ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হইব’

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৪
‘স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হইব’

লালমনিরহাট: নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে ছনের ঘরে দুর্বিষহ কেটেছে ৬৫ বছর।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে আপ্লুত বৃদ্ধা মাজেদা বেগম বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হইব। সবকিছু স্বপ্ন লাগতেছে। ’

মাজেদা বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের সাকোয়া বাজার এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণের বাসিন্দা।

মাজেদা বেগম জানান, দিনমজুর বাবার সংসারেও অভাবের মাঝে বড় হয়েছেন। বিয়ে হয় নরসুন্দর অপিল উদ্দিনের সঙ্গে। স্বামীর সামান্য আয়ে চলে না সংসার। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুর দিয়ে সচল রেখেছেন ছয় সদস্যের পরিবারের চাকা। জীবনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পেটের ভাত ছাড়া জোগাড় করা ছাড়া কোনো সম্পদ বা বাড়ি করতে পারেননি এই দম্পতি।  

অবশেষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে বেজায় খুশি অপিয়া মাজেদা দম্পতি। শুধু পাকা বাড়িই নয়, সঙ্গে রয়েছে বাড়ির দুই শতাংশ জমি।  

জমি আর পাকা বাড়ি পেয়ে অপিল উদ্দিন বলেন, পরিশ্রম করে শরীরের রক্ত পানি করেও একখণ্ড জমি কিনতে পারি নাই। এখন শেখের বেটি হাসিনা হামাক জমিসহ পাকা বাড়ির মালিক করে দেছে বাহে। আল্লায় শেখের বেটিকে ম্যালা (অনেক) দিন বাঁচি রাখুক। হামরা নামাজে বসে প্রতিদিন দোয়া করি তার জন্য।

একই আশ্রয়ণে জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছেন ষাটোর্ধ্ব দম্পতি সাহেরা আব্দুস সালাম। এক সময় তাদের নিজের জমিসহ পাকা বাড়ি ছিল। কিন্তু ব্যবসায় লোকসানে পড়ে ছেলে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেন। এরপর তাদের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। দীর্ঘ কয়েক বছর অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। ভূমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে তারাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতাংশ জমিসহ পাকা বাড়ি।  

এই দম্পতি বলেন, ব্যাবসায়িক লোকসানে বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে পথে বসে গেছিলাম। হতাশায় ডুবে ছিলাম। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আবার মাথাগোজার ঠাঁই পাইলাম। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও পাইলাম আমরা।  

একই আশ্রয়ণের ইতা রানী বলেন, সারা জীবন কষ্ট করে কামাই (আয়) করেও টিনের ঘর করবার পারি নাই। এখন নিজের নামে দুই শতক জমিসহ পাকা বাড়িতে থাকছি বাহে। সবায় (সবাই) কয় বাড়িও খুব মজবুত কইরে বানাইছে। সবই ভগবানের কৃপা। খুব ভালোই আছি বাপু।

শুধু মাজেদা বা ইতা রানী নয়। লালমনিরহাটের অনেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাস করছেন। যাদের একখণ্ড জমি ছিল না, একটা বাড়ির জন্য রোদ বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও মিলাতে না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। এমন ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলোকে খুঁজে আশ্রয়ণের জমিসহ বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতাংশ জমির দলিল ও দুই কক্ষের একটি পাকা বাড়ি পেয়ে বেজায় খুশি এসব ছিন্নমূল পরিবার। এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে খাস জমি উদ্ধার করে ৮৮২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করা হচ্ছে সরকারি খাস জমিতে। কোনো এক সময় এসব খাস জমি অন্যের দখলে ছিল। সরকার রাজস্ব হারালেও কেউ কেউ ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ নিয়ে নিজেরা ভোগ করতেন। এসব সব খাস জমি উদ্ধার করে সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সেই জমির দুই শতাংশ হারে সুফল ভোগীদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিজন সুফল ভোগী জমির ওপর নির্মিত একটি পাকা বাড়িও পেয়ে যাচ্ছে।

আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের সাকোয়া বাজার এলাকার আশ্রয়ণটিকে মডেল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির রঙে ভিন্নতা নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণের মানুষদের যাতায়াতের জন্য আশ্রয়ণ থেকে মূল সড়কে ওঠার রাস্তাও পাকা করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলে এটিকে দেখতে অনেকটাই শহরের আবাসিক কোনো এলাকার মতোই লাগছে। নির্মাণ কাজ শেষ দিকে। কিছু দিনের মধ্যে সব সুফলভোগীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে চাবি হস্তান্তর করা হবে। কাজ শেষ হওয়ায় কিছু পরিবার ব্যবহার করছেন তাদের স্বপ্নের পাকা বাড়ি।

আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও গৃহনির্মাণ প্রকল্পের সদস্য সচিব মফিজুল ইসলাম জানান, সরকারের দেওয়া ডিজাইন ও সিস্টেম অনুযায়ী প্রত্যেকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। সাকোয়া বাজার এলাকার আশ্রয়ণটি মডেল হিসেবে রঙে ভিন্নতা আনা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সুফলভোগীসহ স্থানীয়রাও প্রশংসা করেছেন। আশ্রয়ণে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের সব দপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব পরিবারে সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধায় অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টাও রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।