ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ডিমের হালি ৪৮ টাকা নির্ধারণ করে আমদানির সিদ্ধান্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
ডিমের হালি ৪৮ টাকা নির্ধারণ করে আমদানির সিদ্ধান্ত

ঢাকা: ডিমের দাম প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। একইসঙ্গে ডিম আমদানির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি এ কথা জানানোর পাশাপাশি আরও বলেছেন, ডিম প্রথমে অল্প পরিমাণে আমদানি করা হবে। এরপরও যদি দাম না নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে ব্যাপক আকারে আমদানি করা হবে।

ডিম ছাড়াও পেঁয়াজ ও আলুর দাম নির্ধারণ করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

টিপু মুনশি বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা হওয়ায় আমরা এ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রতি পিস ডিম এখন থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করা হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডিম আমদানির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাজার পর্যালোচনা করে সীমিত আকারে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। যদি ডিম প্রতি পিস ১২ টাকায় খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করা হয়, তাহলে আমদানির বিষয়টি অতো গুরুত্ব পাবে না, সীমিত আকারে করা হবে। কিন্তু দাম ১২ টাকায় সীমিত না থেকে বাড়ানো হয়, কিংবা সুযোগ নেওয়া হয়, তাহলে বেশি করে আমদানি করা হবে। বাজার ঠিক রাখার জন্যই আমদানি করা হবে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিকার থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরগুলোয় এই মনিটরিং চলবে। আজকের ঘোষণার পরে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ স্টোর করার সুবিধা নেই। কিন্তু ডিমের ক্ষেত্রে বড়ো সুবিধাটা রয়েছে। সেটা হলো ডিম আমরা আমদানি করতে পারবো। এতে বাজারের বাড়তি দামের প্রভাবটা কমানো সম্ভব। ডিমের দাম যে ১২টাকা ঠিক করা হয়েছে, এটি খুবই ন্যায্য। কোনো অবস্থাতেই এটা কম না, যথেষ্ট ভালো দাম।

এ সময় তিনটা কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা গতকাল (বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর) একটি মিটিং করেছি৷ সেখানে আমরা তিনটা কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ পেঁয়াজ, আলু এবং ডিম এই তিনটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করছি। কৃষি ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত কিন্তু আমরা কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিইনি। আজকেই প্রথম কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলাম। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই করা হয়েছে আশা করছি এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা আলুর উৎপাদন ব্যয় কোল্ডস্টোরেজে রাখাসহ সবকিছু হিসেব করে আলু দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে ঢাকায় যদি এ দাম হয় তাহলে চট্টগ্রামে এটা একটু বাড়তে পারে। সারা বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিয়েই ভোক্তা পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কোল্ড স্টোরেজ গেটে আলুর দাম হবে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি৷ এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আসরা আইনগতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কৃষি বিপনন আইন ২০১৮ সেখানে এ ক্ষমতা দেওয়া আছে।

এদিকে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের যৌক্তিক সর্বোচ্চ মূল্য প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা হওয়া উচিত। তবে স্থান ভেদে এক টাকা ব্যবধান হয় দূরত্ব অনুযায়ী। এটা কৃষি মন্ত্রণালয় সব কিছু বিচার বিবেচনা করেই আমাদের এটা বলেছে।

এখন থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর হবে কিনা? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, দাম তো কেবল মাত্র ঘোষণা হলো প্রচার হতে একটু সময় লাগবে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে এ দাম কার্যকর হবে। ভোক্তা অধিকার আজকে থেকে নামবে।

ডিম কি আজ থেকেই আমদানি করা হবে? জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি; আমাদের কাছে চারটি আবেদন পড়েছে। তবে আমরা আজ বা কাল থেকেই ডিম আনবো সে কথা বলতে চাই না। যেহেতু আমরা ১২ টাকা দাম নির্ধারণ করলাম, এখন আমরা দেখতে চাই এই দাম কার্যকর করে কিনা। যদি দেখা যায় এই দাম চলছে তাহলে আমরা আমদানি স্লো করবো। দাম না কমলেও কিছু ডিম আমদানি শুরু করে দেব। সেটা করতে তিন চার দিন সময় দরকার হবে।

সাধারণ সময়ের চেয়ে তিন পণ্যের দাম বেশি মনে হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আমরা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গত ৬ মাসের দাম বিবেচনায় নিয়েছি। তাই কৃষি ও মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে দাম বলেছে আমরা সেটাই করেছি৷ সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে৷ বর্তমানে বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা পিস সেটা ১২ টাকা করা হয়েছে। পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি সেখান থোকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা করেছি। আর আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে সেটা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা করেছি।

যদি অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তাহলে কি ব্যবস্থা নেবেন? উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আলু বর্তমানে কৃষকের ঘরে নেই। সব চলে গেছে কোল্ডস্টোরেজে। সেখানে ২৭ টাকা টাকার বেশি বিক্রি করতে দেব না। যদি তারা সে দামে বিক্রি না করে আটকে রাখে তাহলে আমাদের ক্ষমতা দিয়ে সেখান থেকে বের করে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হবে। প্রয়োজনে নিলাম করে দেব যাতে দাম ২৭ টাকা থাকে। পেঁয়াজ এরকম স্টোর করা সুযোগ নেই। কারণ, কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে পর্যালোচনা করে এই দাম নির্ধারণ করেছে। কাজেই এখানে কোনো সমস্যা হবে না।

বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, যদি দৈবদুর্বিপাক ঘটলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করছি না। সেটা জলে প্রচলিত যে আইন আছে সে অনুযায়ী ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা নেবে। মোট কথা আইনে যা যা আছে সেটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।