ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদেশের পর গণমাধ্যমে কথা বলেছেন হারিছের মেয়ে সামিরা তানজীন।
২০২১ সালে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পট পরিবর্তনের পর হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা হাইকোর্টে রিট করেন। ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে দেহ তুলে ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন।
ওইদিন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে জানান, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের গোয়েন্দা বিভাগ নাটক রচনা করে তার বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছিল না। এটা নিয়ে যেন কখনো প্রশ্ন না ওঠে সেটা ডিটারমিন করার জন্য এ রিট করেন তিনি।
সামিরা সেদিন বলেন, আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে সন্তান হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। এখনো মানুষ জিজ্ঞেস করে তিনি সত্যিই কি মারা গেছেন? আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি।
সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদরাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয় আবুল হারিছ চৌধুরীকে। তার পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্ট করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর আবুল হারিছ চৌধুরীর নামে কেন ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে না ও তার নামে থাকা ইন্টারপোল রেড নোটিশ কেন প্রত্যাহার করা হবে না, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিয়ে কেন কবরস্থ করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করা হয়।
আদেশে অনুসারে গত ১৬ অক্টোবর কবর থেকে তোলা হয় হারিছের দেহ। দেহাবশেষ উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা। হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
পরে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিএনএ পরীক্ষায় অজ্ঞাত মৃতদেহের দাঁত হতে একজন পুরুষের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত মৃতদেহ, সামিরা তানজীন ওরফে সামিরা তানজীন চৌধুরীর জৈবিক পিতা।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইছা।
মাহদীন চৌধুরী জানান, হারিছ চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী সিলেটের কানাইঘাটের সড়কের বাজারের রামধনের মাটি গ্রামের শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল অরফানেজের কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদায় কবরস্থ করতে আদালত অনুমতি দিয়েছেন।
সামিরা তানজীন চৌধুরী জানান, আমার বুকে আমার বাবা মারা গেছে। এবং সে সত্যটা বেরিয়ে এলো। আমার আব্বুর দেহাবশেষ এখন ঢাকা মেডিকেলে। সেখান থেকে আব্বুকে দাফন করতে সিলেট নেওয়া হবে। একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, নমুনা নিশ্চিতের পর আদালত হারিছ চৌধুরীর মরদেহ সিলেটে দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আদালতের আদেশ পালন করবে। আর এখনো রুল শুনানি শেষ হয়নি। সেখানে ইন্টারপোলের বিষয় আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
ইএস/এমজে