ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘শেখ হাসিনারল্লাই আঁরা দোয়া গইরজ্জম’

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
‘শেখ হাসিনারল্লাই আঁরা দোয়া গইরজ্জম’ কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড় উজাড় করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: ‘বর্তমান হুকুমত (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা আঁরার মা-বাপ। শেখ হাসিনা আঁরারে আশ্রয় দিয়্যে, প্রশ্রয় দিয়্যে, আঁরার জান বাঁচাইয়ে, খেদমত গরের, আঁরা চাই এই সরকার আবার আঁইয়ুক। ভোডর আগে শেখ হাসিনারল্লাই, শেখ হাসিনার সরগারল্লাই আঁরা বেগ্গুনে দোয়া গইরজ্জ্যম।

(বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা,  আমাদের বাপ। শেখ হাসিনা আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন, আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, আমাদের অধ্যাবধি খাবার দিয়ে যাচ্ছে।

আমরা চাই বর্তমান সরকার আবার আসুক। নির্বাচনের আগে আমরা সবাই শেখ হাসিনার জন্য এবং শেখ হাসিনার সরকারের জন্য দোয়া করবো। ’

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় ও মানবিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে  এভাবেই শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহিম। তিনি ক্যাম্প-৪ এর হেড মাঝি।  

নিরাপদ আবাসন পেলে মিয়ানমারে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা।  ছবি: বাংলানিউজবাংলানিউজকে আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের (রোহিঙ্গা) সুখ-দুঃখ বুঝে গেছে। এই সরকার আমাদের জন্য জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছে। তাই এই সরকার ক্ষমতায় আসলেই আমাদের জন্য ভালো হবে। আমাদের নিজ দেশে নিরাপদে পাঠাতে পারবে। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে আমরা সবাই মিলে শেখ হাসিনার জন্য দোয়ার আয়োজন করবো।  

শুধু এই রোহিঙ্গা নেতা-ই নন, বাংলানিউজের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়েছে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে, তারা সবাই প্রায় একই কথা বলেছেন। পাশাপাশি তাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।  

কুতুপালং ডাবল ‘ও’ ব্লকের মাঝি মৌলভী কমর উদ্দিন বলেন, সব রোহিঙ্গারা চায় শেখ হাসিনার সরকার আবার আসুক। কিন্তু আমাদের তো ভোট দেওয়ার অধিকার নাই, কিন্তু আল্লাহ আছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবো।

রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ ধানের শীষের পক্ষে আছে কি-না জানতে চাইলে এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘একান্নবই (১৯৯১) সালে যারা এসেছে তারা কিছু কিছু ধানের শীষ সম্পর্কে জানে। বর্তমানে যারা আছে তারা ধানের শীষের ব্যাপারে কিছু জানে না, বোঝে না। সবাই বর্তমান শেখ হাসিনাকে চায়।  

কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন ক্যাম্প-৪ এর জি ব্লকের হেড মাঝি মো. বশির উল্লাহ বলেন, ইনশা আল্লাহ, এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে। কারণ শেখ হাসিনার প্রতি লাখ লাখ রোহিঙ্গার দোয়া আছে।  

কুতুপালং ডিডি হাব-২ এর মাঝি মো. জোরমুল্লুক জানান, এই সরকার আমাদের থাকতে দিয়েছে, আমাদের খাবার দিচ্ছে। এই সরকার আমাদের ভালোমন্দ সবকিছু বুঝে। তাই এই সরকারকেই আমরা চাই।

কিন্তু আপনারা তো ভোট দিতে পারবেন না, তাহলে কিভাবে সাপোর্ট করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের তো ভোট নাই, কিন্তু আমাদের মা শেখ হাসিনার জন্য আমরা রোহিঙ্গারা আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া চাই।
 
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।  ছবি: বাংলানিউজ গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। রাখাইনে তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় মগরা।  

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, তাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন, ফসলি জমি ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নির্বিচারে হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করেছে মিয়ানমার সৈন্যবাহিনী এবং স্থানীয় মগরা। নির্যাতন সইতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তারা।  

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে চালানো এ হত্যাযজ্ঞকে ‘জাতিগত নিধন’ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হন শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি।  

এদিকে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিজ বাসভূম রাখাইনে ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যেতে থাকে।  

শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবে রোহিঙ্গারা।  ছবি: বাংলানিউজএক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় মিয়ানমারের সরকার। দুই দেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হয়। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।  

যোগাযোগ করা হলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মো. আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, এসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে যাতে নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় এ কাজটি করবে।  

তিনি বলেন, কাউকে জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো হবে না। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যতদিন এই দেশে থাকবে ততদিন রোহিঙ্গাদের নানাবিধ মানবিক সেবার বিষয়টি সরকার দেখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
এসবি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।