ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিজ ঘরে কবর খুঁড়ে ১২ বছর ধরে মৃত্যুর অপেক্ষায় দম্পতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
নিজ ঘরে কবর খুঁড়ে ১২ বছর ধরে মৃত্যুর অপেক্ষায় দম্পতি

পঞ্চগড়: ‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে’ - এটা অনিবার্য। তাই বলে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন পঞ্চগড়ের এক দম্পতি।

 

এতেই শেষ নয়; নিজ ঘরে নিজেদের কবর খুঁড়ে রেখেছেন তারা। কবর দুটি সিমেন্ট দিয়ে বাধাই করে রেখেছেন তারা। এর দেখভাল ও যত্ন নিচ্ছেন নিয়মিত। দিনে ও রাতের বেশিরভাগ সময় কবর দুটির পাশে বসে তারা ইবাদতসহ বিভিন্ন দোয়া করে সময় পার করছেন।

বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে চলছে কৌতূহল, এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য।

এ দম্পতি হলেন -  সদর উপজেলার চাকলারহাট ইউনিয়নের উত্তর ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভাজন আলী ও অবিরন বেগম।

জানা গেছে, স্বপ্নে মৃত বাবার নির্দেশ পেয়েই এমনটি করেছেন ওই দম্পতি।  

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ওই বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে সেই কবরের।  

এসময় জানা যায়, শুধু নিজেদেরই নয়; একইসঙ্গে সন্তানদের জন্য কবরের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন দম্পতি। নিজের কবর খুঁড়ে তা দেখভাল ও যত্ন নেওয়ার বিষয়টি এলাকার মানুষ জানতে পেরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।  

ওই দম্পতির সন্তানেরা বলছেন, দাদার দেওয়া আদেশ পালন করছেন বাবা-মা।  

পারিবারিকভাবে জানা গেছে, ভাজন আলীর বাবা ইমান আলী ফকির স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই বছর পর মারা যান। এ সময় ইমান আলী মৃত্যুর আগেই বাড়ির পাশে দাফনের জায়গা নির্ধারণ করেন। একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পর সেই কবরের পাশে শায়িত করার নির্দেশ দেন। তবে স্বপ্নে আসা মৃত বাবার নির্দেশে স্ত্রী অবিরনের বাবার কবরের পাশে দুটি কবর খুঁড়েন ভাজন আলী। বর্তমানে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ঘরের ভেতর তিনটি কবর রয়েছে।  

বৃদ্ধ ভাজন আলী ও তার স্ত্রী অবিরন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, স্বপ্নে আসা বাবার নির্দেশ পালন করছি। এখানে নিয়মিত ইবাদত করে থাকি। এদিকে প্রতি বছরে ওরশের আয়োজন হয়ে থাকে।  

এদিকে এই বৃদ্ধ দম্পতি ছেলে আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, আমি যখন ৭-৮ বছরের, তখন বাবাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন দাদা, তার মৃত্যুর পর তার কবর যেন এখানে করা হয়। সেই নির্দেশে কবর দেওয়া হয়েছে। এদিকে বাবাকে স্বপ্নে দাদা নির্দেশ দিলে তার পাশে মা-বাবা কবর খুঁড়ে প্রস্তুত করে রেখেছেন। বাবা-মা মারা গেলে তাদের এখানে মাটি দেওয়া হবে।

এ ঘটনার বিষয়ে পঞ্চগড় সদরের মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি জাহাঙ্গীর আলম সালেহী জানান, মৃত্যুর আগেই কবর খুঁড়ে ও প্রস্তুত করে রাখা শরীয়তে নেই।  

জানা গেছে, বৃদ্ধ ভাজন আলী ও অবিরন দম্পতি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নকশাবন্দি মোজাদ্দেদী এনায়েতপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ময়মনসিংহ শম্ভুগঞ্জি পীরের মুরিদ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।