ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পলিথিনে নিষেধাজ্ঞা: প্রচারণায় জোর দেওয়ার তাগিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৪
পলিথিনে নিষেধাজ্ঞা: প্রচারণায় জোর দেওয়ার তাগিদ কাঁচাবাজারে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। রোববারের (৩ নভেম্বর) ছবি। - বাংলানিউজ

ঢাকা: একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় এমন পলিথিন ১ নভেম্বর থেকে ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত রাজধানীর প্রায় সব কাঁচাবাজারে সেভাবে মানা হচ্ছে না।

 

অনেকেই বিষয়টি এখনও জানেন না দাবি করে বাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের প্রচারণায় জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।  
 
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর  মতিঝিল, মিরপুর, সেগুন বাগিচার  বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, নভেম্বরের ৩ তারিখে এসেও এসব বাজারে পণ্য পরিবহনে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। পলিথিনে সবজি ও মাছ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও কথা না বাড়িয়ে প্রকাশ্যেই বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন।

জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, পলিথিনে বিক্রি করব না তো কিসে বিক্রি করব? বিকল্প কি?

কেউ কেউ বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তারা অবগত নন। যারা জানেন তারা গোপনে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার করছেন।  

এক কথায় বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিতেই চলছে পলিথিনের ব্যবহার।

পলিথিন ব্যবহারে সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানেন না মতিঝিল এজিবি কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আনিসুর রহমান। প্রকাশ্যেই পলিথিনে পণ্য ভরে ক্রেতাকে দিচ্ছেন তিনি।  

পলিথিন ব্যবহার নিষেধ জানলে পলিথিনে পণ্য বিক্রি করতেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি এই বিক্রেতা।

তবে পলিথিন নিষিদ্ধ জানেন সেই দোকানের ক্রেতা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ এটা আমি জানি। কিন্তু পলিথিনে জিনিসপত্র না নিয়ে কিসে করে নেব? কাগজের ঠোঙায় পণ্য নিলে একে তো এর দাম বেশি, তারপর আবার ঠোঙার ওজনে পণ্য কমে যাবে। পলিথিনের ব্যবহার না করলে এর বিকল্প কি ব্যবহার করব? সরকারকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিষয়টির প্রচার বাড়াতে হবে।   

মতিঝিল দিলকুশার মোহাম্মদ মেহেদি হাসানও জানেন না পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি। ফুটপাতে চা, বিস্কুট, রুটিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি।  

নিষিদ্ধ পলিথিন কেন ব্যবহার করছেন প্রশ্নে মেহেদি হাসতে হাসতে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েন, পলিথিনে বিস্কুট, কলা দিতে না পারলে কিসে দেব? খালি হাতে আপনি নেবেন? 

বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে বিক্রেতাদের থেকে তথ্য নিয়ে জানা যায়, কোনো ক্রেতাই নিজের থেকে পলিথিনে পণ্য দেওয়ায় আপত্তি জানাচ্ছেন না। বেশিরভাগ ক্রেতাই বাজার করতে বাসায় থেকে ব্যাগ নিয়ে আসেন না, তারা পলিথিনে করেই বাজার নিয়ে যান বাসায়। দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতাই এই ধরনের। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ক্রেতা পলিথিনে পণ্য না দিলে দোকানদারকে উল্টো ধমক দেন বা তার দোকান থেকে পণ্য কেনেন না।  

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে সবজিবিক্রেতা মো. রানা বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসা করতে হলে পলিথিন দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে আমিও দেখি কেউ ব্যাগ নিয়ে আসে কি না। ব্যাগ নিয়ে এলে আর পলিথিন দিই না।  

মিরপুরের কাজীপাড়ার জনৈক ক্রেতা ব্যাগ নিয়ে বাজারে এসেছেন। সবজি কিনবেন। নাম বলতে চাইলেন না। বলেন, আমি তো ব্যাগ নিয়ে এসেছি। ওরা একেকটি আইটেমের সবজি দেওয়ার পর অজান্তেই পলিথিনে পুরে তারপর আমার ব্যাগে দেয়। সিঙ্গেল টাইম ব্যবহার পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে তারা বুঝতে চায় না। তারা পলিথিন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

এদিকে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর গত এক মাসে পলিথিনের ধরন বদলে গেছে। হাতে ঝুলিয়ে নেওয়ার বদলে হাতল ছাড়া পলিথিন বাজারে এসেছে। অধিকাংশ বাজারে বিক্রিও হচ্ছে কোনোরকম রাখঢাক ছাড়াই। সবজি, মাছ, ফাস্ট ফুড কিনলে সরাসরি পলিথিনের ব্যাগে করে নিয়ে দিচ্ছে।  

উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চলবে। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। সরকারের এই নির্দেশ যারা অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিদ্ধান্ত মেনে দেশের সুপার শপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। পলিথিনের বদলে কাগজের ঠোঙা, পাট ও কাপড়ের ব্যাগে বিক্রি হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৪
জেডএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।