ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধ্বংসযজ্ঞকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৪
ধ্বংসযজ্ঞকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে: শেখ হাসিনা

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে মেট্রোরেলের স্টেশনসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (জুলাই ২৫) সকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে, দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘যেগুলো (প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা) মানুষের সেবা দেয়, মানুষের জীবন যাত্রা সহজ করে, মানুষের জীবনকে উন্নত করে, ঠিক সেগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া কী ধরনের মানসিকতা!’

মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে ধ্বংসের চিত্র দেখলাম, এটা বিশ্বাস করা যায় না এই দেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু সেই কাজই করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল নির্মাণকাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আজকে চোখে পানি পড়ছে, এটা (ক্ষয়ক্ষতি) দেখে যে, কীভাবে একটা দানবিক কর্মকাণ্ড এদেশে হলো? কেন করল?’

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলাকারীদের বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আঘাত করল, মেট্রোরেল এভাবে ভাঙচুর করল। প্রায় দুই লক্ষ, আড়াই লক্ষ মানুষ চলাচল করতেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে। এদেশের মানুষ কত খুশি ছিল। তাদের সব আনন্দ যারা নষ্ট করল, আরামে চলাফেরা করতে পারতো সেই চলাফেরার পথ যারা রুদ্ধ করে দিল তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ’

মেট্রোস্টেশন ভাঙচুরের ঘটনায় জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়ব? শুধু আমরা সরকার চড়ব? শুধু আমাদের মন্ত্রীরা চড়বে না সাধারণ জনগণ চড়বে? সেটাই আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা কারা পাচ্ছে। এদেশের মানুষ, সাধারণ জনগণ পাচ্ছে। তাহলে এর ওপর এত ক্ষোভ কেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষতি কার হলো? আজকে মেট্রোরেল বন্ধ, এই স্টেশন যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ আধুনিক, এটা কত দিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কিন্তু কষ্ট পাবে তো মানুষ, দেশের মানুষ কষ্ট পাবে, এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন। ’

তিনি বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। দীর্ঘ সময় বসে ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া। আপনাদের কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম। আমি আপনাদেরই বলব, যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে, দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এর বিচার করতে হবে। আমি তাদের (জনগণ) কাছেই বিচার চাই। ’

বিগত বছরগুলোতে সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে টানা চার বারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি, করেছি তো, কেউ তো অস্বীকার করতে পারবে না। ১৫ বছর আগে ২০০৮ পর্যন্ত এদেশের কী অবস্থা ছিল? একবার চিন্তা করে দেখেন। আজকে বাংলাদেশ উচ্চ ধাপে উঠে গেছে। তো সেখান থেকে নামাতে হবে। কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই। জানি না এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে আমি যেভাবে দেশটাকে গড়ে তুলেছি। কী না করেছি মানুষের জন্য, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, যোগাযোগের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ, সব ক্ষেত্রে আমাদের যে কাজ তাতে কারা লাভবান? দেশের জনগণ। ’

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আমরা বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলন। উচ্চ আদালত রায় দিল। আমরা বার বার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি। এরপরও আন্দোলন করতে হবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথমে এক দফা কোটা সংস্কার করতে হবে। কোটা বাতিলও করে দিয়েছিলাম। আচ্ছা কোটা সংস্কার হবে। আপিল করলাম। উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে হবে। যেকোন নাগরিককে তো আইন আদালত মেনেই চলতে হবে। সেটা না, ওই এক দফার পরে আসলো ৪ দফা, তারপর আসলো ৬ দফা, তারপর আসলো ৮ দফা, তারপর আবার ৪ দফা। আবার ৪ দফাও হবে না। আরও ৮ দফা। এই ভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি। আর সেই সাথে সাথে এই ধ্বংসযজ্ঞ। মানে ধ্বংসযজ্ঞের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। ’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ভাঙচুরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন।

তিনি ব্যাপক ভাংচুরের শিকার মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। এ সময় ক্ষয়ক্ষতি দেখে তাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়।

পরিদর্শনকালে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি এবং এ দুটো স্টেশন পুনরায় চালুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৪
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।