ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভিক্ষুকের গচ্ছিত টাকা দিয়ে ভারমুক্ত হলেন ব্যবসায়ী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
ভিক্ষুকের গচ্ছিত টাকা দিয়ে ভারমুক্ত হলেন ব্যবসায়ী

কুষ্টিয়া: আনোয়ারা বেগম (৬৫) পেশায় একজন ভিক্ষুক ছিলেন। শ্রবণ ও মানসিক প্রতিবন্ধী ওই নারী ভিক্ষা করতেন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌর বাজার ও রেলস্টেশন এলাকায়। 

তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার শশীধরপুর এলাকার মৃত তোফা মিয়ার স্ত্রী ছিলেন। সারাদিন মিরপুর বাজার ও রেলস্টেশনে ভিক্ষা শেষে রাতে প্লাটফর্মেই ঘুমাতেন।

গত ২২ ডিসেম্বর সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনোয়ারা বেগম।  

সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তির টাকা  তিনি জমিয়ে রাখতেন মিরপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বাজার সংলগ্ন পৌর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিকের (৫৮) কাছে। টাকাগুলো একবার খুলেও দেখেননি মোস্তফা মল্লিক। আনোয়ারা বেগম দিন শেষে যেভাবে টাকাগুলো দিতেন ঠিক সেভাবেই একটি প্লাস্টিকের বস্তায় রাখতেন মোস্তফা মল্লিক। এ কথা মোস্তফা মল্লিক আর আনোয়ারা বেগম ছাড়া কেউই জানতেন না।  

এরই মধ্যে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম। তার জমানো টাকাগুলো রয়ে যায় মোস্তফা মল্লিকের কাছে। বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তার আমানতের টাকা নিয়ে চিন্তায় পড়েন মোস্তফা মল্লিক। অবশেষে সন্ধ্যান পান মৃত আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনের। একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনের হাতেই মায়ের রেখে যাওয়া আমানত ফেরত দিলেন ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিক।  

মোস্তফা মল্লিক বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে এ বাজারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষা করে যা পেতেন একটা পুটলি করে আমার কাছে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখতেন। তিনি যেভাবে টাকাগুলো দিতেন আমি সেভাবেই রেখে দিতাম। কোনোদিন খুলেও দেখিনি। হঠাৎ ২২ ডিসেম্বর ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান আনোয়ারা। এরপর আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি তার আমানতের টাকার পুটলিটি নিয়ে। অনেক খোঁজ করে তার একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনের সন্ধান পাই।  

আজ দুপুরে তার মেয়ের হাতে মায়ের রেখে যাওয়া টাকাসহ ব্যাগটি তুলে দেই। এসময় দেখা যায় ওই ব্যাগে ১৪ হাজার ৯শ টাকা ছিল। টাকাটা তার সন্তানের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেকে খুব হালকা লাগছে।

আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুন জানান, আমার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মিরপুর বাজারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষার টাকাটা মোস্তফা মল্লিকের কাছে রাখতেন বিষয়টি আমরা জানতাম না। মোস্তফা মল্লিকই স্ব-ইচ্ছায় মায়ের রেখে যাওয়া টাকাটা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।

মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলম মণ্ডল বলেন, আনোয়ারা বেগমের গচ্ছিত ১৪ হাজার ৯শ টাকা তার মেয়ে শিরিনা খাতুনের হাতে তুলে দিয়ে মোস্তফা মল্লিক মহানুভবতার পরিচয় দিলেন।  

শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) দুপুরে শিরিনা খাতুনের হাতে তার মায়ের টাকা তুলে দেওয়ার সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বাজারের কিছু ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।  

** কুষ্টিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।