ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে: ইলিয়াস কাঞ্চন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে: ইলিয়াস কাঞ্চন কথা বলছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

খুলনা: নিরাপদ সড়ক চাইর (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। ৫ আগস্টের পর যখন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের মধ্যে সেই স্পিরিট দেখা গেছে।

তারুণ্যের এই স্পিরিটের মাধ্যমে সবকিছুই সম্ভব।  

তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় শুধু সচেতন হলেই চলবে না, আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। এজন্য সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সড়কে চলাচল করতে হবে।

নিরাপদ সড়ক চাইর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) সুধী সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

নিসচার খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে খুবির আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এ সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম।

সভাপতির বক্তব্যের শুরুতে তিনি শহীদ মীর মুগ্ধ-আবু সাঈদসহ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সব শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।  

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের আত্মত্যাগে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। শিক্ষার্থীরা এখন দেশ সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা দেখিয়েছে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়, কিভাবে একটি দেশকে নতুন করে সাজানো যায়। তাদের মাধ্যমেই নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আরও জোরদার হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি শুরু থেকে নিয়মিত এ সংগঠনকে পরিচালিত করেছেন। এখন দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে আছে। তার অবর্তমানেও এই সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিরাপদ সড়ক চাইকে শুধু সংগঠনে না রেখে এটিকে ইনস্টিটিউট, কেন্দ্র কিংবা কমিশনে রূপ দেওয়া উচিত। এটি করতে পারলে এখান থেকে চালকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে গেলে আগে নিরাপদ সড়কের সনদপত্র নিতে হবে, সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এমন বিধান তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে এ ধরনের ইনস্টিটিউট, কেন্দ্র কিংবা কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রিও দেওয়া যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা সড়কের আইন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানবে এবং পরবর্তীতে তারা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন না মানার নেতিবাচক দিকগুলো জানাতে পারবে বলে আমি মনে করি।

সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তার সহধর্মিণী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর নিসচার পথচলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকায় বাসচাপায় দুইজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার প্রতিবাদে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। তখন এই আন্দোলন আরও জোরদার হয়। আমার বিশ্বাস ছিল, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব। ওই সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। যা দেশবাসীর হৃদয়ে নাড়া দেয়। পরবর্তীতে সরকার ২২ অক্টোবর ‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।

নিসচা খুলনা জেলা শাখার সভাপতি মো. তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিসচার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. লিটন এরশাদ। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন নিসচার মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নেতা মো. লিয়াকত হোসেন, খন্দকার সাজেদুল ইসলাম, বাবু কুমার রায়, নারী নেত্রী শামীমা সুলতানা শিলু, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নাঈম, নির্ঝর, আজাদ ও অন্তিক। বক্তারা খুলনা শহরের যানজট নিরসনের ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান এবং সঠিকভাবে তদারকির আহ্বান জানান।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সহধর্মিণী জাহানারা কাঞ্চনসহ বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।  

অনুষ্ঠানে অতিথিরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিসচার পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে নিসচা খুলনা জেলা শাখার সদস্যরা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন নৈয়ায়িকের সদস্যরা, আমন্ত্রিত অতিথি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে পরিবহন চালকদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।  

নিসচার খুলনা জেলা শাখা প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।  

প্রধান অতিথি ছিলেন নিসচার চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, বিআরটিএর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান, নিসচার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ, মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।

খুলনার এ কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে চলমান নিসচার মাসব্যাপী কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।