ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের খুশি নেই নাবিক নাজমুলের পরিবারে

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৪
ঈদের খুশি নেই নাবিক নাজমুলের পরিবারে নাবিক নাজমুলের ছবি হাতে তার বাবা-মা

সিরাজগঞ্জ: গত বছর কোরবানির ঈদ পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন নাবিক নাজমুল হক। তখন নিজেই গরু কোরবানি দিয়েছিলেন তিনি।

বাবা-মা ও বোনকে নিয়ে অনেক আনন্দে কেটেছে ঈদের সেই দিনগুলো। আর এখন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন নাজমুল। ফলে তার পরিবারে এবারের আসন্ন ঈদের কোনো খুশি নেই।  

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চর-নুরনগর গ্রামে নাজমুলদের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। এক শোকাবহ আবেশে সময় কাটছে এ বাড়ির মানুষগুলোর। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে নাজমুলের মা নার্গিস খাতুনের। শুকনো গলায় তিনি বলছেন, আমার বুকের ধন আমার কাছে নেই। কী করে ঈদের দিন কাটবে আমার। জানি না নাজমুল কেমন আছে? ঈদের দিন ও কেমন থাকবে, কী খাবে? ওকে ছাড়া আমরা ঈদের আনন্দ কাকে নিয়ে করব। আমাদের মনে যেখানে কোনো শান্তিই নেই সেখানে ঈদের আনন্দ থাকবে কী করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নার্গিস খাতুন বলেন, ২৩ দিন আগে জলদস্যুরা আমার ছেলেসহ ২৩ জনকে আটকে রেখেছে। তখন সরকারি লোকজন এসেছিলেন, চেয়ারম্যানও এসেছিলেন। এরপর কেউ আর আমাদের খোঁজ নেননি। তবে মাঝে মধ্যে ঢাকার শিপিং অফিস থেকে করে করে জানানো হয়, নাজমুল ভালো আছে। কিন্তু তাদের কথায় আমার প্রাণ জুড়ায় না, যখন পর্যন্ত ছেলেকে দেখতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তিতে বাঁচতে পারব না।

নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, আমার বয়স হয়ে গেছে। এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তার ওপর ছেলে হারানোর বেদনায় আরও অচল হয়ে পড়েছি। ছেলের আয়ের ওপরেই এখন সংসার। জানি না আল্লাহ কী করে। ছেলেকে আর দেখতে পাব কি না। ওর কিছু হলে আমাদের কী হবে! আমরা শেষ হয়ে যাব।

প্রতিবেশীরা জানান, নাজমুল জিম্মি হওয়ার পর খুব কষ্টে পরিবারটি দিন পার করছে। ঘটনার পরের দিন উপজেলা প্রশাসন একবার এসেছিল। এরপর আর কেউ আসেনি। খোঁজ নেয়নি স্থানীয় চেয়ারম্যানও।  

একই কোম্পানিতে নাবিক পদে কর্মরত নাজমুলের ফুফাতো ভাই আল-মাহমুদ বলেন, ২৩ দিন বন্দিদশায় বদলে গেছে নাজমুলের পরিবারের চিত্র। ঈদের আগেই যেন নাজমুলসহ সব নাবিকদের মুক্তির ব্যবস্থা করে সরকার -সেই দাবি জানাই।  

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন সুলতানা বলেন, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও জাহাজ মালিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। পরিবারের একমাত্র ছেলে নিখোঁজ থাকলে তাদের তো আসলে ঈদ বলতে কিছুই থাকে না। তারপরও আমরা তাদের পাশে আছি। খুব শিগগিরই নাজমুলের পরিবারকে সহায়তা করা হবে।

গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি জাহাজের ক্রু হিসেবে চাকরি পাওয়া সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের নাজমুল হাসান। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে নাজমুলের ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মা-বাবা, বোন এবং পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।