ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধান শিক্ষকের বদলির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
প্রধান শিক্ষকের বদলির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি

নরসিংদী: এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা, শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও প্রধান শিক্ষকের অসৌজন্যমূলক আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তারের বদলির দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।  

রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে রূপ নেয়।

পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্কুলের সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের বদলির দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয় তারা।  

এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের বদলির দাবিতে বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন করে স্লোগান দেয়। পরে জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।  

জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বিষয়টি তদন্তে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেন। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ডিসি অফিস ত্যাগ করেন।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বিভিন্ন সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত বিদায় অনুষ্ঠানের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগত শিক্ষার্থীদের স্কুলে বা অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে মুখে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকতে দিলেও পাঁচ মিনিটের আলোচনার পর বিদায় অনুষ্ঠান শেষ করে দেন। এতে ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বিদায় অনুষ্ঠান বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হলেও নিম্নমানের খাবার বিতরণ করা হয়। টিফিনেও নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন তিনি। শীতের সকালে পিটি (দৈনিক সমাবেশ) নামে শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে শীতের কাপড় খুলে নিতেন। ফলে অনেক শিক্ষার্থী শীতে জবুথবু হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সবশেষ এসএসসি পরীক্ষার্থী (দশম শ্রেণির) শেষ ক্লাসের দিনে র‌্যাক’ডের আয়োজন করা হয়। ওই সময় ৩৫০ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলেও সে অনুষ্ঠান করা হয়নি। ওই সময় শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে তালা মেরে রেখে দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।  

শুধু তাই নয়, স্কুলের ৪৬ জন শিক্ষক থাকলেও বিদায় অনুষ্ঠানে ছয়জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় স্কুলের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে।  

আরও জানা গেছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও অর্ধশতাধিক কম্পিউটার ক্রয়সহ স্কুলের উপকরণ ক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন। স্কুলের টিফিনসহ সব উপকরণ প্রধান শিক্ষকের স্বামী স্কুলে সরবরাহ করেন। যা নিয়ম বহির্ভূত। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষকের রোষানলে পড়তে হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে এক সঙ্গে স্কুলের ১৫ শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। ফলে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।  

এছাড়া, গত বছর শাখা সিঁদুর পড়ে বিবাহিত মেয়েরা এসএসসি পরীক্ষা দিতে এলে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেয়নি। পরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে উঠে আসে।

স্কুলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ম্যাডাম শুধু আমাদের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করে না, অভিভাবকদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। আমরা তার ভয়ের কারণে কোনো প্রয়োজনেও ম্যাডামের কাছে যেতে পারি না। আমরা শিক্ষার্থী বান্ধব প্রধান শিক্ষক চাই।

স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের মেয়েদের হেনস্তা করছেন। তিনি এসএসসি পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের দেখে নেওয়ার হুমকি নিয়েছেন। তার সীমাহীন দুর্নীতির কারণে স্কুলের আজ বাজে অবস্থা। আমরা প্রধান শিক্ষকের দ্রুত বদলি চাই।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আমাকে একটা অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ কার্যদিবসে তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর শিক্ষার্থীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই তাদের পাশে জেলা প্রশাসন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।