ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সমস্যায় জর্জরিত গাংনী উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
সমস্যায় জর্জরিত গাংনী উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি

মেহেরপুর: নানা সমস্যায় জর্জরিত মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি। কর্মচারীর ১৫ বছর বেতন বকেয়া, অবকাঠামো সংস্কার, আসবাবপত্র ও বই সংকটের কারণে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।

এর অবস্থা দেখে মনে হয় এর কোনো অভিভাবক নেই। তবে, উপজেলা চেয়ারম্যান লাইব্রেরি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান।

১৯৮৪ সালে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বরের একটি কক্ষে গাংনী উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। লাইব্রেরিটি পরিচালনার জন্য ১৯৮৭ সালে গোলাম রহমান নামের একজন চুক্তিভিত্তিক লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠার সময়ে পাঠকদের পদভারে মুখর থাকলেও বই সংকট সহ নানা সমস্যায় দিনদিন পাঠক সংখ্যা কমতে থাকে।

এদিকে, গত ১৪ বছর বেতন ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন লাইব্রেরিয়ান গোলাম রহমান।

লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নতুন বই সংযোজন নেই, রয়েছে চেয়ার, টেবিল ও আলমারির সংকট। গত কয়েক বছর লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় মূল্যবান কিছু বইসহ আসবাবপত্র অনেকটাই নষ্ট হয়ে পড়েছে।

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বড়রাও অবসর সময়ে বই ও পত্রিকা পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে আসলেও বছরের পর বছর বন্ধ থাকার কারণে জ্ঞান চার্চা থেকে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। অবকাঠামোগত সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।

সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র সজল আহমেদ বলেন, লাইব্রেরিটি সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। যে কারণে বই পুস্তক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে অনেক শিক্ষার্থীরা বই পড়তে এসে ফিরে যায়।

পাঠক আলাউদ্দীন আহম্মেদ, রজব আলী বলেন, যখনই লাইব্রেরিতে আসি তখনই বন্ধ পাওয়া যায়। খোলা থাকলে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম। লাইব্রেরির অবস্থা দেখে মনে হয় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রকিব বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি মানুষের জ্ঞানার্জনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জায়গা। এখানে তরুণ বয়সের ছেলে-মেয়েরা বই, পত্রিকা পড়তে আসবে তবেই তারা মেধাবী হয়ে গড়ে উঠবে। উপজেলার মত একটা জায়গায় লাইব্রেরি রয়েছে। অথচ, দীর্ঘদিন যাবত এটি বন্ধ থাকে। আমাদের ছেলে মেয়েরা জ্ঞানার্জনের জন্য যাবে কোথায়। এজন্য আমরা আমাদের মেধাবী ছেলে মেয়েদের হারাচ্ছি।  

তিনি আরও বলেন, বই পড়ার সুযোগ না পেয়ে তারা মাদকে ঝুঁকছে। আমি নিজেও বই পত্রিকা পড়ার জন্য আসতাম। কিন্তু বছরের পর বছর লাইব্রেরিটা বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অবসর সময়ে বই পড়তাম।

নুরুল ইসলাম রিন্টু বলেন, আমি এক সময় গাংনী উপজেলা পরিষদের এই লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক ছিলাম। এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। লাইব্রেরিটি চালু হওয়া উচিত।

লাইব্রেরিয়ান গোলাম রহমান বলেন, ১৪ বছর বিনা বেতন দায়িত্ব পালন করেছি। এখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংসার পরিজন নিয়ে অনেক দেনায় পড়ে রয়েছি। লাইব্রেরিতে এক সময় জাতীয় ও স্থানীয় ৪/৫টি পত্রিকা আসতো। পর্যাপ্ত পরিমাণ বই ছিল। প্রতিদিন প্রচুর পরিমার পাঠক আসতো এখানে। অথচ, সেই জমজমাট লাইব্রেরিটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমার ও লাইব্রেরির খোঁজ খবর রাখার মত কেউ নেই।

গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, করোনার কারণে প্রায় তিন বছর বন্ধ ছিল লাইব্রেরি। নতুন উদ্যোমে লাইব্রেরিটি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে বসে সব ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।