ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘তোমার বাপ আমার বিচার মানেনি’ বলেই কলেজছাত্রকে মারধর করলেন চেয়ারম্যান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২৩
‘তোমার বাপ আমার বিচার মানেনি’ বলেই কলেজছাত্রকে মারধর করলেন চেয়ারম্যান আহত তৌহিদুল ইসলাম।

কক্সবাজার: ‌‘তোমার বাপ আমার বিচার মানেনি, তাই তোমার নাগরিক অধিকার আমি দেবো না, পারলে আমার নামে মামলা করো। ’ এসব কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২০) নামের এক কলেজছাত্রকে নিজের কক্ষেই বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টোর বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (০৯ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানে কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রের মা খুরশিদা বেগম।

ভুক্তভোগী তৌহিদুল ইসলাম রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের আমতলিয়াপাড়ার আবদুল হাকিমের ছেলে এবং রামু সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।

ভুক্তভোগী তৌহিদুলের মা খুরশিদা বেগম জানান, তার ছেলে জন্মনিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য দফায় দফায় চেয়ারম্যানের কাছে যান। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে তাকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান। এর মধ্যে বুধবার (৮ নভেম্বর) আবারও গেলে কাগজপত্র নিয়ে পরদিন যেতে বলেন চেয়ারম্যান। ইউপি চেয়ারম্যানের কথা মতো বৃহস্পতিবার আবারও পরিষদে গেলে তিনি তৌহিদুলের পরিচয় জানতে চান।  এ সময় তৌহিদুল তার বাবার নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান চরম উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল গালাগালি শুরু করেন।  একপর্যায়ে চৌকিদারকে দিয়ে বেত এনে তৌহিদুলকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন।  একপর্যায়ে ছেলে মেঝেতে পড়ে গেলে চেয়ারম্যান ছেলে তৌহিদুলের কোমরে লাথি মারেন, আঘাত করেন। এ সময় তৌহিদুলের সঙ্গে থাকা তারেকুল ইসলাম, ফাইসাল ও আবদুল হকসহ লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ ঘটনায় রামু থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান খুরশিদা বেগম।

এ ঘটনার সত্যতা মেলে এ প্রতিবেদকের হাতে আসা দুই মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডে।  এটাতে চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যাচ্ছে ‘তোমাকে জন্ম নিবন্ধন দেবো না। ’ ‘তোমার বাপ বিচার মানেনি। তোমার চাচা বিচার দিয়েছিল। ’  এ সময় তৌহিদুলের কথার উত্তরে উত্তেজিত হয়ে চেয়ারম্যান ভুট্টো অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে মারধর করতে শোনা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো জানান, এক ছেলে জন্মনিবন্ধন দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করছিলেন। আমি ব্যস্ততার কারণে অপারগতা প্রকাশ করি। কিন্তু তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো বলেন, যে ছেলেটি জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য এসেছিলেন, তার বাবা এবং পুরো পরিবার এলাকার নামকরা খারাপ মানুষ।

তবে থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ডিউটির কারণে সারাদিন বাইরে আছি।  থানায় গেলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি।  ঘটনা সত্য হলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ইউএনও।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২৩
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।