ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে প্রস্তুত আ.লীগ

স্পেশাল করেসপনেডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৩
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে প্রস্তুত আ.লীগ

ঢাকা: রাজধানীতে মহাসমাবেশের জন্য বিএনপি পুলিশের শর্ত মানতে রাজি হলেও দলটির গতিবিধি সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত হতে পারেনি সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি ও কঠোর অবস্থান অব্যাহত রেখেছে সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে দলটি।

এদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আশঙ্কা করছেন। তবে এই পরিস্থিতি প্রতিহত করতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে বলে জানা গেছে ৷

একইদিন রাজধানীতে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ আছে এবং সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের জনসমাগম ঘটানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর বিএনপির যেকোনো সহিংসতা রুখে দাঁড়ানোই এর মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন দলের নীতি নির্ধারকরা।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) করা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে অপশক্তি আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা শপথ নিয়ে এসেছি, আদর্শ প্রতিষ্ঠায় মরবো তবুও পথ ছাড়বো না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে গণতন্ত্র ব্যাহত হতে দেব না এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। বার বার অপশক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ দেওয়া উচিত না।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এক ধরনের রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের আশঙ্কা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর মাত্র দুইদিন পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের সময় শুরু হবে। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হচ্ছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে।

সরকার ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে যাতে নির্বাচন বানচাল বা সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই সময় ঢাকায় সারা দেশের নেতাকর্মীদের এনে সমবেত করতে মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। তাই শুধু মহাসমাবেশ নয়, এর পর দলটির গতিবিধি ও তৎপরতার উপরও নজর রাখা হয়েছে। মহাসমাবেশের পর ঢাকায় অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যে কোনো ধরনের অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন। সে কারণেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু শর্ত এবং শর্ত পূরণে বিএনপির প্রতিশ্রুতি নিয়ে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, সমাবেশ শেষ করার পর যাওয়ার সময় অন্য কোথাও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ এবং অবস্থান করা যাবে না। তবে এরপরেও যে কোনো পরিচিতি প্রতিহত করতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী আগে থেকেই কঠোর অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়েছে।

এছাড়া শর্তসাপেক্ষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিএনপির পাশাপাশি একই দিনে জামায়াতের সমাবেশ ডাকায় ঢাকার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট সঙ্গী জামাত যুক্ত হয়ে রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও যে কোনো পরিস্থিতি প্রতিহত করতে সরাসরি অ্যাকশনে নামবে এমন নির্দেশও দেওয়া আছে বলে জানা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য থেকেও সেটা স্পষ্ট হয়।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছে। রাজনীতির মাঠ দখল দিয়ে দুই দলের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয় কিনা সে আশঙ্কা করছেন অনেকে। শুক্রবার রাজধানীতে যানবাহনসহ মানুষের স্বাভাবিক তৎপরতা তুলনামূলকভাবে কম লক্ষ্য করা গেছে। এমনিতেই শুক্রবার ছুটির দিনে মানুষের তৎপরতার পাশাপাশি যানবাহনও থাকে কম। কিন্তু এই শুক্রবারে রাজনৈতিক অস্থিরতার একটা প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ করে যানবাহনের ক্ষেত্রে।

শনিবার ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে এমন আভাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে মতিঝিল থেকে গাবতলী রুটের এক বাসের হেলপার যাত্রী তোলার সময় বলছিলেন, ওঠেন ওঠেন কাল বাস পাবেন না, বন্ধ থাকবে। তার কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কাল বিএনপির সমাবেশ আছে, আওয়ামী লীগের সমাবেশ। কি হয় না হয়, গাড়ি বন্ধ রাখাই ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৩
এসকে/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।