ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেয়ালে দেয়ালে লেখা ‘এখানে জীবনের মূল্য ১০ হাজার টাকা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৪
দেয়ালে দেয়ালে লেখা ‘এখানে জীবনের মূল্য ১০ হাজার টাকা’

ঢাকা: ‘এখানে জীবনের মূল্য ১০ হাজার টাকা, চিকিৎসকেরা কসাই, ভুল চিকিৎসা করা হয়, সাবধান। ’ এসব কথা লেখা ছিল একদল কলেজ শিক্ষার্থীর সাঁটানো পোস্টারে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি হাসপাতাল অবরোধ করে দেয়ালে দেয়ালে এসব পোস্টার সাঁটিয়ে দেন ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ওই কলেজ থেকে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার (১৮) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে মারা যান। তবে সেই কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অভিজিৎ মারা যান ‘ভুল’ চিকিৎসায়। তারা এ ‘হত্যা’র বিচার চেয়েই বুধবার হাসপাতাল অবরোধ করেন।

এর আগে ট্রাকে করে হাসপাতালের সামনে আসেন ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ন্যাশনাল হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা হাসপাতালের দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন লেখা সংবলিত পোস্টার সাঁটিয়ে দেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিজিৎ গত ১৭ নভেম্বর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯ নভেম্বর তিনি সেখানেই মারা যান। অভিজিৎ হালদারের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার তারুলিয়া সামন্তসার গ্রামে। বাবার নাম নগেন হালদার। মা মণিমালা। অভিজিৎ থাকতেন মাতুয়াইলে একটি ছাত্র হোস্টেলে।

হাসপাতাল অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির সময় অভিজিতের রক্তের প্লাটিলেট ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার। একপর্যায়ে তার খিঁচুনি দেখা দিলে চিকিৎসকেরা মাদকাসক্ত বলে তাকে হাত-পা বেঁধে রাখেন। পরে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয় এবং পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, ভুল চিকিৎসা দেওয়ার কারণেই অভিজিতের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিচারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। আর এসব দাবি নিয়েই কলেজ থেকে ট্রাকে করে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে আসেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড।

অভিজিতের মৃত্যুর পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল থেকে তার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দিতে চাওয়া হয়েছিল, এমন অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা। আর সে কারণেই তারা হাসপাতালের ভেতরের দেয়ালে লিখে দেন ‘কসাই ডাক্তার নিপাত যাক। এ হাসপাতালে জীবনের মূল্য ১০ হাজার টাকা। ’

অভিজিতের মৃত্যুর পর তার এক বন্ধু ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে জানানো হয়, অভিজিৎ আর নেই। এরপর বন্ধুরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে আইসিইউতে প্রবেশ করেন। কিন্তু চিকিৎসক কথা বলেননি। তাদের মধ্য থেকে দুজনকে কথা বলার আশ্বাস দেওয়া হলেও চিকিৎসক আর কথা বলেননি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে সূত্রাপুর থানার পুলিশ আসে। তারা সাহায্য করবেন বলে অভিজিতের বন্ধুদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হয়ে তারা বিপরীত কথা বলে। পরে অভিজিতের বন্ধুদের বলা হয়, হাসপাতালের বিল মওকুফ। উল্টো ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। একেবারে শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিজিতের বন্ধুদের পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাসপাতাল ছাড়তে বলেন।

বুধবার রাতে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ডেমরা থেকে ট্রাকভর্তি করে ছাত্ররা হঠাৎ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে এসে অবরোধ করেন। আনুমানিক প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধের কারণে কোনো রোগী হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারেননি বা হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী বেরোতে পারেননি। অনেক রোগী ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে সাহায্য চান।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন অভিজিৎ নামে এক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ওই রোগী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ছিলেন। পরে তার প্রেসার ফল করে। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।

তিনি বলেন, উপস্থিত ছাত্রদের চিকিৎসক-পুলিশ সবাই বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা বুঝতে চাননি। চিকিৎসকরা তাদের বলেন, এ নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হবে। কিন্তু তারা মানতে চাননি। একপর্যায়ে অবরোধের কারণে এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে এলাকাবাসী ও সড়কে যানজটে আটকে থাকা লোকজনই অধৈর্য হয়ে ছাত্রদের সরিয়ে দেয়। অভিজিতের মৃত্যুর বিষয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, অভিজিৎ ডেঙ্গু নিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেখানেই তার পালস-প্রেসার ফল করে। পরে দ্রুত তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে এসেছিলেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। কমিটি শনিবার থেকে তদন্ত শুরু করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৪

এজেডএস/আরএইচ
 


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।