ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ‘বাপের বেটি’: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ‘বাপের বেটি’: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাপের বেটি’ বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী এবং আদর্শের উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাপের বেটি! যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা কী কইছে? তুমি (আমেরিকা) স্যাংশন দিলে আমিও স্যাংশন দেব, আমার জনগণ দেবে।

এরপর আর কোনো কথা থাকে?’

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে ‘শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে গণতন্ত্র এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শান্তি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জননেতাদের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদ।

বাংলাদেশের জনগণের আমেরিকায় যাবার কোনো প্রয়োজন নেই এবং বিদেশি কোনো প্রভুর কথায় রাষ্ট্র চলবে না মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা যাওয়া লাগবে কেন? আমাদের কোনো দরকার নেই। আমাদের সাবেক চিফ জাস্টিস হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন— আমি কখনো আমেরিকান ভিসা নেইনি, আমার কখনো প্রয়োজনও নেই। আর আমি বলব— দেশ কি আমেরিকার কথায় চলবে নাকি আমাদের জনগণের কথায় চলবে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে সংবিধান বঙ্গবন্ধু লিখে দিয়েছিলেন, সেখানে বলা আছে— এই রাষ্ট্রের মালিক বাংলার জনগণ। বিদেশিরা আমাদের প্রভু নয়। কাজেই এটা কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। শহীদের রক্তে লেখা যে সংবিধান, সেটাকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র চলবে। ’

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, তারা আমাদের আশেপাশেই আছে। ওরা আজকে আবার আমাদের স্বাধীনতার পতাকা খামচে ধরতে চায়। যে কারণে আজকে আমরা শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের মতো ত্যাগী শহীদ নেতাদের অভাব অনুভব করি। আর যারা আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে খামচে ধরতে চায়, দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তাদের মোকাবিলা করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। ’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিল উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা ডিসেম্বরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ঠেকানোর জন্য। আর আমার মনে আছে ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে আমেরিকার প্রতিনিধি বলেছিল ‘সিসফায়ার’। তার মানে যুদ্ধ থামিয়ে যে যার অবস্থানে থাকা। আর এটা যদি আমরা মেনে নিতাম অথবা জাতিসংঘে এটা পাস হতো তাহলে আমরা ১৬ ডিসেম্বস স্বাধীনতা পেতাম না, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করত না। আমাদের যুদ্ধটা আরও বেশি সম্প্রসারিত হতো। সে সময় আমেরিকার প্রস্তাবে রাশিয়া ভেটো দিয়েছিল, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। ’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন আমেরিকার প্রতিনিধিদল বলেছিল, বাংলাদেশকে যদি সদস্য পদ দেওয়া হয় তাহলে এটা পুরো পৃথিবীর জন্য স্থায়ী একটা বোঝা হবে। এর আগে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ও বলেছিল। ’

১৯৭৪ সালে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশে কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু নগদ পয়সা দিয়ে আমেরিকা থেকে চাল আর গম কিনেছিলেন। সেই চাল আর গম চট্টগ্রামের সমুদ্র বন্দরে এসে পৌঁছায়নি, মাঝপথ থেকে উধাও। তার ফলে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষেরও অন্যতম কারণ এটা। ’

সভাপতির বক্তব্যে শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আমাদের গাজীপুরের মাটি হচ্ছে বীরের মাটি। এখানে বহু বীর জন্ম নিয়েছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের অনেক আগেই গাজীপুরে ঝামেলা শুরু হয়। সেখানে অনেক বীরকে শহীদ হতে হয়েছিল। আমি তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি মনে করি, একটি মানুষ যদি ভালো কাজ করে, জনগণের সেবা করে তাহলে সেই ব্যক্তিকে সমাজের সবাই পছন্দ করে, ভালোবাসে। এর প্রমাণ আমি পেয়েছি আমার বাবা ময়েজউদ্দিন মারা যাওয়ার ২৪ বছর পরে। আমার বাবা যে ভালো কাজ করে গিয়েছিলেন, সে কথা মানুষ মনে রেখেছে। সে জন্য তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। ’

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন। শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।

আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল বাতেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক অধিকার ফোরামের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।