ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ঐতিহ্য’র বিড়ম্বনায় ভোগান্তিতে পথচারীরা

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
‘ঐতিহ্য’র বিড়ম্বনায় ভোগান্তিতে পথচারীরা ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি/ ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: দিন বদলের পালায় ক্রমান্বয়ে আমাদের হাজার বছরের পুরোনো অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে ইট-কাঠ-পাথরের নগরী হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। এখানে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম যন্ত্রচালিত যানবাহন। যুগের পরিবর্তনে মোটরচালিত বাহনের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি।

ঘোড়ার গাড়ি এখন কেবলই শখের বাহন মাত্র। শুধু পুরান ঢাকাবাসীর কাছেই যেন রয়ে গেছে তার কদর।

পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ কেউ এখনো বদ্ধপরিকর।

তবে পুরান ঢাকার এই ঐতিহ্যের বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন অনেক পথচারীই। রাজধানীর নিউ সেক্রেটারিয়েট সড়কের পথিকেরা ঐতিহ্যের বিড়ম্বনায় মহা বিরক্ত।
ঘোড়ার খাবারের উচ্ছিষ্ট আর মল-মূত্রে নোংরা হচ্ছে সড়ক/ ছবি: সুমন শেখশুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) এ সড়কের আনন্দবাজার মোড় থেকে বঙ্গবাজার মোড় পর্যন্ত দেখা গেছে রাস্তার দুই পাশে সারি সারি ঘোড়া বেঁধে রাখা হয়েছে। এসব ঘোড়ার খাবারের উচ্ছিষ্ট এবং মল-মূত্র পচে সৃষ্ট দুর্গন্ধে সড়কে চলাচল প্রায় অসম্ভব। নিতান্তই বাধ্য না হলে সড়কটি এড়িয়ে চলেন সবাই।

মাসুদ করিম নামে এক পথচারী বাংলানিউজকে বলেন, ঘোড়ার মল-মূত্রে খুবই বাজে গন্ধ হয়। এ রাস্তায় সাধারণত আসি না। কিন্তু আজকে বাধ্য হয়ে একটা কাজে এসেছিলাম।

ক্ষুব্দ এ পথিক আরও বলেন, ঘোড়ার মালিকেরা এখানে ব্যবসা করেন। কিন্তু তারা যদি রাস্তাটা পরিষ্কার রাখেন তাহলে কারো কষ্ট হয় না। কিন্তু সেটা তারা করেন না।

সড়কটির এক দোকানি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গন্ধে আমরা দোকানে বসতে পারি না। মানুষ রিকশায় যায় আর গালি দেয়। কিন্তু ওরা পরিষ্কার করে না। আমরা কিছু বললে মারতে আসে। মাঝে মাঝে পুলিশ আসে। তখন তারা ঘোড়া নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে আবার আসে।
ঘোড়ার খাবারের উচ্ছিষ্ট আর মল-মূত্রে নোংরা হচ্ছে সড়ক/ ছবি: সুমন শেখঘোড়ার গাড়ির ব্যবসায়ীদের দাবি এ ব্যবসা তাদের বাব-দাদার কাছ থেকে পাওয়া। এটা ঢাকার ঐতিহ্য। এখনো বিভিন্ন বিবাহ, ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া চলে না। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় তারা এ ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে চান।

এ বিষয়ে কথা হয় ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসায়ী মানিক মিয়ার সাথে। তার তিনটি গাড়ি আর ছয়টা ঘোড়া আছে। এগুলো সবই রাস্তার উপরেই লালন-পালন করেন তিনি। তবে মানিক মিয়ার দাবি প্রতিদিন ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়।

কিন্তু এখন তো সাড়ে ১০টা বাজে এখনো পরিষ্কার করেননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক মিয়া বলেন, আজকে কর্মচারীরা আসতে দেরি করছে। তবে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়।

মানিক আরও বলেন, আমাদের বাব-দাদার ব্যবসা। আর শুধু যে ব্যবসা সেটাও না। এটা ঢাকার ঐতিহ্য। আজকেও যেমন হাইকোর্টের এক বিচারপতির মেয়ের বিয়েতে আমাদের গাড়ি যাবে। আমরা তো সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসায় করছি। এখন তারা যদি ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাটা আমাদের ব্যবহার করতে দেয় তাহলে আমরা সেখানে ঘর করে ঘোড়াগুলো রাখতে পারবো। তাতে রাস্তার মানুষের আর অসুবিধা হবে না। কিন্তু তারা আমাদের সেটা দিচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই এলাকায় ৯ জন ব্যবসায়ীর মোট ৩০টি ঘোড়া ও ১৫টি গাড়ি রয়েছে। এসব ঘোড়া ও গাড়ি সবই রাস্তার উপরে রাখা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর শফিক বাংলানিউজকে বলেন, আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে ওই এলাকায় আমরা একটি এসপিএস উদ্বোধন করবো। এরপর থেকে আর ময়লা আবর্জনা রাস্তায় থাকবে না। ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা ব্যবহারে তারা সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি চেয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এসআইজে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।