ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া কাবিননামায় বিয়ে করার অভিযোগ এএসআইয়ের বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
ভুয়া কাবিননামায় বিয়ে করার অভিযোগ এএসআইয়ের বিরুদ্ধে

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আকবর আলী খন্দকারের বিরুদ্ধে ভুয়া কাজি ও কাবিননামায় এক নারীকে (৩৩) বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ওই নারীর দুই লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।

 

এমন অভিযোগে এএসআই আকবর আলীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী নারী।

অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে জেলার হরিরামপুর থানায় কর্মরত রয়েছেন এবং এর আগে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় কর্মরত ছিলেন।  

মামলা ও ভুক্তভোগী নারী সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে আমিনুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী নারী। সেই টাকা কথামতো ফেরত না দেওয়ায় আমিনুরের বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ করেন তিনি। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর থানায় কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক আকবর আলী খন্দকারের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে তারা মোবাইলে বিভিন্ন সময় কথা বলতেন এবং আলী আকবরের কথা মতো বিভিন্ন জায়গায় দেখা করতেন। এর মধ্যে এএসআই আকবর আমিনুরের কাছে থেকে ভুক্তভোগী নারীকে এক লাখ টাকা আদায় করে দেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেম হয় এবং পরে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান তারা।  

এরপর, গত বছরের ১০ অক্টোবর মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ভুক্তভোগী নারীর কাছে থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা নেন আকবর। এরপর গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী নারীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এক ব্যক্তিকে কাজী পরিচয়ে নিয়ে আসেন এএসআই আকবর আলী। তখন পাঁচ লাখ টাকা কাবিন দিয়ে কাবিননামায় ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর নেয় এবং আকবর ভুক্তভোগীকে বলে আজ-থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী। চাকরির ক্ষতি হবে বলে আপাতত বিয়ের কথা গোপন রাখার কথাও জানান আকবর। এরপর থেকে নিয়মিত ভুক্তভোগীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস ও যাতায়াত ছিল আলী আকবরের।

গত ৩০ নভেম্বর তার স্ত্রী হিসেবে পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করাতে এবং সামাজিক মর্যাদা দিতে বললে আকবর আলী ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন এবং বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। এরপর থেকে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেন আকবর আলী। বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই নারী। সেখানে তেমন অগ্রগতি না পেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি জেলা লিগ্যাল এইডে অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। লিগ্যাল এইডে অভিযোগ দায়ের করার পর আকবর আলী ভুক্তভোগী নারীকে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আপস করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই নারী টাকা না নিয়ে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা পেতে গত ২৪ এপ্রিল অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, বিয়ের ঘটনার আগে আকবর আলী খন্দকার মানিকগঞ্জ কোর্টের পাশে সিটি ড্রিম অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারের আবাসিক হোটেলে নিয়ে বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। পরে ভুয়া কাবিননামা ও বিয়ের নাটক সাজানোর পরে বহুবার আমার বাসায় এসে আমার সঙ্গে বসবাস করেছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছি। স্ত্রী হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি চাইলে সে এখন আমাদের বিয়ের কথা অস্বীকার করে বলে, তুমি আমার স্ত্রী না। ভুয়া কাবিনে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি অভিযোগ-মামলা করার পর থেকে সে আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিচ্ছেন। আমি আকবর আলী খন্দকারের কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই আকবর আলী খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, বিষয়টি আলাদাভাবে তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যে অভিযোগ দিয়েছে তার সত্যতা পেলে সেটা আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মে ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।