ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হাজারীর সেই ২১ দফা ফেনীর উন্নয়নের মডেল

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হাজারীর সেই ২১ দফা ফেনীর উন্নয়নের মডেল

ফেনী: ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর ফেনী এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় ফেনীবাসীর পক্ষ থেকে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন ফেনী-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারী।

তার ২১ দফার প্রথম দফা ছিল রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার। সেসময় গুদাম কোয়ার্টারের সড়কটি এতটা ব্যস্ত না হলেও পরে কেমন যানজট হতে পারে তা তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সম্ভবত এ কারণেই প্রথম দাবি ছিল এটি।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের সুবর্ণজয়ন্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রকাশনা বের হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাণীতে জয়নাল হাজারী দাবি করেন, সেসময় পর্যন্ত এটিই জেলা আওয়ামী লীগের ইতিহাসভিত্তিক একমাত্র প্রকাশনা। এতে যুক্ত করা হয় ওই ২১ দফা। পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো,

‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা সমীপে, ফেনীতে ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর জননেতা জয়নাল হাজারী এমপি কর্তৃক জনসভায় ঘোষিত ফেনীর জনগণের প্রাণের দাবি।

২১ দফা:

জনাবা,

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ ফেনীবাসী আপনাকে তাদের কাছে পেয়ে আনন্দ অনুভব করছে। আজিকার এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমি আপনার কাছে ফেনীবাসীর পক্ষ থেকে ২১টি প্রাণের দাবি উত্থাপন করছি। আমার আবেদন আপনি এসব ন্যায্য দাবিগুলো পূরণে যত্নবান হয়ে ফেনীবাসীর অশেষ উপকার সাধন করবেন।

১. চট্টগ্রামে দেওয়ান হাটের মত গোডাউন কোয়ার্টারে রেল লাইনের ওপর একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ।

২. ফেনীতে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপন।

৩. পিছিয়ে পড়া ফেনী জেলাকে উন্নয়ন ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের জন্য জেলা পরিষদ থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া।

৪. ফেনী জেলার পানিতে আর্সেনিক বিদ্যমান, ডানিডা ফেনীবাসীকে আর্সেনিকের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছে, কিন্তু জমি ক্রয়ের টাকা না থাকায় প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই ফেনী পৌরসভাকে জমি কেনা ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৫ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন।

৫. সিভিল সার্জন কর্তৃক প্রস্তাবিত ফেনী পুরনো হাসপাতাল এলাকায় একটি ট্রমা সেন্টার স্থাপনের আবেদন। এটি স্থাপিত হলে মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে।

৬. দাগনভূঞা থানায় একটি সরকারি কলেজ ও একটি স্কুল স্থাপন।

৭. কালিদাস পাহালিয়া নদীর ভালুকিয়া অংশে একটি পুল নির্মাণ।

৮. মুহুরী কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ভালুকিয়া (খ) কালিদহে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ও সোনাগাজীর চরে পাইলট চ্যানেল খনন প্রকল্পগুলো জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা পদক্ষেপ নেওয়া।

৯. ৮০ বছরের পুরনো ফেনী কলেজে বর্তমান শিক্ষা বর্ষেই অনার্স কোর্স চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ।

১০. জিওবিখাত থেকে ব্যয় বহনকৃত যে, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফেনীতে স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা।

১১. ফেনী সোনাগাজী সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় পুননির্মাণ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।

১২. ২০০০ সাল থেকে ফেনী ডিজিটাল একচেঞ্জকে ৩০০০ লাইনে উন্নীত করা প্রয়োজন।

১৩. দাগনভূঞা ও বসুরহাটের মানুষের জরুরি প্রয়োজন মেটাবার স্বার্থে দাগনভূঞাতে একটি ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপন করা জরুরি।

১৪. দাগনভূঞা, সোনাগাজী সদরে পৌরসভা প্রতিষ্ঠা।

১৫. ফেনী বিমানবন্দর এলাকায় কুমিল্লার মত একটি ইপিজেড স্থাপন করা বিশেষ উপযোগী হবে।

১৬. জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মাস্টার পাড়া মুজিব উদ্যানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ।

১৭. বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আন্দোলন ও বিগত দিনগুলোতে মোট ১৪ জন নিবেদিত কর্মী প্রাণ হারিয়েছে। তাদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আবেদন করছি।

১৮. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে ১৮ জন পুলিশ অফিসার ও জওয়ান ৫টি খুনসহ ১৮টি মামলার আসামি নিজাম ডাকাত ও তার চার সঙ্গীকে গ্রেফতার করে ফেনীকে সন্ত্রাসমুক্ত করেছে তাদের সবাইকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করার জন্য ফেনীবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ অনুরোধ করছি।

১৯. বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে ফেনী পৌরসভার যে মজা পুকুরটি কতিপয় বিএনপি কর্মীকে লিজ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে আবার ফেনী পৌরসভাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

২০. কাজিরবাগের সীমান্ত থেকে ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সরিয়ে জায়লস্করা বিডিআর ক্যাম্পে এবং বিডিআর ক্যাম্পকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হলে ফেনীর সন্ত্রাস শূন্যের কোটায় পৌঁছাবে। এই টেকনিক্যালে কিছুদিন আগে নজরুলকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়েছে। সরকার ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেও নজরুলের মরদেহ বের করতে পারেনি। তাই সব ফেনীবাসী বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাণের এই দাবিটি পূরণ করা বিশেষ প্রয়োজন।

২১. যে পীর পাগলা বাবাকে কেন্দ্র করে ফেনী শহরের পত্তন হয়েছিল, নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে যে পীরের মাজার জিয়ারত করে আপনি ক্ষমতায় এসেছেন আজ সকালে ফেনীতে নেমেই যে পীরের মাজার জিয়ারত করেছেন সেই পাগলা বাবার মাজারের অসমাপ্ত কাজ সমাধার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। পাগলা বাবার মাজারে যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য ইসলামপুর রোড ও তাকিয়া রোড প্রশস্ত করারও আবেদন করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
এসএইচডি/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।