ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা নেই ৫ মাস

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা নেই ৫ মাস ছবি: জয়পুরহাট চিনিকল

জয়পুরহাট: ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা ৫ মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে বার বার যোগাযোগ করেও অর্থ মিলছে না বলে জানায় মিল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বন্ধ মিল থেকে সচল মিলে বদলি হওয়া শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না কয়েক মাস। কবে পাবেন তারও কোনো সুষ্পষ্ট আশ্বাস মিলছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি বরাদ্দ পেলেই কেবল সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে শিল্পটিকে দাঁড় করাতে নেওয়া হয়েছে ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা।

কথা হয় শফিকুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি এই মিলে কাজ করেন। বেতন-ভাতা পান না ৫ মাস। এর আগে কাজ করতেন শ্যামপুর সুগার মিলে। সেটিসহ কার্যক্রম স্থগিত হওয়া ৬ চিনিকলের ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে বদলি করা হয় এখন পর্যন্ত সচল থাকা সরকারি অন্য ৯ সুগার মিলে।

শফিকুল জানান, শ্যামপুর চিনি কল থেকে গত বছরের জুলাই মাসে আমাকে জয়পুরহাটে বদলি করা হয়। এখন পর্যন্ত ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না।

শফিকুলের মতোই অবস্থা অন্য মিলের শ্রমিকদের। তারা জানান, কয়েক মাস বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। পরিবারের সদস্যরা দিন পার করছেন খেয়ে না খেয়ে।

শ্রমিকরা জানান, রমজান মাস যাচ্ছে আমরা খুব অসহনীয় অবস্থায় জীবন যাপন করছি। বাকি খেতে খেতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, দোকানদার আর বাকি দিতে চাচ্ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে কি করে খাবো, এখন শুধু চোখে অন্ধকার দেখছি।

মিল বন্ধ থাকায় অনেক অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী কাজ হারিয়ে এখন বেকার। বিপর্যয় নেমে এসেছে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও।

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব রুমেল জানান, কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদুল ফিতর। তাই শ্রমিক কর্মচারীদের পরিবার পরিজনদের মুখে হাসি ফোটাতে দ্রুত বেতন ভাতা পরিশোধে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আখলাছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে বার বার যোগাযোগ করেও টাকা মিলছে না। তবে ঈদের আগেই দু এক মাসের বেতন ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের বৃহত্তম জয়পুরহাট চিনিকলের গত মৌসুমের ৮ কোটি টাকার ৭৯৪ মেট্রিক টন চিনি এবং ৭ কোটি টাকার ২ হাজার ২২০ মেট্রিক টন চিটাগুড় এখনো অবিক্রিত রয়েছে। এ অবস্থায় চিনিকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিলসহ ৫ মাস ধরে বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, এই মুহূর্তে দুই-তিনটি মিলে বেতন নাই, আশা করছি এটা সামলে নিতে পারবো। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। তবে এরপরও নানা প্রতিবন্ধকতায় শিল্পটিকে দাঁড় করানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।  

তিনি আরও বলেন, সুগরি মিলের অবস্থা এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, ঘুরে দাঁড়ানোটাই আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এখন ওপেন মার্কেটিং ইকোনমি, এ অবস্থায় সরকার কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করতে রাজি নয়।

বছরে ২০ লাখ মেট্রিক টন আখ পেলে ৯টি মিল ১৩০ থেকে ১৪০ দিন চলবে। ধাপে ধাপে লোকসান কাটিয়ে ৫ বছরেই লাভজনক হবে দেশের চিনিশিল্প-এমন কথাও যোগ করেন তিনি।

জানা যায়, ২১৭ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা চিনিকলটি প্রথম আখ মাড়াই শুরু করে ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে। এখানে নিয়মিত ও মৌসুম ভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজার ১৩ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।