ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধ্বংসাত্মক কাজ করলে আইন আপন গতিতে চলবে: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৪
ধ্বংসাত্মক কাজ করলে আইন আপন গতিতে চলবে: প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না হয়, ততক্ষণ সরকারের কিছু করার থাকে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

কোটার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে কেউ কিছু বলছে না।

কিন্তু ধ্বংসাত্মক কাজ করলে, আইন আপন গতিতে চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

চীন সফর নিয়ে রোববার (১৪ জুলাই) গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব জানান।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালত যখন কোনো রায় দেন, তখন আমাদের তো কিছু করার থাকে না ‌। কারণ কোর্টের রায় কোর্টেই সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে তারা তো আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান কি তা তারা চেনে না? 

তিনি বলেন, একটি কাজ করতে গেলে যে নীতিমালা বা ধারা থাকে, একটি সরকার কীভাবে চলে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই এদের নেই, কোন জ্ঞানই নেই। হ্যাঁ, পড়াশোনা করছে, ভবিষ্যতে এরাই তো দেশ চালাবে, নেতৃত্ব দেবে। এ ধারণাগুলো দরকার। আমাদের সংবিধান কী বলে, তা মেনে চলা উচিত।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় কীভাবে কাজ হয়, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে? সে ধারণা তো আমরা দেখি না। যখন (বিষয়টি) আদালতে চলে গেল, আদালতে সমাধান হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছেন। বলেছেন আপনারা আসুন, বলুন, আর্গুমেন্ট করুন। তারা আদালতে যাক, বলুক; না তারা রাজপথে সমাধান করবে! 

সরকার প্রধান বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে এখন এ মুহূর্তে আমার তো দাঁড়ানোর কোনো অধিকার নাই। সংবিধানও বলে না, পার্লামেন্ট বলে না, কার্যপ্রণালী বিধিও বলে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না হয়, ততক্ষণ আমাদের এখানে কিছু করার থাকে না। এটিই হলো বাস্তবতা, এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে।  না মানলে কিছু করার নেই।  

তিনি বলেন, রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণভাবে করে যাচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত দেওয়া বা পুলিশের গাড়ি ভাঙা বা আক্রমণ, এসব যদি কিছু করতে যায়, তখন আইন তার আপন গতিতে চলবে। ‌ এখানে আমাদের কোনো কিছু করার নেই।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা হতে দিতে পারি না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতিপুতিরা কেউ মেধাবী নয়, যত রাজাকারের বাচ্চা-নাতিপুতিরা মেধাবী? 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার আন্দোলনে যেসব ঘটনা তারা ঘটাচ্ছিল, আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা, কিছু জ্ঞানীগুণী আছেন, ঘরের মধ্যে বসে মিথ্যা অপপ্রচার রেকর্ড করে ছাড়েন, এসব দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে বলি ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। উদ্দেশ্য ছিল আগে দেখি কোটা বাদ দিলে কী অবস্থাটা হয়।  

তিনি বলেন, কোটা বন্ধ করে দেওয়ার পর ২৩ জেলায় একজনও পুলিশের চাকরি পায়নি। ৪২ বিসিএসে আমরা স্পেশাল পরীক্ষা নিয়ে শুধু ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছিলাম। মেডিকেল সেক্টরে আমি মেয়েদের সংখ্যাটা বেশি দেখি। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে যদি আমরা দেখি, সেখানে তো সবসময় পিছিয়ে তারা। লাভটা কী হলো? মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ক্ষুব্ধ হলো, তারা মামলা করল।

শেখ হাসিনা বলেন, কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে নেওয়া উচিত উচিত ছিল, কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে। আর দ্বিতীয় কথা হলো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন।  

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে? মুক্তিযোদ্ধাদের এখন ভালো লাগে না, মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলে, মানে গায়ে জ্বর আসে। আরেকটি জিনিস দেখতে খুব অদ্ভুত লাগল আমার কাছে। মুক্তিযোদ্ধার নাতি, সে ভর্তি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইউনিভার্সিটিতে। সেও বলে কোটা থাকবে না। ব্যাটা তুই তাহলে চলে আয়, পড়াশোনার দরকার নাই। চলে আয় তোর পড়াশোনার দরকার টা কী। মুক্তিযোদ্ধা নাতি হিসেবে কোটায় ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে বলে কোটা লাগবে না। ওকে তো ইউনিভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়া উচিত। বের করে দাও, কোটা নাই তো পড়া নাই। বাড়ি যাও, বসে থাক। যদি লজ্জা থাকতো..। আগে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বলুক, কোটা লাগবে না। কী যে বিচিত্র এ দেশ। একটা দেশ, বিচিত্র মানসিকতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৪
এসকে/এমইউএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।