ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ডেঙ্গু ভেবে ভুল চিকিৎসা, অবশেষে প্রাণ গেল শিশু আদিবের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
ডেঙ্গু ভেবে ভুল চিকিৎসা, অবশেষে প্রাণ গেল শিশু আদিবের

ফরিদপুর: ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ ছিল না, বরং শরীরে ছোপ ছোপ দাগের লক্ষণ দেখে একজন শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা দেন।

পরবর্তীতে ঢাকায় নিয়ে দেখা গেল, ডেঙ্গু হয়নি শিশুটির। বরং রক্তের প্লাটিলেট তৈরি হচ্ছে না।  

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া’। আর এই রোগ প্রকাশের মাত্র এক মাসের মধ্যেই মারা যায় শিশুটি।  

মঙ্গলবার (২ মে) দিবাগত রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

আদিব খান নামে চার বছরের শিশুটি ফরিদপুর শহরের রথখোলা মহল্লার বাসিন্দা তরুণ ট্রাভেলস ব্যবসায়ী কাইয়ুম খানের ছেলে। এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আদিব ছোট। আকশা খান নামে তার বড় বোনের বয়স পাঁচ বছর।

পারিবারিক সূত্র জানায়, রমজানের শুরুর দিকে আদিবের শরীরে ছোপ ছোপ দাগ দেখতে পেয়ে তার মায়ের মনে সন্দেহ হয়। এরপর ফরিদপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। তবে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না দেখে সামর্থ্যবান থাকায় অভিভাবকেরা শিশুটিকে গত ৪ এপ্রিল ঢাকায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বিবদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে বোনম্যারো টেস্ট করার পরে, আদিবের শরীরের রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসাবিদ্যা অনুযায়ী, রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার প্রধান কারণ দুটি। প্লাটিলেট ধ্বংস হয়ে যাওয়া, অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হওয়া। যখন রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে শুরু করে; তখন তাকে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া।  

উল্লেখ্য, প্লাটিলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্লাটিলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে অতিরিক্ত সময় নেয়। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা, রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমতে থাকে।  

তবে ফরিদপুরে এই রোগের চিকিৎসা তো দূরের কথা, পরীক্ষা-নিরীক্ষারও সুযোগ নেই। এ কারণে রক্তে প্লাটিনেট কমে যাওয়ার লক্ষণকে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ভেবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

ফরিদপুরের এক শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা এসব জটিলতায় সামর্থ্যবানদের উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকি।

আদিবের বাবা কাইয়ুম খান জানান, ঢাকায় নিয়ে তার সন্তানের বোনম্যারো টেস্ট করানোর পরে চিকিৎসকেরা জানতে পারেন যে, তার রক্তের প্লাটিলেট তৈরি হচ্ছে না। সন্তানের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। পাসপোর্টও রেডি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা আর সময় পেলাম না।

কাইয়ুম বলেন, ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতাল ছাড়াও আমরা ইবনে সিনা, এমনকি দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এভারকেয়ার ও স্কয়ার হসপিটালেও ছুটে গিয়েছি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছি। কিন্তু দেশে এখনো এই রোগের সুচিকিৎসার সঙ্কট রয়েছে।  

এদিকে, বুধবার (৩ মে) সকালে শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে শামসুল উলুম মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে শিশু আদিবকে দাফন করা হয়েছে। আদিবের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিচিতজনেরা তার মা-বাবাকে সহমর্মিতা জানাতে ছুটে আসেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।