ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কারাগারে স্বজন-লিংক, কথা বলতে পারবেন বন্দিরা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
কারাগারে স্বজন-লিংক, কথা বলতে পারবেন বন্দিরা .

ঢাকা: বাংলাদেশে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। যার মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার। কারা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার ৬৬৪ জন হলেও বন্দি রয়েছেন ৮৮ হাজার ২০০ জন। যা ধারণক্ষমতা থেকে ২ গুণেরও বেশি। প্রতিদিন বিভিন্ন কারাগারে গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার বন্দির সঙ্গে কমপক্ষে ২০ হাজার আত্মীয়-স্বজন সাক্ষাৎ করে থাকেন।

কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ না হলে তাদের মধ্যে হতাশা, পালানোর প্রবণতা ও নানা রকম দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে কারাবন্দিদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার।

 

তাই দেশের সব কারাগারে তৈরি করা হবে স্বজন লিংক। বন্দিরা তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট পর্যন্ত কথা বলতে পারবেন। তবে বন্দিদের সব কথোপকথন নজরদারি ও রেকর্ড করা হবে।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কারা অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর বদ্ধপরিকর। জনকল্যাণ ও জনস্বার্থে কারাগারের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।  

এরই অংশ হিসেবে কারা অধিদপ্তরের সেবা কার্যক্রম সহজীকরণের জন্য কারাগারে মোবাইল ফোন বুথ স্থাপন করা হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অনেক দেশে কারাগারে বন্দিদের ফোন ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম উদ্যোগ।

২০১৬ সালের ১০ এপ্রিলে কেরানীগঞ্জে নির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার শুভ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব কারাগারে ‘স্বজন লিংক স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ।

প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে প্রায় ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় কারাগারে মোবাইল বুথ স্থাপন বা স্বজন লিংক স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় ৬৮টি কারাগারে ৯৯টি ভবনে সর্বমোট বুথ সংখ্যা হবে ৩৬৫টি। ইতোমধ্যেই অনুমোদিত কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান কারাগারগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। একারণে বন্দির সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত বুথের সংখ্যা পুনঃনির্ধারণ করা হবে। এছাড়াও ৬৮টি কারাগারের মধ্যে নতুন ৬৭টি কারাগারে এবং টাঙ্গাইল কারাগারের জন্য প্রয়োজনে নারী বন্দিদের জন্য আলাদা বুথের ব্যবস্থা করা হবে।
 
প্রকল্পের আওতায় তিনজন কর্মকর্তা এবং তিনজন কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনায় একাধিক ক্রয় পদ্ধতি এবং ২১ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৯টি বুথের ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে।  

এছাড়া বৈদেশিক শিক্ষা সফরের জন্য অস্ট্রেলিয়া-ব্রাজিল, কানাডা-আর্জেন্টিনার পরিবর্তে এশিয়ার দেশ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ খাতে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প পরিচালকের জন্য একটি জিপ গাড়ি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হবে। প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য দুটি মাইক্রোবাস কেনা হবে। ইলেকট্রিক ক্যাবল সুইচ সকেট, এক্সসরিজ ইত্যাদি কেনা হবে। টেলিফোন ব্যয়, বিদ্যুৎ বিল, পেট্রোল, ওয়েল, লুব্রিকেন্ট, প্রিন্টার ইত্যাদি কেনা হবে।

এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ডাটা কানেক্টিভিটি চার্জ, ডাটা সেন্টার কম্পোনেন্টস, ইনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড আপগ্রেডেশন অব সেন্টার বুথ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডেভলপমেন্ট অব ইন্টিগ্রেডেট বিলিং, আইপি ফোন, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সংগ্রহ করা হবে। বন্দিরা যাতে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হবে প্রকল্পের আওতায়।

সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. ওবায়দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কারাগারে স্বজন লিংক স্থাপন করতে যাচ্ছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের ফলে বন্দিরা স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। কথা বলার সময় আমাদের লোকজন সঙ্গে থাকবেন। কী ধরনের কথা বলছেন তা নজরদারি করা হবে। সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত কথা বলতে পারবেন বন্দিরা। উন্নত দেশের মতো এমন উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম।
  
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এমআইএস/আরকেআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।