ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্রিজের অভাবে দুর্ভোগে ৩ উপজেলার মানুষ 

কাজী আব্দুল কুদ্দুস,  ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
ব্রিজের অভাবে দুর্ভোগে ৩ উপজেলার মানুষ 

রাজবাড়ী: নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা হয় পুরাতন ব্রিজ। সেখানে কাটা হয় মাটি, তৈরি হয় পুকুর।

ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়েছিলেন রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি ও ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।  

তবে নতুন ব্রিজের কাজ শুরু না করেই পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই দেড় বছরে ব্রিজ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আড়াই বছরেও। ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশ দিয়ে নির্মিত সরু কাঁচা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ ও ছোট যানবাহন। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রাইভেটকার চলাচল। অবশ্য ব্রিজ নির্মাণে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।  

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজবাড়ী সদরের কোলারহাট-নিমতলা সড়কের কোলারহাট এলাকায় কুমার নদের ওপর নির্মিত পুরাতন গার্ডার ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বরিশালের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপালি কনস্ট্রাকশন ব্রিজটি নির্মাণ কাজের টেন্ডার পায়।  

২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ৮৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ করাতো দূরের কথা, শুরুই করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশ দিয়ে একটি সরু কাঁচা রাস্তা তৈরি করে। এরপর পুরাতন ব্রিজটি সরিয়ে ফেলতে সেখান থেকে মাটি সরিয়ে ফেলা হয় এতে তৈরি হয় বেশ বড় একটি পুকুর। সরু এ রাস্তায় গাড়ি উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্রিজ না থাকার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোলারহাট এলাকায় কুমার নদের ওপর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ, তেমন কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া নেই। নেই কোনো ব্যারিকেডও। অপরিচিত কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক যানবাহন এই রাস্তা দিয়ে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিকল্প সড়ক ব্যবহারে ভোগান্তি বেড়েছে।

স্থানীয় ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পুরাতন ব্রিজ ভাঙার পর থেকে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। ব্রিজের দুই পাড়ে কোলারহাট বাজার। ব্রিজের পূর্বপাশে শতাধিক এবং পশ্চিম পাশে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে। ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকায় কোলারহাট বাজারের একপাশে প্রায় অর্ধশত দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাশের সরু রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অনেক মানুষ গর্তেও পড়ে যায়।

আব্দুল গফুর নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কোলারহাটটি পেঁয়াজের জন্য খুব বিখ্যাত। পেঁয়াজের মৌসুমে এ হাটে প্রচুর পেঁয়াজ উঠে। তবে ব্রিজ না থাকায় বড় ট্রাক হাটে ঢুকতে না পারছে না। যে কারণে এ হাটে পেঁয়াজের ব্যবসায় ধস নেমেছে। ক্ষতি হচ্ছে অন্য ব্যবসায়ীদেরও।

তৈয়বুজ্জামান নামে এক যুবক বলেন, ব্রিজ না থাকায় গর্ভবতী নারী বা অন্য রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া খুবই কষ্ট হয়। অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এই সরু কাঁচা রাস্তায় হেটেও চলা যায় না। আমাদের দাবি দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ।

মাহফুজ আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি ও ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া মহাসড়কে কোনো সমস্যা হলে বেনাপোলের গাড়িগুলো বিকল্প সড়ক হিসেবে এই সড়ক ব্যবহার করে। এখানে ব্রিজ না থাকায় মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।

এলজিইডির রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় ঠিকাদার। বিধি অনুযায়ী ঠিকাদারকে জরিমানার পাশাপাশি কাজটি বাতিল করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা. এপ্রিল ২৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।