ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভেদরগঞ্জে নদীর ৩০ পয়েন্টে অবাধে বালু উত্তোলন, হুমকিতে শতাধিক বাড়িঘর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
ভেদরগঞ্জে নদীর ৩০ পয়েন্টে অবাধে বালু উত্তোলন, হুমকিতে শতাধিক বাড়িঘর

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কীর্তিনাশা ও হোগলা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এ কারণে হুমকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ।

 

এছাড়াও কৃষিজমি থেকে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ।

সরেজমিনে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কীর্তিনাশা ও হোগলা নদীর তীরে প্রায় ৩০টি পয়েন্ট থেকে ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাড়া রামভদ্রপুর ইউনিয়ন ডলির মার খামার, চরসেনসাস ইউনিয়নের নতুন বালার বাজার, ডিএমখালি ইউনিয়নের হকপুর, আরশি নগর ইউনিয়নের ফেলুরচর বাজার, ছয়গাও ইউনিয়নের আনন্দ বাজার, টেকের বাজার, চরভাগা ইউনিয়নের ছুরিরচরসহ প্রায় ৩০টি পয়েন্টে রাতদিন সমানতালে অবৈধভাবে নদী ও কৃষিজমি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। নদী তীরবর্তী ড্রেজার প্রতি সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিতে হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এবং কৃষিজমি কাটার জন্য গুনতে হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে হারুন পাটোয়ারী নামে এক ড্রেজার ব্যবসায়ী বলেন, আমি ও মিজান সিকদার এই দুটি ড্রেজার পরিচালনা করি। প্রশাসনকে ম্যানেজ না করে এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পরই মৌখিকভাবে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ করে দেন। মাটি ও বালু মহলের চাঁদার টাকা নিচ থেকে ওপর মহল সবখানে পৌঁছানোর পরে এ ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।

বালার বাজার এলাকার বাসিন্দা আমেনা আক্তার বলেন, সব সময় নদীর নিচু এলাকা দিয়েই পানির প্রবাহ বইতে থাকে। তাই বর্ষার সময় পানির প্রবল স্রোতে নদীর পাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। ভাঙন শুরু হলে আশপাশের গ্রামগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ফেলুরচর এলাকার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে বর্ষা এলেই নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। তখন আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। স্থানীয় হারুন পাটোয়ারী ও মিজান সিকদার প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে। ভয়ে সাধারণ লোকজন তাদের কিছুই বলতে সাহস পায় না।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান শিপন বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে যেভাবে নদী থেকে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এসব বন্ধে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের চেষ্টা বা আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। অবৈধ ড্রেজার বন্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। যেখানে অভিযোগ পাচ্ছি ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।