ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সরকারি ১৩০ সাইকেল মিলল উপজেলা চেয়ারম্যানের বন্ধুর বাড়িতে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
সরকারি ১৩০ সাইকেল মিলল উপজেলা চেয়ারম্যানের বন্ধুর বাড়িতে!

পাবনা: পাবনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আর্থিক অনুদানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩০টি বাইসাইকেল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বন্ধুর বাড়িতে পেয়েছেন স্থানীয় জনতা।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাতে সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফর হোসেনের বন্ধু মো. হেলাল উদ্দিনের তিনতলা বাড়ির নিচতলা থেকে ১৩০টি নতুন বাইসাইকেল পাওয়া যায়।

 

পরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে গেলে শিক্ষা বাইসাইকেলগুলো বিতরণের অনুমতি বা কাগজপত্র দেখাতে পারেননি চেয়ারম্যানের বন্ধু।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ছুটির দিনে ছোট ছোট পরিবহনে করে বাইসাইকেলগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি হেলালের কাছে জানতে চান। তখন হেলাল জানান যে এগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বরাদ্দের বাইসাইকেল। এ ঘটনায় এলাকার যুবকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তারা রাতে সেই বাড়িতে গিয়ে সেখানে রেডি ও প্যাকেট করা বাইসাইকেল দেখতে পান। স্থানীয়রা সরকারি মাল ব্যক্তিগত বসতবাড়িতে রেখে সেখান থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এসময় হেলাল বেশ কয়েকটি স্কুলের স্বাক্ষর করা সাদা প্যাড পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের দেখান। তবে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকেলগুলো দেওয়া হবে তার তালিকা এবং সরকারি মালামাল রাখার কোনো বৈধ কাগজ বা অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।  

পরে স্থানীয় লোকজন সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের দুর্নীতি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে মিছিল বের করেন। পরে পুলিশের অনুরোধে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অভিযুক্ত হেলাল বলেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে আমার বাসার নিচে সাইকেলগুলো রাখা হয়েছে।

তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রকৌশলী
মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ওই বাড়িতে যে বাইসাইকেলগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো ব্যক্তিগত হতে পারে, সেগুলো আমাদের বাইসাইকেল নয়। তবে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারিভাবে সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বাইসাইকেল দেওয়া হবে। সেটি ঠিকাদার ও উপজেলা পরিষদ কমিটি কাদের মাধ্যমে কীভাবে দেবে, সেটি তাদের ব্যাপার। তালিকা অনুসারে সাইকেল বিতরণের পরে আমরা তদন্ত করে দেখব, আসলেই সাইকেল বিবরণ করা হয়েছে কি না। যদি সেখানে কোনো অনিয়ম হয়, তখন সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার বিষয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, সামনে নির্বাচন, তাই একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যার বাসায় সাইকেল পাওয়া গেছে, সে আমাদের ঠিকাদার ও মালামাল সরবরাহকারী। সে এ প্রকল্পের বাইসাইকেল সরবরাহ করছে। তাই মালামাল তৈরি করে আমাদের দেবে। এখনো আমরা তার মাল বুঝে নেইনি। সব মাল তৈরি করে সবার উপস্থিতিতে দেওয়া হবে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। ইউএনও সাহেবসহ সবাই বিষয়টি জানেন।  

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পাবনা জেলা সদরের ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩টি করে সরকারি বাইসাইকেল বিতরণ করা হবে। প্রতিটি বাইসাইকেলের দাম ধরা হয়েছে ৯,৬৫০ টাকা করে। এরই মধ্যে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৫টি বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার হেলাল। এখন ১৩০টি বাইসাইকেল তার কাছে মজুদ রয়েছে। তালিকাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম থেকে ১০ম শ্রেণির দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ বাইসাইকেল পাবে। মোট সাইকেল বরাদ্দ হয়েছে ১৩০টি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।