ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আন্দোলনে হামলা চালায় পুলিশ-যুবলীগ, পঙ্গু হয়েছেন রুবেল

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
আন্দোলনে হামলা চালায় পুলিশ-যুবলীগ, পঙ্গু হয়েছেন রুবেল

খুলনা: জুলাই-আগস্ট বিপ্লব। এ দুটি মাস মনে এলেই শিওরে ওঠেন ভুক্তভোগীরা।

মনের মধ্যে ভর করে অজানা ভয়; তাড়িয়ে বেড়ায় রক্ত, গুলির শব্দ, লাশ, জখমের সেই চিত্রগুলো।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ভুক্তভোগীদের একজন খুলনার রুবেল খান (৫৩)। আন্দোলনে পুলিশ-যুবলীগের হামলায় আহত হন। এখন তিনি পঙ্গু। নগরের ডাল মিল মোড়ের বাসিন্দার অর্থের অভাব অনেক। চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। সংসারও চালাতে পারছেন না।

রুবেল খান ময়মনসিংহ মাস্টার বাড়ি পপুলার হাসপাতালে মার্কেটিং ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতেন। গত ৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হন। এখন তার চাকরিটিও নেই। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন রুবেল। পঙ্গু হয়ে পড়ায় ঘরের বাইরেও যেতে পারেন না।

রুবেলের ঘরবন্দী জীবন ও সংসারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার পরিবারের।

ঘটনার দিন সম্পর্কে রুবেল খান বাংলানিউজকে বলেন, আমি ময়মনসিংহ মাস্টার বাড়ি পপুলার হাসপাতালে মার্কেটিং ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতাম। ৩০ জুলাই আনুমানিক সকাল নয়টা থেকে দশটার ভেতর অফিসের কাজে মাস্টারবাড়ি থেকে রওনা দেই। পথে যুবলীগের নিপুন বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আমি ও কয়েকজন শ্রমিক ভাইদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। দিগ্বিদিক ছোটার সময় একটা অটো রিকশা এসে আমার পায়ের ওপর উঠে যায়। ঘটনাস্থলে ওই বাহনের চালকের মৃত্যু হয়। আমার বাঁ পা ভেঙে চার টুকরা হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, পাশে হয়ত কোনো শ্রমিক বা ছাত্র ছিল; তার ডান পা প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে পাই। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমি অ্যাম্বুলেন্স করে খুলনায় চলে আসি। এখন আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছি।

পঙ্গু বাবার সন্তান রুথেন খান বলেন, বাবার এমন পরিস্থিতিতে আমরা খুব কষ্টে আছি। পরিবারে আমরা ৪ সদস্য। জুলাই-আগস্টের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে অনেক মানুষ ভুক্তভোগী। আমার বাবাও ভুক্তভোগী। এখন তার চাকরি নেই। আমার বোন সরকারি করোনেশন বিদ্যালয়ে পড়ে। আমি বিএল কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। কোনোরকমে দিন পার করছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, বাবার পা ঠিক হবে কিনা সেটা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। ডাক্তার বলেছেন বছর খানেক লাগতে পারে। নতুন বছর আসছে। কীভাবে বোন ও আমার লেখাপড়ার খরচ, সংসারের খরচ ও বাবার চিকিৎসা করাবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি। সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো আমাদের পরিবারটি বেঁচে যাবে।

ডাল মিল এলাকার বি কে রায় ক্রস রোডের বাসায় আহত রুবেল খানের খোঁজ নিতে এসেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক সাজেদুল ইসলাম বাপ্পী। তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো আন্দোলনে যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা করা। আমরা আহত রুবেল চাচার চিকিৎসার জন্য সিভিল সার্জন অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাব। তার চিকিৎসার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তা আমরা করার চেষ্টা করবো।

বাপ্পী আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন বা শারীরিকভাবে এমন অবস্থায় আছেন যে আদৌ কাজকর্মে ফিরতে পারবেন না বা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন না। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের চিকিৎসা নিয়ে পুনর্বাসন করা হোক।

খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আহত রুবেল খানের ঘটনাটি আমার জানা নেই। আপনার (সাংবাদিক) মাধ্যমে জানলাম। আমি খুব দ্রুত রুবেল ও তার পরিবারের খোঁজ নিতে তাদের বাড়ি যাবো।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহত রুবেল খানের ঘটনাটি ময়মনসিংহের। এটা আমার জানা ছিল না। তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কি কি করা যায়, সেগুলো দেখব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
এমআরএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।