ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জয়পুরহাটে ৫ বছরেও চালু হয়নি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
জয়পুরহাটে ৫ বছরেও চালু হয়নি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার

জয়পুরহাট: নির্মাণের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলে এখনও চালু হয়নি জয়পুরহাট পৌরসভার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল  ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার।  

জয়পুরহাট পৌর শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে আধুনিক পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটি চালু না হওয়ায় পৌর সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

তদন্ত করে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটি চালুর দাবি জানান এলাকাবাসী।  

শহরের ময়লা আবর্জনাগুলো শহর থেকে তুলে পাহারপুর রোডের খনজনপুর এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে পৌরসভার ভাগাড়ে ফেলা হয়। এতে ব্যাপক দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণ হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি হচ্ছে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সমস্যা সমাধানে হিচমী-হিলি বাইপাস সড়কের কড়ই কাদিরপুর এলাকায় স্থায়ী নির্মিত পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর আশ্বাস পৌর সংশ্লিষ্টদের।  

জানা গেছে, তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ সেক্টর প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাট পৌরসভার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের কাজ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট  শুরু হয়। এর আগে ৪.৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮২ হাজার ৯২২ টাকায়। এরপর ৫ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ১শ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নির্মাণ সম্পন্ন করার পর পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটি বুঝে নেয় পৌরসভা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের পর থেকে এই পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটির কার্যক্রম দৃশ্যমান দেখতে পাননি এলাকাবাসী। শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা তুলে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটিতে না ফেলে ফেলা হয় পাহাড়পুর রোডের খনজনপুর এলাকায়।

সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তাই তারা দ্রুত পরিশোধনাগারটি চালু করে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত শহর গড়ার দাবি জানান।

পাহাড়পুর রোডের পৌরসভার খনজনপুর ময়লার ভাগাড় এলাকার পথচারী মাহবুব হাসান, মোস্তাকিম, রাজু আহম্মেদসহ অনেকেই বলেন, এই রোড দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়পুরে পর্যটকসহ নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকার যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে। কিন্তু যাওয়া আসার সময় যে দুর্গন্ধ তাতে দম বন্ধ হয়ে যায়।  

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল, মারুফা আক্তার, মর্জিনাসহ অনেকে বলেন, এই ময়লার ভাগাড়ের কারণে আমাদের চরম সমস্যা। প্রায় ২০ বছর ধরে শহরের সব ময়লা আবর্জনা এই ভাগাড়ে ফেলা হয়। দুর্গন্ধে আমাদের বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ছোট বাচ্চাদের আরও সমস্যা, আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। অথচ কয়েক বছর আগে কাদিরপুরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার করে ফেলে রাখা হয়েছে।  

কড়ই কাদিরপুর এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান, আনোয়ার সাদাত, মনোয়ার হোসেন, আব্দুল মুমিন বলেন, পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করার পর ৫-৬ বছর হলো পড়ে আছে। এখানকার কোনো কাজ আমরা দৃশ্যমান দেখিনি। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলে রাখা হয়েছে। পৌরসভার গাফিলতির কারণে এটি চালু হয়নি। পরিশোধনাগারটি চালু হলে এলাকা উন্নত হবে, কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অবশ্যই এটি তদন্ত করা দরকার কেন চালু হলো না।  

জয়পুরহাট পৌরসভার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী ফারুক হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের শুরু থেকে আমি আছি। কাজ শেষ হয়েছে ৫ বছর আগে। কিন্তু কবে এটা চালু হবে, আমি বলতে পারবো না। এটা পৌরসভার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেন, আমরা সে ভাবেই চলি।  

জয়পুরহাট পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মিজানুর রহমান বলেন, এখানে একটি কার্যক্রম চালু আছে। আর শহরের যে বর্জ্য সরবরাহ করার পর সেখানে ফেলা হয় না। কারণ সেখানে বিভিন্ন বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক বা অন্যান্য আবর্জনাগুলো বাছাইয়ের জন্য প্রযুক্তি নেই। এ কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি।  

জয়পুরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা বলেন, জয়পুরহাট পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা খনজনপুর এলাকার রাস্তার পাশে ফেলা হয়। এতে দুর্গন্ধে সাধারণ জনগণ রোগে আক্রান্ত হয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। এই ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ীভাবে হিচমী-কাদিরপুর এলাকায় আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করা হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি। বিগত সরকারের আমলে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা কেন চালু করার পদক্ষেপ নেননি? এখন নতুন প্রশাসক দায়িত্বে রয়েছেন, তার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ে কীভাবে পরিশোধনাগারটি চালু করা যায়, সে চেষ্টা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।