লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে গ্রিন লিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস রিফিলের সময় আবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলেই আবুল কালাম (২৬) ও পরে রুবেল হোসেন (২৮) নামে দুজন নিহত হয়েছেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ইসলাম মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে রুবেল জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের জমিদার হাট এলাকার শাহাবুদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই বাসের মালিক এবং চালক।
আর আবুল কালাম পৌর শহরের সাহাপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে। তিনি একজন রং মিস্ত্রি।
আহতরা হলেন- ওই ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী (নজেল ম্যান) আবুল হোসেন ও লক্ষ্মীপুরের শাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা নাইম।
তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাদের সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এর আগে দুই মাস আগেও একই ফিলিং স্টেশনে গ্যাস রিফিল করতে আসা আরেকটি বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়। একাধিকবার এমন দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, বাসের সিলিন্ডারগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, ভোর ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর-রামগতি রুটে চলাচলকারী ‘আল মদিনা পরিবহন’ নামের একটি বাস গ্যাস নিতে গ্রিন লিফ ফিলিং স্টেশনে আসে। ফিলিং স্টেশন থেকে বাসের সিলেন্ডারে গ্যাস দেওয়ার সময় বিকট শব্দে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই আবুল কালামের মৃত্যু হয়। এসময় আহত হন অন্তত তিনজন। তাদের মধ্যে থেকে আহত রুবেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে গেছেন স্বজনরা। নিহত আবুল কালামের মৃতদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, আল মদিনা নামের ওই বাসটি শহরের ঝুমুর এলাকায় রং এর কাজ শেষে ওই ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে আসে। এসময় রংমিস্ত্রি আবুল কালাম বাসেই ছিলেন। সেখানেই বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়।
তাদের অভিযোগ, সিলিন্ডারের মেয়াদ যাচাই-বাছাই না করেই গ্যাস রিফিল করা হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
তবে গ্রিন লিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আল আমিন দাবি করেন, যে দুই বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন জানান, হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় আনা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
একই ফিলিং স্টেশনে গত ১৪ অক্টোবর একটি বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়। এতে আহত হন নয়জন। তখনকার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি, এতে যদি কারও ক্রুটি পাওয়া যায়, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নেব।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রায় দুই মাস আগেও এখানে এমন ঘটনা ঘটেছে। তখন তিনজন মারা গেছেন। আমরা তখন তদন্ত করে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারের প্রমাণ পেয়েছি। আজকের ঘটনায়ও আমরা পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করব। কেউ দোষী হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি জেলা প্রশাসনের সমবেদনা ও সহযোগিতা থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
এসআই