ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: মৎস্য উপদেষ্টা 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: মৎস্য উপদেষ্টা 

ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইলিশ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার।  

বুধবার (২৭ নভেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে ১০০ দিন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীরা যেসব দেশে আছেন সেখানে স্বল্প পরিসরে কিছু ইলিশ পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে। প্রবাসীরা ইলিশ খাবে এটা তাদের অধিকার। মধ্যপ্রাচ্যেসহ ইউরোপ আমেরিকায় আমাদের প্রবাসীরা আছে। এরমধ্যে ইউরোপ, আমেরিকায় যেসব এলাকায় আমাদের বাঙালিরা আছে সেখানে কিছু ইলিশ যায়। এখন আমরা মধ্যপ্রাচ্যে ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নেব।  

তিনি বলেন, এ বছর ইলিশ মাছে আহরণ গত বছরের তুলনায় কম ছিল। তার একটি অন্যতম কারণ ছিল সময়ে বৃষ্টি না হওয়া। তাছাড়া ভারত থেকে অবৈধভাবে ট্রলার ফিশিং এর মাধ্যমে ইলিশ আহরণ করা হয় বলে অভিযোগ আছে। তবে এ বছর আমাদের নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং নৌ পুলিশ এ বিষয়ে সতর্ক অভিযান চালিয়েছে এবং বেশ কিছু ভারতীয় ট্রলার এবং জেলে আটক করতে পেরেছে। তবে বাজারে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ১৫০০ টাকা থাকায় এখনো সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ইলিশের দামের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট এবং মধ্যস্বত্বভোগী এবং দাদন ব্যবসাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে।

এবারের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল হয়েছে জানিয়ে ফরিদা আক্তার বলেন, ইলিশের ডিম ফুটার হার ছিল গড়ে ৫৪ শতাংশ কোথাও ৭০শতাংশ এরও বেশি হয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এর আওতায় বিগত তিন মাসের (আগস্ট- অক্টোবর/২০২৪) মাসে ১ হাজার ৪২৪টি ইলিশ আহরণকারী জেলে পরিবারের মাঝে ১ হাজার ৪২৪টি বিকল্প আয়ের উপকরণ (এআইজি) বিতরণ এবং ১ হাজার ৮২৫ জন সুফলভোগী ইলিশ জেলেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের ডিম ছাড়া নির্বিঘ্ন করতে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ১৩ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয়, বাজারজাতকরণ বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

'মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪' এর আওতায় মোট ২ হাজার ১৬৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৯ হাজার ৮০২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সকল মোবাইল কোর্ট ও অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৪ মে.টন ইলিশ জব্দ, ৬১১.৬৩৮ লাখ মিটার জাল আটক, ৩ হাজার ২৫টি মামলা দায়ের, ৭৫.২৭৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ২ হাজার ৯ জনকে জেল প্রদান করা হয়েছে।

অভিযান চলাকালীন জেলেদের মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য এবছর মোট ১৪ হাজার ১৬৪.১২৫ টন চাল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৫টি জেলে পরিবারের মাঝে বরাদ্দ করা হয়েছে যার মধ্যে ১৩ হাজার ৯৬২.১ টন চাল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬০টি জেলে পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে (বিতরণের হার ৯৯%)। আগামীতে ৪০ কেজি মাসিক ভিজিএফ এর পরিবর্তে ৫০ কেজি এবং ২৫ কেজি এর পরিবর্তে ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং সকল জেলে যাতে সরকারের সুবিধা পেতে পারে তার জন্য জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইলিশ রক্ষার জন্য অবৈধ জাল আটক এবং কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২৪.৯০ লাখ মিটার এবং ৬৬০০ পিস রেইল আটক করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত আছে। এবং কারখানাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে গত ১০ বছর ধরে। তবুও দুর্গা পুজার সময় ৩৯৫০ মেট্রিক টন রপ্তানীর অনুমতি দেয়া হলেও ভারতে গেছে মাত্র ৬৬৫ মেট্রিক টন।

উল্লেখ্য, মৎস্য খাত জিডিপিতে ২.৪৩ শতাংশ এবং কৃষি জিডিপিতে ২২ শতাংশ অবদান রাখে। রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয়ের ১ শতাংশ অর্জন করছে। নদী, বিল, হাওরসহ শত শত জলাশয়ের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ আহরনের সাথে জড়িয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ। মাছের উৎপাদন/আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি মৎস্যজীবিদের জীবিকা রক্ষার কাজ করা হয়েছে। মৎস্য খাতের কাজের মধ্যে ইলিশ আহরণ সংক্রান্ত কাজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭,২০২৪
জিসিজি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।