ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেলের জায়গায় সাবেক মন্ত্রীপুত্রের ‘ব্যক্তিগত পার্ক’, গুড়িয়ে দিল কর্তৃপক্ষ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
রেলের জায়গায় সাবেক মন্ত্রীপুত্রের ‘ব্যক্তিগত পার্ক’, গুড়িয়ে দিল কর্তৃপক্ষ

লালমনিরহাট: আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের রেলের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত পার্ক গুড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।  

সোমবার (১৮ নভেম্বর) লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পরিচালিত উচ্ছেদ টিম পার্কটি গুড়িয়ে দিয়েছেন।

 

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বসবাস করা ভূমিহীন মানুষদের সরিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত পার্কটি গড়ে তুলেন মন্ত্রীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাকিবুজ্জামান আহমেদ।  

জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকায় পার্কটি গড়ে তুলেন তিনি। পাশেই করা হয় আওয়ামী লীগ অফিস। সরকারি অর্থে গড়ে তোলা পার্কটিতে শুধু মন্ত্রীর ছেলে নিজস্ব অবকাশ যাপনের জন্যই করা হয়। সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল।  

রেলওয়ে জানায়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেল রুটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশে উন্মুক্ত জায়গাটিতে এলাকার লোকজন অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। পাশে রেল লাইনের ধারে অর্ধশত ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছিলেন। দুই বছর আগে এসব দোকান ও বসতি উচ্ছেদ করে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ।  

স্থানীয়রা জানায়, সাবেক মন্ত্রীর ছেলে হঠাৎ একদিন জায়গাটি দখলে নিয়ে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পরে জায়গাটির চারদিকে ইটের প্রাচীর দেওয়া হয়। মূল ফটকের ওপর বসানো হয় কংক্রিটের নৌকা। শুধু তাই নয়, এ পাশেই ব্যক্তিগত অফিস গড়ে তোলেন তিনি। আর পুকুরের পাশেই তার চাচা সামছুজ্জামান ভুট্টু একটি জাগায় দখল করে গুদাম ঘর নির্মাণ করে আকিজ কোম্পানির কাছে ভাড়া দেন। যার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা নেন মন্ত্রীর ভাই সামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু।  

জানা যায়, নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি বাদ পড়েন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মন্ত্রীর ছেলে বলেই জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদ বাগিয়ে নেন রাকিবুজ্জামান আহমেদ। এরপর প্রথম বারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।  

গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ ও ছেলে  রাকিবুজ্জামানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য পলাতক রয়েছেন। শুধু মন্ত্রীর একজন ভাই সামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু রংপুরের ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

মন্ত্রীর ছেলের ব্যক্তিগত পার্কে উচ্ছেদের খবরে আনন্দ উল্লাস করে স্থানীয়রা। তবে পার্কটি পাশে থাকা বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা হয়নি। যদিও এসব বাসিন্দা উচ্ছেদের ভয়ে অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে রেল বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে উচ্ছেদ না করার আবেদন জানান।  

উচ্ছেদ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী কমান্ড্যান্ট আতাউল গণি ওসমানীসহ রেল পুলিশের কর্মকর্তারা।  

রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি জমির লাইসেন্স নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে স্থাপনাগুলো তৈরি করেছিলেন। কয়েক দফায় তাদেরকে চিঠি পাঠানো হলেও ক্ষমতার প্রভাবে তারা তোয়াক্কা করেনি। তবে পটপরিবর্তন হওয়ায় আমরা মন্ত্রীর ছেলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।