ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নীরবে কাঁদছেন সাঈদের মা, বোন বলছেন ‘ভাইকে মেরে ফেলল ক্যান’

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
নীরবে কাঁদছেন সাঈদের মা, বোন বলছেন ‘ভাইকে মেরে ফেলল ক্যান’ আহাজারি করছেন নিহত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন

গাইবান্ধা: কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) প্রধান সমন্বয়ক আবু সাঈদ (২৪)। মা-বাবাসহ নয় ভাই-বোনের আকাশ সমান স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে।

কিন্তু আজ শুধুই হাহাকার আর আর্তনাদ। এ চিত্র শুধু আবু সাঈদের পরিবারে নয়, পুরো গ্রামজুড়ে।  

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।  

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। পেশায় একজন দিনমজুর। ছেলের কথা বলতেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

তিনি বলেন, ছয় ভাই, তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবার ছোট। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারিনি। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। সে নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত এসেছিল। পরিবারসহ এলাকাবাসীর অনেক স্বপ্ন ছিল আবু সাঈদকে ঘিরে।

নিহত আবু সাঈদের ছোট বোন সুমি আর্তনাদ করে বলেন, ‘হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? কেটা হামাক এনা বোন কয়া ডাকপি-রে। ’ 

আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি নির্বাক হয়ে ফ‌্যাল ফ‌্যাল করে সবার দিকে চেয়ে আছেন আর কিছু সময় পর পর বাবা-বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠছেন।

এলাকাবাসী জানায়, ছোট থেকেই আবু সাঈদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তার ব্যবহারে তার প্রতি সবাই মুগ্ধ ছিল। সে স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ‌্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বোরোবিতে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করেন তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে বোরোবিতে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবু সাঈদ নিহত হন। তার শরীরে ছররা গুলির অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সংঘর্ষে তিনি নিহত হন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।