে পুড়িয়ে দেন। সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে তাকে হন্ডুরাসের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

২০১২ সালের আগস্টে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো হন্ডুরাস ছেড়ে চলে যান। মেক্সিকো উত্তরের রেইনোসা যেতে মানুষ পাচারকারীদের ৩ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয় তাকে। সেখানে যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে সব যোগাযোগ হারিয়েছেন হন্ডুরাস।

হন্ডুরাসের ইসদিরো দে যিশু জুনিগা কলিন্দস তার ছেলে জোসে আইলডিফোনসো মোলিনাস জুনিগার খোঁজ করছেন। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জোসে মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্তের শহর নুয়েভো লরেডো থেকে তার বাবার সঙ্গে যোগ দিতে নিউইয়র্কের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে সুরক্ষিত অবস্থা পেয়েছিলেন। তখন তার মা হন্ডুরাসে ছিলেন।

মারিয়া ক্লেমেণ্টিনিয়া ভাস্কুজ হার্নানদেজও হন্ডুরাসের অধিবাসী। তিনি তার মেয়ে মারিয়া ইনেসকে খুঁজছিলেন, যিনি ২০০২ সালে নিখোঁজ হন। মারিয়া ক্লেমেটিনা মেয়ে মারিয়া ইনেসের অনুপস্থিতিতে তার নাতিকে উত্থাপন করছেন।

মারিয়ানা এলিয়েন লরেসিস তার ছেলে হিরবের্টোরের খোঁজে আছেন, যিনি ২০১০ সালের ০৬ মার্চ নিখোঁজ হন। তিনি এল সালভাদরের লা লিবার্ট্যাড ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির খোঁজে বেরিয়েছিলেন।

হন্ডুরাসের পিলার এসকোবার মদিনা তার মেয়ে ওলগাকে খুঁজছেন, যার সঙ্গে তার শুধু খুব বিরতিহীন যোগাযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একদিন ওলগা হন্ডুরাসের বাড়িতে ফিরে আসেননি।

১৫ দিন পর তিনি গুয়াতেমালা-মেক্সিকো সীমান্তে ট্যাপচুলার শহর থেকে তার মাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ‘সেখানেই শেষ’ ছিলেন।

মার্সেডিজ লামস তার মেয়ে এনা ভিক্টোরিয়াকে খুঁজছেন, যিনি ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। গত বছর হুইকস্তলায় একজন নারী তাকে বলেছিলেন যে, তিনি তার মেয়েকে স্থানীয় বারে দেখেছেন।

প্রতিবেশীরা নিশ্চিত করেছেন যে, এনা ভিক্টোরিয়ার ছবিটি এমন একজন নারীর মতো ছিল, যাকে তারা বারের মালিকের সঙ্গে শহরের চারপাশে দেখেছিলেন।

মেক্সিকোতে ঢোকার সময় অভিবাসীদের ঝুঁকিকে প্রতীকায়িত করে থাকেন মায়েরা।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতকিন্তু যখন মেসিদেস বারে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলেন, তখন বাউন্সার তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি সেখানে ঢোকেন, তবে বেঁচে ফিরবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।