ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

হাঙরে টাইফুনের ক্ষতিপূরণ!  

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
হাঙরে টাইফুনের ক্ষতিপূরণ!  

তিন বছর আগে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ টাইফুন হাইয়ানে বিধ্বস্ত হয়েছিল ফিলিপাইন।

তিন বছর আগে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ টাইফুন হাইয়ানে বিধ্বস্ত হয়েছিল ফিলিপাইন।  

২০১৩ সালের ০৮ নভেম্বর ভোরে আঘাত হানা হাইয়ান পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ গুইউয়ানের ছোট্ট দ্বীপ মালাপাসকুয়াকে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

এক সময়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রটির ছয় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও রিসোর্টের সব ভবন ও মাছ ধরার নৌকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং যোগাযোগ হারিয়ে যায়।  

ফলে পর্যটকদের জন্য এ গন্তব্যটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তবে সব আশা শেষ হয়ে যায়নি। মালাপাসকুয়া দ্বীপের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় ট্রেজার বা শেয়ালমুখো হাঙর ও এর জনপ্রিয়তা।  

দেশের এক কোণের এ দ্বীপটির মানুষেরাও ক্ষতিপূরণ ও পর্যটনশিল্প পুনরুদ্ধারে এ বিস্ময়কর উপায়কে কাজে লাগাচ্ছেন।  

সামুদ্রিক ট্রেজার হাঙর সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর মাছ। তার লম্বা লেজটিকে সে শুধু চাবুক হিসেবেই ব্যবহার করে না, এটি দিয়ে অন্য মাছগুলোকে অচেতন করে সহজে শিকারে পরিণত করে। পাশাপাশি অন্য প্রাণীর মরদেহ খেয়ে ও জীবাণু‍ পরিষ্কার করে প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমুদ্রকে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখে ট্রেজার হাঙর।

এ হাঙরের ডানা হংকংয়ে রফতানি করেও বিপুল আয় হয় ফিলিপাইনবাসীর। এশিয়ার সবচেয়ে বড় ডানার বাজার মালাপাসকুয়া দেশটির রফতানিতে ২.৩ শতাংশ অবদান রাখে।   

ফিলিপাইনের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মেরুদণ্ডী সংরক্ষণ প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক আলেসান্দ্রো পঞ্জো বলেন, ‘পরিষ্কার কেন্দ্র’ নামে পরিচিত এই হাঙর পর্যটনকেন্দ্রটিকেও পুনরুদ্ধার করছে।

ফিলিপাইনের সমুদ্রপথ সংরক্ষণ প্রচারণা গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আন্না অপোসা বলেন, পর্যটনকেন্দ্রটি প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাড়ি-ঘর, রিসোর্ট, এবং দোকান পুনর্নির্মিত হয়েছে। স্থানীয়রা কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছাড়াই ট্রেজার হাঙরকেন্দ্রিক তাদের জীবিকা ও পর্যটন বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছেন। তাই শুধুমাত্র হাঙরই টাইফুন হাইয়ানের ক্ষতি থেকে মালাপাসকুয়াকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে।  

মালাপাসকুয়া দ্বীপের হাঙর সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধার ওপর প্রশিক্ষণ ও তথ্য দানকারী প্রকল্প ‘শার্কলিঙ্ক’ এর সদস্য ডেনিস বায়তুল বলেন, অবিশ্বাস্যভাবে দ্বীপটির মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ট্রেজার হাঙর। সেখানকার দোকানে থাকা হাঙর এবং এর পেইন্টিং ম্যুরালের মধ্যে এর লক্ষণ ফুটে ওঠে।  

হাঙরের স্যুভেনিরও দ্বীপটির বড় ব্যবসা। স্থানীয় স্যুভেনির দোকানের মালিক ব্রায়ান বারকেনাস কাঠ দিয়ে হাঙরের ভাস্কর্য তৈরি করে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। সাবেক জেলে রিউয়ানও তার শিয়ালমুখো হাঙর ব্যবসা ফের শুরু করেছেন। তাদের মতে, হাঙর মালাপাসকুয়ার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

ফিলিপাইনের ফটোসাংবাদিক স্টিভ ডি নিফ হাইয়ানের পরমুহূর্তে মালাপাসকুয়ায় ভ্রমণ করে ধ্বংসযজ্ঞের নথি ও টাইফুনের দু’দিন পরে ক্ষতির মূল্যায়ন করেন। তিনিও বলেন, ভাগ্যক্রমে দ্বীপটি পুনরুজ্জীবিত হতে পারছে। কারণ, এর সমুদ্রজলে ট্রেজার হাঙর ছিলো। হাইয়ানের দুই সপ্তাহ পরেই তাই হাঙর-পর্যটন ব্যবসা ফিরে আসতে শুরু করে। শুধুমাত্র হাঙরই রক্ষা করছে দ্বীপবাসী তথা ফিলিপাইনকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এএসআর/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।