ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নেতার ভেকু গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
নেতার ভেকু গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি

সাভার (ঢাকা): শীত এলেই বাড়ে মাটি খেকোদের উৎপাত৷ ভেকু যন্ত্র দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে দেওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। এবারও আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বংশী নদীর কুল ঘেঁষা দু'টি স্থানে নিষিদ্ধ ভেকু যন্ত্র লাগিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে৷ 

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ইউনিয়ন পরিষদের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলসহ আরও দুই-একজন এ কাজ করছেন।

এখানে রক্ষক হয়ে ভক্ষকে রূপ নিয়েছেন এ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।  

আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটির কাইলকাপুর ও গোয়ালবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভেকু যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটি তুলে ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়ার চিত্র।  

ব্যাপারীপাড়ায় দেখা গেছে, বংশী নদীর পাশে প্রায় এক বিঘা জমি থেকে আট-১০ ফুট গর্ত করে মাটি তুলে এমবি এন ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। পাশেই কালিয়াকৈর-গোয়ালবাড়ি সড়ক, মাটির কাটার কারণে ধসে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সড়কটি। শুধু তাই নয়, ইটখোলাতে গিয়েও সেই মাটি দেখা গেছে।  
এ মাটি কাটার দায়িত্বে রয়েছেন এক ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রতি গাড়ি (ট্রাক) মাটি বিক্রি করা হয় ১২০০ টাকা করে৷ এখানে এবার মাটি কাটা হচ্ছে। গত তিন-চারদিন ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মালিকদের শতাংশ প্রতি তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়।

অপরদিকে, রাঙ্গামাটির কাইলকাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বংশী নদীর পাশেই স্থানীয় মেম্বারের কেনা নিজস্ব ভেকু যন্ত্র ও ট্রাক দিয়ে নিজস্বভাবে নদীর কূল কেটে রাস্তা করে মাটি নিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে পাশের এক ইটভাটায়। মাটি কাটার কারণে পাশের সরিষা ও ভুট্টা ক্ষেত গুলোর পাশ ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।  

কথা বলতে গেলে পালিয়ে যান ভেকু যন্ত্রের চালকসহ দুই-এক শ্রমিক। পরে এ মাটি পরিবহনের দায়িত্বে থাকা সুব্রত নামে এক ট্রাকচালক বলেন, বংশী নদীর কূল ঘেঁষে আট ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কাটছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খলিল। সেই মাটি আবার পাশের একটি ইটভাটার কাছে বিক্রি করছেন তিনি।  

তিনি বলেন, আমরা কিছু জানি না। তবে মেম্বার যেভাবে বলছেন, আমরা সেভাবেই করছি। মেম্বারের কেনা ভেকু যন্ত্র দিয়ে তো প্রতি বছরই মাটি কাটা হয়ে থাকে। এবারও আমরা কাটছি।  

এমবি এন ব্রিকস ইটভাটার ম্যানেজার আরমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই মাটি ব্যবসায়ীরা আমাদের ইটভাটায় মাটি দেন। এবারও তারাই মাটি দিচ্ছেন। কোথা থেকে মাটি দেন বা কীভাবে মাটি আনা হয়, আমরা সেটা জানি না। তবে আমরা টাকা দেই, মাটি পেলেই চলে৷ 

ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার খলিল বাংলানিউজকে বলেন, মাটি কাটা না গেলে ভেকু যন্ত্র বন্ধ রাখতে হবে। আমি কালকেই মাটিতে ভেকু যন্ত্র লাগিয়েছি, আজই আপনারা এসেছেন। আমি তো সবাইকেই সম্মান করি। দুই-একদিন পরে আসেন আপনাদেরও করবো।  

জনপ্রতিনিধি হয়ে কীভাবে এ কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি এলাকায় ইটভাটা না চলে, যদি মাটি কাটা না যায়, তাহলে বন্ধ রাখবো, অসুবিধা কি? নদীর মাটি কাটাও নিষেধ, ফসলি জমির মাটি কাটাও নিষেধ, তাহলে বাংলাদেশে ইটভাটা চালাবো কেমনে?

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা শঙ্কিত, এভাবে উর্বর মাটি নষ্ট হলে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হবে।  

ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদফতরে সহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মো. রাজীব বাংলানিউজকে বলেন, আইনে আছে যে কোন কোন স্থান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে হলফনামা দাখিল করতে হয়। তবে সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়ার বেশিরভাগ ইটভাটা হলফনামা দাখিল না করে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নিজেদের ক্ষমতা খাটিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় দিচ্ছেন। আমরা যেসব স্থান থেকে এমন খবর পাচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) বেগম শামীম আরা নিপা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেসব ইটভাটাকে লাইসেন্স দিয়েছি তাদের বলা আছে, নির্ধারিত স্থান থেকে মাটি কাটবেন। কেউ যদি অবৈধভাবে মাটি কাটেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।