ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছর

প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই

ঢাকা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে নেওয়া পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। গত দুই বছর ধরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও এখন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপের মুখে এই উদ্যোগ অনেকটাই থমকে পড়েছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথম দফায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী তালিকা যাচাই বাছাই করা হয়েছিল। রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা দেখতে গত ৫ মে ২০ জন রোহিঙ্গার একটি দলকে পাঠানোও হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপের মুখে এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সহজে সম্ভব হচ্ছে না।

জাতিসংঘের আপত্তি 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের পক্ষ থেকে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও জাতিসংঘ থেকে এর বিরোধিতা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হবে বলে এই পাইলট প্রকল্প স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের স্পেশাল র‍্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজ সরকারের এই উদ্যোগের বিষয়ে অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাংলাদেশ সরকার বাধ্য করছে।

আর এই উদ্যোগ একটি প্রতারণামূলক ও জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা বলেও অভিহিত করেন তিনি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই ও  স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন টম অ্যান্ড্রুজ। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে গৃহীত পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও চলছে। পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে জাতিসংঘে উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে সরকার।

পাইলট প্রকল্প নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প নিয়ে কারো বিরোধিতা করার কোনো কারণ দেখছি না। কেননা, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠানো হবে, তারা যদি সেখানে অস্বস্তি বোধ করে, আবার ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে।

রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছর পূর্তিতে প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ৬ বছরে আমরা বুঝতে পেরেছি, প্রত্যাবাসন সহজ হবে না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা এজেন্ডা যেন শীর্ষ অগ্রাধিকার পায়, সে প্রচেষ্টাও আমাদের অব্যাহত আছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। সে ঘটনার আগেও বাংলাদেশে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল। এখন সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
টিআর/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।