ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-জমি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-জমি

ফেনী: নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও বসতঘর বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে। একরের পর একর জমি বিলীন হওয়ায় ভিটে-মাটিহীন হয়ে পড়ছে নদী পাড়ের মানুষ।

বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ও নদীর জলজ প্রাণী। স্থানীয়দের অভিযোগ বারবার প্রশাসনকে জানানো হলেও মিলছে না সুফল।  

জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর লাঙলমোড়া বলির চর। এক সময় এই এলাকার ফসলি জমিতে ফলতো তরমুজ, শসা, বিভিন্ন ডাল জাতীয় ফসলসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। সেই চরের অধিকাংশই এখন নেই। অবৈধভাবে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার ফলে চরের জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। পূর্ব-পুরুষের দেওয়া ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন গ্রামের শত শত পরিবার। শুধু এই একটি জায়গায় নয় জেলার শুভপুর, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরামের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের কারণ অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন।  

ফেনী নদী পাড়ের ছাগলনাইয়ার লাঙলমোড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, দিনে-রাতে পাহারা দিয়েও তারা তাদের জমি রক্ষা করতে পারছেন না। ঝড়-বৃষ্টির রাতে হঠাৎ করে ড্রেজার নিয়ে এসে তাদের জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বালুদস্যুরা।  

লাঙ্গলমোড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাই জানান, এক সময় চরে তিনি চাষ হতো। তরমুজ, কুমড়াসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি চাষ করতেন। এখন সেই জমি চলে গেছে নদীতে। প্রভাবশালীরা প্রথমে জমি কিনতে চেয়েছিল কম দামে। বিক্রি না করায় রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে যায় ড্রেজার নিয়ে।  

রহিমা আক্তার নামের এক গৃহিণী জানান, তিনি যখন বউ হয়ে এসেছিলেন দেখেছেন জমিগুলো ফসলে ভরপুর। এখন সেই জমিগুলো নদীর বুকে বিলীন হয়ে গেছে। হালিমা আক্তার নামের আরেক নারী জানান, জমিজমা হারিয়ে তারা এখন আশ্রয়হীন হওয়ার উপক্রম।  

জানা গেছে, বছরের পর বছর কৃষিকাজ করে আসা মানুষদের জিম্মি করে তাদের কৃষিজমি জোর করে কেটে নিচ্ছে বালুদস্যুরা। এসব জমিতে প্রায় শতাধিক কার্টার মেশিন (মাটি কাটার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র) বসিয়ে প্রথমে মাটি কেটে সেগুলো ফেলা হয় নদীতে। মুহূর্তে আবার নদী থেকে তুলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটিগুলোকে বালুতে পরিণত করা হয়। এভাবে দস্যুরা তাদের বালু ব্যবসা চালিয়ে গেলেও শত শত একর কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বালুদস্যুদের তালিকায় যেমন রয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলা, শুভপুর, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা এবং করেরহাট ইউনিয়নের সরকার দলের প্রভাশালীরাও মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও রয়েছে ফেনী সদরের ফাজিলপুর, সোনাগাজী ও ফুলগাজীর কয়েকজন প্রভাবশালী। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে না পারলেও প্রশাসনের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছেন এলাকাবাসী।  

এছাড়া সম্প্রতি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া অংশে তীলকচর এলাকায় নির্মিত আশ্রায়ণ প্রকল্প ভাঙনের চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। এখানকার ফসলি জমি কেটে নেওয়ার কারণে আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা নিয়মিত নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ আর আহাজারি করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।  

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তারা তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা অভিযান পরিচালনা করেছেন। ভবিষ্যতেও কেউ যদি অন্যায়ভাবে বালু উত্তোলন করে এবং তা যদি প্রশাসন জানতে পারে তাদের জরিমানাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

ফেনী জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় বৈধ বালু মহাল রয়েছে মাত্র আটটি। এর মধ্যে চলতি বছরে ইজারা হয়েছে পাঁচটির। বাকি মহালগুলোতে ইজারা হয়নি। ইজারাকৃত পাঁচটি মহাল থেকে সরকার রাজস্ব পায় ১ কোটি ১ লাখ ১৬ হাজার ১৭১ টাকা।  

স্থানীয়রা বলছেন, জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ও খাল থেকে বছরে শত শত কোটি টাকার বেশি বালু তোলা হচ্ছে। সরকারকে নামমাত্র মূল্য দিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
এসএইচডি/এসএম/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।