ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাঙামাটিতে আজ বিজয়ের সূর্য উদিত হয়েছিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
রাঙামাটিতে আজ বিজয়ের সূর্য উদিত হয়েছিল

রাঙামাটি: রাঙামাটি হানাদার মুক্ত দিবস আজ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিও পাকিস্তান বাহিনীর দখলে ছিল।

প্রিয় নিজ এলাকাকে হানাদারমুক্ত করতে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিকামী পাহাড়ের মানুষেরাও হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশ মাতৃকার রক্ষা করতে যুদ্ধে করেছিল।

নয়মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পুরো দেশে বিজয়ী স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করা হলেনও পাহাড়ি এ অঞ্চলটিতে বিজয়ের সূর্য উদয় হতে একদিন সময় লেগেছিল। অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর রাঙামাটি হানাদারমুক্ত হয়।

যেভাবে রাঙামাটিতে যুদ্ধের দামামা বেজেছিল:
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ডাকের বজ্রধ্বনি শুনার পর ২৭ মার্চ তৎকালীন পার্বত্য অঞ্চলের জেলা প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ.টি. ইমাম), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার বজলুর রহমান এবং মহকুমা প্রশাসক আবদুল আলীর নেতৃত্বে রাঙামাটি স্টেশন ক্লাবের মাঠে মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করা হয়।  

২৯ মার্চ রাঙামাটি থেকে ৬০ জনের একটি দল প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ভারতে যাত্রা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ এবং যানবাহন সুবিধার্তে শহরের আলম ডকইয়ার্ড এলাকায় গড়ে তোলা হয় মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। স্থাপন করা হলো ওয়ারলেস সেন্টার।

রাঙামাটি থেকে ভারতে যাওয়া প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দলটি এক সপ্তাহের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাপ্টেন আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ১৫ এপ্রিল রাঙামাটি আসে। কিন্তু স্থানীয়দের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে প্রথম দলটি জেলা প্রশাসকের বাংলো এলাকায় হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়।

দ্বিতীয় দলটি রাঙামাটি শহরের কাঠালতলীস্থ আলম ডকইয়ার্ডে উঠে সেখানে অবস্থান নেয় এবং তৃতীয় দলটি রাঙামাটি সদর এলাকার বাকছড়িতে অবস্থান নেয় এবং পরদিন হানাদার বাহিনীর ওপর হামলা চালায় তারা।

১ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল রাঙামাটির বরকল উপজেলার হরিণায়। আগস্ট মাসের শুরুতে ১ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর স্থাপন করা হয় ভারতের মিজোরাম প্রদেশের বৈষ্ণবপুরে। ১৯৭১ সালের ৫ মে, ১ নম্বর সেক্টরের অধীন ২৫ সদস্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।

এদিকে ভারতের বিএসএফ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া একটি দল গ্রুপ কমান্ডার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৯ ডিসেম্বর কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নে ও রাঙামাটি সদরের বালুখালী ইউনিয়নে গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করে। যুদ্ধে গ্রুপ কমান্ডার নাজিম এবং মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জাফর শহীদ হন।

১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের কালভার্টের ওপর অবস্থান নেওয়া হানাদার বাহিনীর জিপ গাড়ির ওপর গেরিলা হামলা চালালে দুইজন পাকিস্তানি অফিসার এবং চালক মারা যান।

আগস্টের মধ্যভাগে পাইলট মান্নানসহ মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাহাড়ি এলাকায় পথ হারিয়ে রাতের অন্ধকারে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাম্পে ঢুকে পড়লে কয়েকজন স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁচতে পারলেও বাকিরা নিহত হয়।

১৪ ডিসেম্বর সকালে ফারুয়া ইউনিয়নের পাকিস্তান বাহিনীর ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুইটি যুদ্ধ বিমান আক্রমণ চালায়। সেখানে ৭৫০ জন হানাদার সেনার অবস্থান ছিল।

মিত্র ও মুক্তিবাহিনীরা জৈলানন্দ সিং এবং সুলতান আহমদ কুসুমপুরীর নেতৃত্বে ৫০০ মুক্তিযোদ্ধার দল বরকলে ১৫ ডিসেম্বর  ভোরে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে বিকেলে পাঞ্জাবিরা রাঙামাটির উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। তাদের অনুসারী বাঙালি রাজাকার, আলবদর ও বেলুচ সৈন্যদের দলটি যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল মনীষ দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, ১৭ ডিসেম্বর সকালে রাঙামাটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে গেলে দুপুরে রাঙামাটি শহরের পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় আমি স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করি। ১৮ ডিসেম্বর সকালে রাঙামাটিতে শেখ ফজলুল হক মণি, এসএম ইউসুফ, শেখ সেলিম, আমাদের কমান্ডার সুজান সিং ওভান আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।